অবাধে তোলাবাজি: ২

চোখ বুজে পুলিশ, চুপ বাসিন্দারাও

ছোট ট্রাক হলে পাঁচশো টাকা, বড় ট্রাকে হাজার টাকা দিতেই হবে। দাবি মতো এই টাকা না দিলে অঘোষিত সীমারেখা পার হয়ে কোনও ট্রাক চালকের সাধ্য নেই যে, এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকার রেলগেট এলাকায় একদল দুষ্কৃতী এই ভাবেই তোলাবাজি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

সংগ্রাম সিংহ রায়

মালদহ শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৮
Share:

ছোট ট্রাক হলে পাঁচশো টাকা, বড় ট্রাকে হাজার টাকা দিতেই হবে। দাবি মতো এই টাকা না দিলে অঘোষিত সীমারেখা পার হয়ে কোনও ট্রাক চালকের সাধ্য নেই যে, এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকার রেলগেট এলাকায় একদল দুষ্কৃতী এই ভাবেই তোলাবাজি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ জানাবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁদের দৌরাত্ম্যে বিরক্ত মালদহের তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনও। অভিযোগ সত্যি বলে দাবি করেছেন এলাকার বিধায়ক ভূপেন হালদার। তিনিও বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে দরবার করবেন বলে জানান। তবে এমন কোনও অভিযোগের কথা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মঙ্গলবাড়ি থানার পুলিশও।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের সক্রিয় মদতেই এই তোলাবাজি চলছে। বহুবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও মঙ্গলবাড়ি থানা থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় থানায় তোলাবাজির বিষয়টি সম্পর্কে একাধিকবার জানানো হলেও লিখিত অভিযোগ কখনওই নেওয়া হয় না। রেলগেট এলাকার এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ‘‘অনেক সময় এলাকায় মঙ্গলবাড়ি থানার পুলিশকর্মীদেরও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁরা এ সব দেখেও দেখেন না।’’ অন্য এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘এই কাজে মঙ্গলবাড়ি এলাকারই চার-পাঁচ জন ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। তাঁরা নিয়মিত থানায় গিয়ে তোলার একটা অংশ জমাও দিয়ে আসে।’’

যদিও এমন কোনও তোলাবাজি এলাকায় চলছে বলে জানেন না বলে দাবি করেছেন মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘প্রমাণ সহ কেউ এমন অভিযোগ করলে আমরা নিশ্চয় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’’ তবে কোনও অভিযোগ পাননি বলে দাবি করেছেন তিনি। এমন অভিযোগ জানা নেই বলে জানিয়েছেন মঙ্গলবাড়ি থানার আইসি শান্তনু মৈত্রও। তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ প্রথম শুনছি। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ তবে অভিযোগ না নেওয়ার নালিশ ঠিক নয় বলে তাঁরা জানান।

Advertisement

আইসির বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করেন এলাকার বিধায়ক কংগ্রেসের ভূপেন হালদার। তিনিও পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ সব জানে। তাদের মদতেই এই তোলাবাজি দীর্ঘ দিন চলছে। এ নিয়ে আগেও অনেক অভিযোগ করেছি। ফের প্রশাসনের দ্বারস্থ হব।’’ শুধু তোলাবাজি নয়, বিধায়কের দাবি, ট্রাকগুলোতেও অনেক সময় অতিরিক্ত ভার নিয়েও যায়। অভিযোগ, তাতেও পুলিশ সরকারি ভাবে হস্তক্ষেপ না করে ওই তোলাবাজদের দিয়ে মোটা টাকা আদায় করাচ্ছে। তাতে ওই কর্মীদের বেশি লাভ হয়। এই দুষ্কৃতীরা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘এলাকায় তোলাবাজি হচ্ছে বলে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। এসপি-র সঙ্গে কথা বলব।’’ তিনি জানান, দুষ্কৃতীরা যে দলের হোক তাদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।

জানা গিয়েছে, মঙ্গলবাড়ি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা। ফলে ট্রাকের গতি সেখানে এমনিতেই কমাতে হয়। সেই সুযোগ নেয় ওই দুষ্কৃতীরা। এলাকায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না শাসক দলের মদত থাকায় বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন