গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে বার্তা পার্থ, সুব্রতের

গোষ্ঠীকোন্দল এড়িয়ে একজোট থাকার পাশাপাশি কর্মীদের কাজে দলের বিড়ম্বনার আশঙ্কা এড়ানোর পরামর্শ দিলেন রাজ্য তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা। মঙ্গলবার কোচবিহারে দলের রাজনৈতিক কর্মী কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রায় এক সুরে ওই পরামর্শ দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৮
Share:

কোচবিহারে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

গোষ্ঠীকোন্দল এড়িয়ে একজোট থাকার পাশাপাশি কর্মীদের কাজে দলের বিড়ম্বনার আশঙ্কা এড়ানোর পরামর্শ দিলেন রাজ্য তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা। মঙ্গলবার কোচবিহারে দলের রাজনৈতিক কর্মী কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রায় এক সুরে ওই পরামর্শ দিয়েছেন। কনভেনশনে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঞ্চে উপস্থিত নেতাদের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, “এত নাম বললাম কিন্তু আলাদা হলে শক্তি নেই। একত্রিত হলেই শক্তি সবাই মিলে কাজ করুন একত্রিত থাকুন।” তৃণমূলকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ব্লকে ব্লকে বুথে বুথে বসতে হবে কুসার বিরুদ্ধে পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামতে হে।ব তবে এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষের অসুবিধে হয়।”

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে জেলা স্তরের নেতাদের নিয়ে তাঁরা বৈঠক করেন। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে জেলায় দলের কাজ পরিচালনার জন্য নতুন কোর কমিটি তৈরি করা হয়। ওই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে। কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় বনমত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে। কমিটিতে ভারসাম্য রাখতে যুযুধান সব পক্ষের নেতাদের রাখা হয়। সেখানে সাংসদ রেণুকা সিংহ, সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়া, বিধায়ক হিতেন বর্মন, অর্ঘ্য রায়প্রধান, জেলা সহ সভাপতি আবদুল জলিল আহমেদ ছাড়াও মিহির গোস্বামী, নিরঞ্জন দত্ত, অশোক মন্ডল, অসীম নন্দী, ভূষণ সিংহের নাম রয়েছে। ঢেলে সাজা হয়েছে ব্লক সভাপতিদের তালিকা।

দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নতুন নয়। জেলা থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত একাধিক গোষ্ঠী জেলায় সক্রিয় সম্প্রতি কলেজ নির্বাচন ঘিরেও টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ হয়। এদিন অবশ্য জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, প্রাক্তন বিধায়ক মিহির গোস্বামী, জেলা সহ সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ, বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান সহ যুযুধান সমস্ত শিবিরের নেতারা মঞ্চে হাজির ছিলেন। ছিলেন ছাত্র নেতারাও। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, সে কথা মাথায় রেখেই রাজ্য রাজনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একজোট হওয়ার বার্তা দেন পার্থবাবু ও সুব্রতবাবু।

Advertisement

সুব্রতবাবু বলেন, “বহু সংগ্রামের উপর নির্ভর করে সরকারে এসে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সরকারকে নয়নের মণির মতো সকলকে পাহারা দিতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মনে রাখতে হবে, কর্মীদের পরিশ্রমের ফলে এই জয় এসেছে।” পার্থ বাবু বলেছেন, “সাড়ে তিন বছরে সরকার যে সমস্ত উন্নয়ন মূলক কাজ করেছে, তার প্রচার না করে এখন কে কোন পদ পাবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে, এটা মানা যায় না। আমাদের সর্বক্ষণ মানুষের পাশে থাকতে হবে। মিটিং মিছিল করার অভ্যাস কমে গিয়েছে, সে অভ্যাস ফের চালু করতে হবে। যে কর্মীদের পরিশ্রমের ফলে ক্ষমতায় এসেছেন তাঁদের উপেক্ষা করলে যে দিন মুখ থুবড়ে পড়বেন তখন কেউ থাকবে না।” তিনি জানান, যাঁরা নানা পদে রয়েছেন তাঁরা দলটিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে ভাববেন না। সব কিছুর উপর দল নজর রাখছে। তিনি বলেন, “নানা সময় কলকাতায় বিভিন্ন অভিযোগ পৌঁছয়, তবে অভিযোগ পৌঁছনোর পরও কোন কাজ হচ্ছে না দেখে হতাশ হবেন না। অভিযোগের সারবত্তা থাকলে তা দেখা হয়।”

সেই সঙ্গে জেলায় রদবদলের সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে রাজ্য নেতাদের বক্তব্যে। দলীয় সূত্রের খবর, ১ জানুয়ারি থেকে দলের সদস্যপদ অভিযান শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রতিটি বুথ থেকে ১০ জন কর্মীর নাম, ঠিকানা পাঠাতে বলেছেন রাজ্য নেতৃত্ব। তৃণমূলের মহাসচিব জানান, ব্লক সভাপতিদের নাম দ্রুত ঘোষণা করা হবে। রদবদলের ওই আশঙ্কায় আপাতত সরগরম কোচবিহার।

এ দিকে, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মীয়মান ভবনে পঠন-পাঠন চালুর কথাও জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মী নিয়োগ নিয়ে ওঠা স্বজনপোষণের অভিযোগ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে নিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”

এ দিন, পার্থবাবু কোচবিহার ঘুঘুমারি এলাকায় নির্মীয়মান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভবন চত্বরও ঘুরে দেখেন। সে সময় কোচবিহারের নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জেলায় আইন কলেজ চালুর ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। রাজ্য জুড়ে বিজেপির উত্থানের কথা মাথায় রেখে তৃণমূল দলের সংগঠন ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি চাঙা করতে আসরে নেমেছে। গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার কোচবিহার জেলার দলীয় সংগঠনে শীর্ষ নেতাদের একাংশের বিরোধ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে জেলায় কর্মী খুনের অভিযোগও রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন