কুড়ি মিনিটের ঝড়ে বিপর্যয়

ঝড়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। খুঁটি উপড়ে নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়ে বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, বংশীহারি, তপন, হরিরামপুর ও কুমারগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতি হয়েছে ফসলের।মাত্র ২০ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল দক্ষিণ দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ বৃষ্টি শুরুর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় প্রবল ঝড়। মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে, খুঁটি উপড়ে নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়ে বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, বংশীহারি, তপন, হরিরামপুর ও কুমারগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৪
Share:

বালুরঘাটের জলঘর এলাকায় উপড়ে গিয়েছে গাছ।

মাত্র ২০ মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল দক্ষিণ দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ বৃষ্টি শুরুর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় প্রবল ঝড়। মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে, খুঁটি উপড়ে নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়ে বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, বংশীহারি, তপন, হরিরামপুর ও কুমারগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। মাটির ঘরবাড়ি ভেঙে টিনের চাল উড়ে মুহূর্তের মধ্যে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়াতে বাধ্য হন শতাধিক বাসিন্দা। বালুরঘাটে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে এবং বংশীহারিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে দুই খেত মজুরের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন ৫ জন। তাঁদের বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন,“এলাকাগুলির ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখে বিডিওদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” জেলা কৃষি আধিকারিক উত্‌পল মন্ডল জানান,এ বছর ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। ঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গম চাষ। তা ছাড়া কয়েকটি এলাকায় সবজি চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ের পর থেকে শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত বিদ্যুতহীন হয়ে রয়েছে জেলা সদর বালুরঘাট সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। শহরের ওয়ার্ডগুলিতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে রয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিএসএনএলের টেলিফোন ও মোবাইল পরিষেবা।

Advertisement

এদিন বালুরঘাটের ভাটপাড়া গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছে কাঁচাবাড়ি। একের পর এক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে রয়েছে। অঞ্চল অফিসের পাশেই রাস্তার ধারে খেত মজুর রণজিত হেমব্রমের মাটির বাড়ি। বাড়ি ফেরার সময় জ্যাঠা টুডু (৩২) ঝড় থেকে রক্ষা পেতে আত্মীয় রণজিতবাবুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা জ্যোতিষ ঘোষ বলেন, “রণজিত্‌ ও তার স্ত্রী আশন্তিদেবী এবং জ্যাঠা, তিন জনই ঘরের মধ্যে কাঠের চৌকির নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে গোটা মাটির বাড়িটি ভেঙে পড়ে।” ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় জ্যাঠার। গুরুতর জখম রণজিত্‌ ও তাঁর স্ত্রী আশন্তি বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি।”

স্বামীর অকাল মৃত্যুতে জ্যাঠার গর্ভবতী স্ত্রী তালাময়দেবী ৬ ও ৪ বছরের দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে দিশাহারা। বালুরঘাটের বিডিও শুভ্রজিত গুপ্ত অসহায় ওই পরিবারটিকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তৃণমূলের ভাটপাড়া অঞ্চলের প্রধান লগিন দাস বলেন, “একশোর উপর কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। নিরাশ্রয়দের পলিথিন শিট ও চাল বিতরণের জন্য বিডিওর কাছে আবেদন করা হয়েছে। বালুরঘাটের জলঘর এবং তপন ব্লকের মালঞ্চা, গোফানগর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘরের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে।”

ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবথেকে বেশি বংশীহারি ব্লকের গাঙ্গুরিয়া ও ব্রজবল্লভপুর সহ কয়েকটি এলাকায়। বিডিও বনমালি রায় বলেন, “ঝড়ের সময় স্থানীয় কাশীপুকুর এলাকার বাসিন্দা কৃষি মজুর রবীন্দ্র বর্মন (৪০) জমি থেকে ধানের চারা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়লে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে তিনি মারা যান। ক্ষতির পরিমাণ দেখা হচ্ছে।”

প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ফাল্গুন মাসে এমন ঝড় গত দু-দশকের বছরের মধ্যে তাঁরা দেখেননি। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, নিম্নচাপ থেকেই ওই ঝড়ের উত্‌পত্তি। রাত সওয়া ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টি চলাকালীন মিনিট কুড়ি ঝড়ের দাপট বেশি ছিল। বালুরঘাট শহরের ১৮, ১৯, ২০, ২১ এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডেও ঝড়ের ঝাপটায় ভেঙে পড়েছে বহু গাছ। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যে পর্যন্ত শহরের দক্ষিণ অংশ নিষ্প্রদীপ হয়ে যায়। শহরের খিদিরপুর শ্মশানে প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো দুটি বটগাছ উপড়ে পড়ে। এলাকার দুটি বাড়িতে বটের ডাল ভেঙে পড়লে বাড়ির তিন সদস্য জখম হন। তাঁদের নাম বিশ্বজিত ঘোষ, বিজন ঘোষ এবং কবিতা সরকার। হাসপাতালে তাদের চিকিত্‌সা করাতে হয়। শহরের রবীন্দ্র নগর এলাকায় বাড়ি ভেঙে জখম হন বৃদ্ধা জ্যোত্‌স্না শীল।

বালুরঘাট পুরসভা এবং সিভিল ডিফেন্সের উদ্যোগে শুক্রবার সকাল থেকে গাছ ভেঙে বন্ধ রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় মোটরচালিত গাছ কাটা যন্ত্র নিয়ে গিয়ে গাছ কেটে রাস্তা পরিস্কার করা হয়। বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে প্রাথমিক সহায়তা করা হয়েছে। কাউন্সিলরেরাও ক্ষতি খতিয়ে দেখছেন।”

ছবি: অমিত মোহান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন