জমিতে যাওয়ার সময় রাস্তা আটকে গলা কেটে কুপিয়ে খুন করা হল এক তৃণমূল কর্মীকে। শনিবার ভোরে মালদহের চাঁচলের গোয়ালপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। ওই ব্যক্তির গলার নলি ও হাত-পায়ের শিরা কেটে সারা শরীর ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম মহম্মদ দুলাল(৩৫)। এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির এক কংগ্রেস সদস্যার ভাসুরের নেতৃত্বে কংগ্রেস কর্মীরা তাঁকে খুন করেছে বলে নিহতের পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, কংগ্রেস কর্মীদের ও বাসিন্দাদের ফাঁসাতে খুনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
চাঁচলের এসডিপিও পিনাকীরঞ্জন দাস বলেন, “অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। নিহতের নামে পুলিশে অপরাধমূলক কাজকর্মের কোনও অভিযোগ নেই। তিনি যে দলের হোন না কেন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে চাঁচল-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রশান্ত দাসের দাবি, দুলাল তাঁদের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করা-সহ কর্তৃত্ব কায়েম করতেই তাকে কংগ্রেসিরা খুন করেছে।
এ দিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ দু’জন সঙ্গীর সঙ্গে নিজের ধানখেতে যাচ্ছিলেন দুলাল। ওই সময় মাঠে জমির আলে তাকে আটকায় অভিযুক্তেরা। ভয়ে দুলালের সঙ্গীরা পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন মাঠে দুলালের গলাকাটা ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে পান। গোয়ালপাড়া-বাহারাবাদে এলাকা দখলের লড়াইকে ঘিরে জুনিয়র ওরফে রুহুল আমিন ও কুবেদ আলি গোষ্ঠীর বিবাদ এক দশকেরও বেশি পুরনো।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে খুন হন জুনিয়রের কাকা গফুর আলি (৫৫)। তারপর লোকসভা ভোটের পর খুন হন চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য সামিয়া বিবির স্বামী তথা জুনিয়রের ভাই ফিরোজ আলি (৩২)। দু’টি ঘটনাতেই অভিযুক্ত কুবেদ আলি ও তার দলবল। তার পর এ দিনের ঘটনা ঘটল। নিহত দুলাল সম্পর্কে কুবেদ আলির ভাইপো। দু’টি খুনের বদলা নিতে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতী জুনিয়রকে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেসিরা দুলালকে খুন করে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। চাঁচল-২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি হবিবুর রহমানের অভিযোগ, “তৃণমূল পাগল হয়ে গিয়েছে। তাই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এরকম মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।”
নিহতের পরিবার ও তৃণমূলের তরফে পুলিশে দায়ের করা অভিযুক্তদের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে আব্দুল হালিমের নাম। তিনি চাঁচল-২ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস সদস্যা নাজিমা বিবির ভাসুর ও কংগ্রেস কর্মী। অভিযুক্তদের তালিকায় ২০ জনের মধ্যে ১৯ নম্বরে রয়েছে রুহুল আমিনের নাম। সদস্যা নাজিমা বিবি বলেন, “ওদের নিজের দলের লোকেরা দুলালকে মেরে একই সঙ্গে কংগ্রেসিদের পাশাপাশি জুনিয়র-সহ গ্রামবাসীদের ফাঁসাচ্ছে।”