কুসঙ্গেই জঙ্গি হয়েছে ছেলে, ক্ষোভ বাবার

কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহের ঘনিষ্ঠ শাগরেদ নবানু বর্মণকে গত ২৯ মার্চ বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ডিসেম্বরে মালদহের হবিবপুরে যাত্রী ভর্তি বাসে গুলি চালানোয় নবানু অন্যতম অভিযুক্ত। মালদহের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানিয়েছেন, নবানু পালিয়ে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছিলেন। দু’সপ্তাহ আগে পুলিশ তা জানতে পারে। সেখানে গিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে তাঁকে মালদহে আনা হচ্ছে।

Advertisement

পীযূষ সাহা

বামনগোলা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০২:০০
Share:

কেএলও জঙ্গি মালখান সিংহের ঘনিষ্ঠ শাগরেদ নবানু বর্মণকে গত ২৯ মার্চ বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ডিসেম্বরে মালদহের হবিবপুরে যাত্রী ভর্তি বাসে গুলি চালানোয় নবানু অন্যতম অভিযুক্ত।

Advertisement

মালদহের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব জানিয়েছেন, নবানু পালিয়ে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছিলেন। দু’সপ্তাহ আগে পুলিশ তা জানতে পারে। সেখানে গিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে তাঁকে মালদহে আনা হচ্ছে।

এ কথা সোমবার বিকেলেও জানতেন না তাঁর বাবা বৃদ্ধ সুভাষ বর্মন। সাড়ে চারটে নাগাদ সালানপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল সুভাষবাবু বাড়িতে একাই রয়েছেন। বাড়িতে আর কেউ নেই। স্ত্রী পাতোদেবী অন্যের জমিতে শশা তুলতে গিয়েছেন। চোখের জল মুছে সুভাষবাবু বলতে থাকেন, “ও খারাপ ছিল না। রাজমিস্ত্রির কাজ করত। খারাপ সঙ্গে পড়ে জঙ্গি হয়ে হয়েছে। পাঁচ মাস বাড়ি আসে না। আগে মাঝে মধ্যে সংসার চালানোর জন্য কিছু টাকা পাঠাত। এখন আর পাঠায় না। ও অন্যায় করে থাকলে সাজা পাবে। আমরা গঞ্জনা সইতে পারি না।”

Advertisement

সালালপুর গ্রামে কেএলও জঙ্গি কুমুদ মণ্ডল ও নবানু বর্মনের বাড়ি। দু’জনেই মালখানের দুই হাত। কুমুদের মাত্র তিনটি বাড়ি পর নবানুর বাড়ি। হবিবপুরে বাসে গুলি চালানোর সময়ে এই দু’জনেই মালখানের সঙ্গে ছিল বলে অভিযোগ। এর পরই এই তিন জনকে ধরতে তিন জনের ছবি দিয়ে পোস্টার দিয়ে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। পুলিশের জালে ধরা পড়ে কুমুদ মন্ডল। এরপর রাজ্যে সরকার মালখান ও নবানুকে ধরতে মালদহে এক কোম্পানি আধাসামরিক মোতায়েন করে। এরপর প্রায়ই নবানুকে ধরতে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী রাত নেই দিন নেই গ্রামে ঢুকে হানা দিত। গ্রামের বাসিন্দারা যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন তা এদিন গ্রামে ঢুকেই টের পাওয়া গেল। নবানুর বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে বেশিরভাগ গ্রামবাসী কোনও উত্তর না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছিলেন।

গ্রামের শেষ প্রান্তে গিয়ে এক বৃদ্ধকে জিঙ্গাসা করতেই তিনি নবানুর বাড়িতে নিয়ে গেলেন। ওই বৃদ্ধের পরিচয় জানতেই তিনি বলেন, “আমার নাম পনু মন্ডল। ছেলের নাম কুমুদ মণ্ডল। কেএলও জঙ্গি। এখন ছেলে জেলে আছে।” এ কথা বলেই সেই বৃদ্ধ জমির দিকে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন। সুভাষবাবু ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “পনুর ছেলেই নবানুর মাথা খেয়েছে। ওকে মালখানের কাছে নিয়ে গিয়ে জঙ্গি করেছে।”

তিন ভাইয়ের মধ্যে নবানু মেজ। বড় ভাই মনোরঞ্জন ও ছোট ভাই বাবু দু’জনই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। নবানুর বাবা পাকুয়াহাটে একটি হোটেলের কাজ করেন। মা দিনমজুরের কাজ করেন। এক ছটাকও জমি নেই। সম্বল বলতে ওই একটা মাটির বাড়ি। বড় ও ছোট ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু নবানু বিয়ে করেননি।

শুধু গ্রামবাসীরাই নয়, ছেলে জঙ্গি বলে খুড়তুতো ভাইয়েরাও সুভাষবাবুদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে। একই ভিটায় বসত বাড়ি হয়েও নবানুর খুড়তুতো ভাই কমল বর্মণ বলেন, “আমাদের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক নেই। আমরা আলাদা থাকি। ওদের পরিবারের সঙ্গে কোন কথা বলি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন