ছিটমহল নিয়ে বৈঠক

গণনার সময়ে বাড়িতে থাকার নির্দেশে ক্ষোভ

জনগণনার সময় প্রত্যেক ছিটমহলবাসীকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের লালমণিরহাট জেলার বুড়িমাড়িতে দুই দেশের প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও জনগণনা শুরু হওয়ার চার দিন আগে প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৭
Share:

জনগণনার সময় প্রত্যেক ছিটমহলবাসীকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের লালমণিরহাট জেলার বুড়িমাড়িতে দুই দেশের প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও জনগণনা শুরু হওয়ার চার দিন আগে প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।
তাদের দাবি, দুই দেশের ছিটমহলের অনেক বাসিন্দা কাজের জন্য বাইরে থাকেন। সেদিক চিন্তা করে আরও আগে ওই বিষয়ে ছিটমহলে প্রচার করা দরকার ছিল।
কমিটি অবশ্য বৃহস্পতিবার রাত থেকেই প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তের কথা ছিটমহলগুলিতে প্রচার করা শুরু করেছে। আগামী ৬ জুলাই থেকে যৌথ জনগণনার কাজ শুরু হবে ছিটমহলগুলিতে। ৫ জুলাই বাংলাদেশের জনগণনার কাজে নিযুক্ত দল ভারতে আসবেন। ভারতীয় দলও ওই দিন যাবেন বাংলাদেশে। প্রশাসন সূত্রের খবর, আইন অনুসারে ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাইরে থাকার কথা নয়। সেক্ষেত্রে আগাম বিষয়টি জানানোর কিছু নেই। এ ছাড়া দশ দিন ধরে জনগণনা চলবে। যদি কেউ বাইরে থাকেন তাহলেও ওই সময়ের মধ্যে খুব সহজেই বাড়ি ফিরতে পারবেন।

Advertisement

বুড়িমারির বৈঠকে উপস্থিত কোচবিহারের জেলাশাসক পি ঊল্গানাথন বলেন, “জনগণনার সময় বাসিন্দাদের ছবি নেওয়া হবে। দশ দিন ধরে ওই কাজ চলবে। ওই সময় কেউ না থাকলে পরবর্তীতে কিছু করণীয় থাকবে না।” তিনি জানান, বাংলাদেশ পাঁচ সদস্যের পঞ্চাশটি দল জনগণনার কাজ করবে। ভারতে পাঁচ সদস্যের পঁচিশটি দল কাজ করবে। এ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “দু’দেশের ছিটমহলের মানুষরা অত্যন্ত গরিব। তাঁদের অনেকেই পেটের টানে ভিনরাজ্য অথবা ভিনজেলায় থাকেন। আগাম খবর পেলে তাঁদের ফিরতে সুবিধে হত। যা হোক আমরা সবাইকে ওই সময়ে ছিটমহলে উপস্থিত থাকার জন্য খবর পাঠানোর কাজ শুরু করে দিয়েছি।” বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৭ জুলাই ফের বুড়িমারিতে একটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে দুই দেশের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে জমির বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

পাশাপাশি, বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলির দুষ্কৃতীদের তালিকা নিয়েও প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়। প্রশাসনের আধিকারিকরা মনে করছেন, দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে খোঁজখবর না রাখলে পরবর্তীতে তা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৫ জুন চ্যাংরাবান্ধায় দুই দেশের আধিকারিক পর্যায়ের প্রথম বৈঠক হয়। এদিকে, ছিটমহলগুলিতে জনগণনার সময় হেল্পলাইন নম্বর চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “২০১১ সালে ১১ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই প্রথম জনগণনা হয়েছিল। সে সময় আমরা সবরকমভাবে সাহায্য করেছিলাম। এবারেও ওই ভাবনা মাথায় রেখে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হচ্ছে। শুক্রবারের মধ্যে হেল্পলাইন নম্বর প্রশাসন এবং ছিটমহলের বাসিন্দাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।” এরই পাশাপাশি কাজের খোঁজে বাইরে থাকা ছিটমহলের বাসিন্দাদের পরিবারের অন্তত একজনকে জনগণনার সময় এলাকায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। এদিনের বৈঠকে কমিটির কর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় বাইরে থাকা বাসিন্দাদের ওই ব্যাপারে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১১ জনগণনার তালিকায় বাইরে থাকা বাসিন্দাদের নামের তালিকাও প্রকাশের দাবি করেছেন তাঁরা।

Advertisement

কমিটি সূত্রের খবর, ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাইরে যাতে কেউ ওই তালিকায় নাম ঢোকাতে না পারেন সে ব্যাপারেও কমিটির সদস্যদের সতর্ক নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ জন্য কমিটির উদ্যোগে বাড়ি ধরে ধরে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাতে ২০১১ সালের গণনার পরে কতজন মারা গিয়েছেন, কতজনের জন্ম হয়েছে, কতজনের বিয়ে হয়েছে সে সব তথ্য লিপিবদ্ধ করা হবে। গণনার দল ছিটমহলে ঢুকলে তাঁদের হাতে ওই তালিকা তুলে দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। দুই দেশের পনেরো জন করে প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে কোচবিহারের জেলাশাসক ছাড়াও পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের লালমনিরহাটের জেলাশাসক হবিবুর রহমান সহ চার জেলার জেলাশাসক এবং বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরাও এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন