চার্জশিটে অশোকের নামোল্লেখে শোরগোল

শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) বহু কোটি টাকা দুর্নীতির মামলার চার্জশিটে একজন অভিযুক্তের বাড়ির ঠিকানা কোথায় তা বোঝাতে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি শিলিগুড়ি আদালতে সিআইডি ৪০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেছে। সেই চার্জশিটের ১৬ নম্বর ও ৩৯ নম্বরে এক জন অভিযুক্ত ঠিকাদার সঞ্জীব ঘোষের বাড়ির ঠিকানা কোথায় তা বোঝাতে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার উল্লেখ করেছেন, অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৩
Share:

এই ভাবে নাম উল্লেখেই বেধেছে বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) বহু কোটি টাকা দুর্নীতির মামলার চার্জশিটে একজন অভিযুক্তের বাড়ির ঠিকানা কোথায় তা বোঝাতে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি শিলিগুড়ি আদালতে সিআইডি ৪০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেছে। সেই চার্জশিটের ১৬ নম্বর ও ৩৯ নম্বরে এক জন অভিযুক্ত ঠিকাদার সঞ্জীব ঘোষের বাড়ির ঠিকানা কোথায় তা বোঝাতে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার উল্লেখ করেছেন, অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে লেখা হয়েছে সঞ্জীববাবুর বাড়ি হল অশোক ভট্টাচার্যের বাড়ির পাশে। দুর্নীতি মামলার চার্জশিটে যে কারণেই হোক না কেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী নাম উল্লেখ করায় নানা মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
পুলিশ ও সিআইডি-র পদস্থ অফিসারদের অনেকেই বিষয়টি শুনে বিস্মিত। তাঁদের অনেকেই জানান, চার্জশিটে অভিযুক্তের ঠিকানা বোঝানোর জন্য এ ভাবে কোনও বিশিষ্ট জনের নাম উল্লেখ করার ঘটনা অতীতে শোনা যায়নি। সিপিএমের অভিযোগ, তদন্তের নামে সিআইডিকে দিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে তা চার্জশিটে সুকৌশলে অশোকবাবুর নাম উল্লেখ করার মধ্যে দিয়ে ফের স্পষ্ট হল। ওই মামলার চার্জশিট দিয়েছেন সিআইডির ডিএসপি গৌতম ঘোষাল। তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কোনও অভিযুক্তের বাড়ি চেনাতে চার্জশিটে এমন নামোল্লেখের কথা কখনও শুনিনি। ওই মামলায় তো এমন অনেকের নাম জড়িত, যাঁরা শিলিগুড়ির মন্ত্রীর বাড়ির আশপাশে, কাছেপিঠে থাকেন। তা হলে তো ওই অভিযুক্তদের বাড়ি চেনানোর জন্য মন্ত্রীর নামও উল্লেখ করতে হতো।’’
এর পরেই অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘মামলার তদন্ত করানোর নামে সিআইডিকে সামনে রেখে নামে রাজনীতি হচ্ছে। না হলে এমন হয় নাকি? সে জন্যই তো গোড়া থেকে এসজেডিএ দুর্নীতির সিবিআই তদন্ত চাইছি।’’
ঘটনা হল, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান থাকাকালীন প্রায় ২০০ কোটি টাকার তহবিল গড়েছিলেন। তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে সেই জমা টাকার অনেকটাই নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগ সামনে আসার পরে তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে বসানো হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় এফআইআর করা হয়। মামলার তদন্তে নেমে এসজেডিএ-র তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণকুমারকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে সরানো হয়।

Advertisement

এর পরে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। একদিকে কংগ্রেসের কাউন্সিলর সুজয় ঘটক ও সিপিএমের তরফে দ্বিতীয় মামলা হয়। ইতিমধ্যে তদন্তভার পায় সিআইডি। কলকাতা হাইকোর্ট সিআইডির কাছে মামলার অগ্রগতির ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করে। সম্প্রতি গোদালা কিরণকুমারকে ফের সিআইডি গ্রেফতার করে চার্জশিট পেশ করেছে।

সেই চার্জশিটে কেন অশোকবাবুর নাম উল্লেখ করা হল? সিআইডি সূত্রের খবর, অভিযুক্ত সঞ্জীববাবুর বাড়ি সুভাষপল্লি এলাকায় কাছেপিঠেই থাকেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও এ ভাবে অপরাধ-মামলার চার্জশিটে প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করাটা একেবারেই ঠিক হয়নি বলে একাধিক প্রাক্তন পুলিশ কর্তা মনে করেন। তাঁরা জানান, তা হলে তো দিল্লি, কলকাতা, মুম্বইয়ের নানা অপরাধের চার্জশিটে বহু বিশিষ্ট জন, নেতা-মন্ত্রীর নামের উল্লেখ করে ঠিকানা চেনানো হতো। তবে সিআইডি-র একটি সূত্রের খবর, আদালতে আবেদন করে বিষয়টি সংশোধন করা হতে পারে। এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব কেবল বলেন, ‘‘চার্জশিটে কী আছে তা আমার জানা নেই। কাজেই এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন