গরম পড়তেই দিনহাটা পুরসভা এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শহরের ১৫টি ওয়ার্ডে নানা জায়গায় বাড়িতো বটেই, স্ট্যান্ড পোস্টেও প্রায় এক মাস ধরে ঠিকঠাক জল পড়ছে না বলে অভিযোগ। ফলে নিরুপায় বাসিন্দাদের অনেকেই পানীয় জল কিনে পান করতে বাধ্য হচ্ছেন। শহর জুড়ে জল সরবরাহের জন্য ছয়টি পাম্প হাউস রয়েছে। বিদ্যুতের ওঠা-নামার জেরে চারটিই অচল হয়ে পড়েছে। দুটি পাম্প হাউস থেকে কোনওমতে পানীয় জল তুলে সরবরাহ করা হচ্ছে। তার পরেও সমস্যা মেটাতে পারছে না পুরসভা। অভিযোগ, বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কর্তারা সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হচ্ছেন না। বাসিন্দাদেরও ক্ষোভ বাড়ছে। বামেদের দখলে থাকা পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
দিনহাটা পুরসভার ফরওয়ার্ড ব্লক চেয়ারম্যান চন্দন ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমাদের দিক থেকে কোনও খামতি নেই। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য প্রায় এক মাস ধরে জন্য শহরের চারটি পাম্প হাউস অকেজো হয়ে পড়েছে। ওই সব পাম্পের মাধ্যমে পানীয় জল তুলে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। স্টেবিলাইজার লাগিয়ে দু’টি পাম্প দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে বলে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।”
দিনহাটা পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, শহরের ১৫ টি ওয়ার্ডে পানীয় জল সরবরাহের জন্য মোট ছয়টি পাম্প হাউস রয়েছে তার মধ্যে মহরম মাঠ, এসডিও বাংলো, গোধূলি বাজার ও পিএইচই দফতর লাগোয়া এলাকার চারটি পাম্পই অকেজো হয়ে রয়েছে। গোপাল মন্দির ও ফুলদিঘির পাড় এলাকার দুটি পাম্প হাউসে অস্থায়ী ভাবে স্টেবিলাইজার লাগিয়ে গোটা শহরকে দুটি জোনে ভাগ করে জল সরবরাহ করা হচ্ছে, এতে চাহিদা মত পানীয় জল সরবরাহে বিঘ্ন তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ। সংযোগ থাকা ১২০০’র বেশি বাসিন্দার বাড়িতে জলের চাপ কম থাকছে, রাস্তার প্রায় ৫০টি স্ট্যান্ডপোস্টেও কখনও অত্যন্ত সরু ভাবে কখনো আবার টিপটিপ করে জল পড়ছে। লোাডশেডিং থাকলে ওই জল সরবরাহও অনিশ্চিত।
দিনহাটার ফব বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বেহাল পরিষেবার জন্যই পানীয় জল নিয়ে বাসিন্দাদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। লো-ভোল্টেজ সমস্যা মেটাতে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় অন্যত্র সরবরাহের চাপ কমিয়ে পাম্প হাউস গুলি চালানোর ব্যবস্থা করার বিষয়ে সংস্থাকে প্রস্তাব দেওয়া হবে।” বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কোচবিহারের বিভাগীয় ম্যানেজার বিষ্ণু দত্ত বলেন, “বোরো চাষের মরসুম, টানা অনাবৃষ্টি ও গরম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। ফলে সমস্যা হচ্ছে। দিনহাটা পুর এলাকায় জলের পাম্প হাউসগুলি সচল করা নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রত্যেক বছর গরম পড়তেই দিনহাটায় বিদ্যুৎ ওঠা-নামা বা বোরো মরসুমের বাড়তি বিদ্যুৎ চাহিদাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। এবারেও গোপালনগর, থানা পাড়া, গোধূলি বাজার, রংপুর রোড, বলরামপুর রোড থেকে স্টেশন রোড, ঝুড়ি পাড়া শহরের প্রায় সর্বত্র জলের জন্য বাসিন্দাদের নাকাল হতে হচ্ছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পুরসভা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি কারও হেলদোল নেই। জেনারেটর, ৬টি পাম্পে স্টেবিলাইজার লাগানোর ব্যবস্থার ব্যাপারে পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি কেন সে প্রশ্ন উঠেছে। নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “পুরসভাকে সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে।”