গুরুঙ্গদের আগাম জামিনের আর্জি খারিজ

ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে সামনে রেখে নানা মামলায় ‘ফেরার’ অভিযুক্তদের ধরতে দার্জিলিং পাহাড়ে অভিযানে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। সোমবার দার্জিলিং জেলা আদালতে একটি খুনের চেষ্টার মামলায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁর স্ত্রী আশাদেবীর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

Advertisement

কিশোর সাহা ও রেজা প্রধান

শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৪:২৪
Share:

বিমল গুরুঙ্গ ও আশা গুরুঙ্গ। —ফাইল চিত্র।

ভোট প্রক্রিয়া শুরু হতেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে সামনে রেখে নানা মামলায় ‘ফেরার’ অভিযুক্তদের ধরতে দার্জিলিং পাহাড়ে অভিযানে নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন। সোমবার দার্জিলিং জেলা আদালতে একটি খুনের চেষ্টার মামলায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁর স্ত্রী আশাদেবীর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। মোর্চা সূত্রের খবর, সরকারি আইনজীবীর বিরোধিতাতেই তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। বৃহস্পতিবারই কার্শিয়াঙের তিনধারিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিমল দোর্জিকে। মোর্চার অভিযোগ, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বদলে বিজেপিকে সমর্থন করাতেই রাজ্য সরকার ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত’ এই কাজ করেছে। তৃণমূল অবশ্য জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।

Advertisement

মোর্চার নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা, জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ায় মোর্চা সভাপতিকে যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার করা হতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, মোর্চা-তৃণমূল সম্পর্ক যখন ভাল ছিল, তখন সরকারি আইনজীবী ধৃত মোর্চা নেতাদের জামিনের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করেননি। এখন সরকারি আইনজীবী কেন হঠাৎ সক্রিয় হলেন? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব অবশ্য এ প্রসঙ্গে বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। তা নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই।”

আদালত সূত্রের খবর, সরকারি আইনজীবী প্রণয় রাই এ দিন শুনানির সময়ে জানান, ওই মামলায় অভিযুক্তদের অনেকেই গ্রেফতার হয়ে জেলে থাকার পরে জামিন পেয়েছেন। আইনের চোখে সকলেই যে হেতু সমান, তাই অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। এর পরেই দার্জিলিঙের জেলা ও দায়রা জজ অনন্তকুমার ক্যাপ্রি জামিনের আর্জি নাকচ করেন। মোর্চার আইনজীবী শেষমণি গুরুঙ্গ বলেছেন, “ওই মামলার এফআইআরে নাম নেই এমন ৯ জনের নাম পরে চার্জশিটে সংযোজিত হয়েছে। আমরা বিষয়টি জেলা আদালতে উল্লেখ করেছি। এ বার কলকাতা হাইকোর্টে যাচ্ছি।”

Advertisement

মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাঙ্গের অভিযোগ, “আমরা যে দিন বিজেপি প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করলাম, সে দিন রাতেই আমাদের কার্শিয়াঙের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও নানা কায়দায় চাপ বাড়ানো হচ্ছে। এ সবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত করা হচ্ছে।” এর পরেই বিনয় জানান, তাঁরা পুলিশ-প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের ভূমিকার বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চাইবেন। বিনয়ের দাবি, “জিটিএ চুক্তিতে পুরনো সব মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি ভাবা হবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য ওই চুক্তিতে সই করেছে। সেই বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, যে মামলায় গুরুঙ্গ ও তাঁর স্ত্রীর জামিনের আর্জি খারিজ হয়েছে তা ২০১০ সালের ২১ মে দার্জিলিং থানায় দায়ের হয়। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের প্রয়াত সভাপতি মদন তামাঙ্গের দেহরক্ষী মহেশ ঠাকুরি ওই ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন। সে দিন মদন তামাঙ্গকে খুন করা হয়। ঠাকুরির অভিযোগ, সে দিন তিনি দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাঁকে বাধা দিয়ে প্রাণে মারার চেষ্টা হয়। ওই ঘটনায় ৩৬ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে ১৮ জন জেল হেফাজতে রয়েছেন। ৮ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। যাঁরা পুলিশের নথিতে ‘ফেরার’, তাঁদের মধ্যে গুরুঙ্গ ও তাঁর স্ত্রী ছাড়াও হরকাবাহাদুর ছেত্রী, রোশন গিরি, প্রাক্তন কর্নেল রমেশ আলে, নিকল তামাঙ্গ, দীনেশ সুব্বা ওরফে কালিয়ার মতো প্রথম সারির মোর্চা নেতাদের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রোশন গিরি-সহ দু’জন ইতিমধ্যেই আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। আদালত সূত্রের খবর, আগামী ১৯ মার্চ সেই আবেদনের শুনানি হবে।

ভোট প্রক্রিয়ার গোড়াতেই এ হেন চাপের মুখে রণকৌশল ঠিক করতে আজ, শনিবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বসছে মোর্চা। মোর্চার অন্দরের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে। দিন দু’য়েকের মধ্যে দার্জিলিঙের মোর্চা সমর্থিত বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার পাহাড়ে পৌঁছে যাওয়ার কথা।

বিজেপির প্রথম সারির ওই নেতার মাধ্যমেও কমিশনের হস্তক্ষেপ চাওয়ার কথা ভাবছেন মোর্চা নেতাদের অনেকে। কার্শিয়াং থেকে বিমল দোর্জিকে গ্রেফতার করা নিয়েও এলাকায় আলোড়ন পড়েছে। কারণ, এলাকায় ‘ডাকসাইটে নেতা’ হিসেবে পরিচিত ওই নেতা না থাকলে ভোট পর্বে মোর্চার কতটা কর্তৃত্ব থাকবে, তা নিয়ে দলে আলোচনা শুরু হয়েছে। মোর্চার প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই জানান, এত দিন মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙে যে সব সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, প্রায় সব ক’টিতেই মোর্চার এই সব ‘ফেরার’ নেতাদের দেখা গিয়েছে। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “বিমল দোর্জির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাঁকে ধরা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলার নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন