ন্যূনতম মজুরির দাবিতে থালা বাটি হাতে ‘ভুখা মিছিলে’ হাঁটলেন চা শ্রমিকেরা। ২৪টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে সোমবার সকাল থেকে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন চা বাগানে ওই মিছিল হয়। একই দাবিতে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে পদযাত্রা। সংকোশ থেকে তরাই পর্যন্ত ওই পদযাত্রা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে বলেন, “ন্যূনতম মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা টানা এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের টনক নড়ছে না। এ দিন শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হাতা খুন্তি নিয়ে ভুখা মিছিল করেছেন। এর পরেও সরকার চুপ থাকলে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পদযাত্রা হবে সংকোশ থেকে তরাই পর্যন্ত।” তিনি জানান, একজন চা শ্রমিকের দিনে ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৩২৪ টাকা। কিন্তু তরাই ও ডুয়ার্সের চা শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৯৫ টাকা। এটা হবে কেন? ডুয়ার্স চা বাগান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি তথা আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাস বলেন, “চা শ্রমিকদের দিনে ৩২৪ টাকা মজুরির দাবি কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের মনগড়া হিসেব নয়, এটা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের (আইএলও) হিসেব কেন রাজ্য সরকার মানবে না?” এ দিন বাগানগুলিতে মিছিল দেখে নির্মলবাবুর দাবি, ১৯৫৫ সালের পরে এত স্বতঃস্ফূর্ত শ্রমিকদের মিছিল চা বাগান দেখেনি। প্রত্যেকে নিজেদের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে দাবির কথা তুলে ধরেছেন।
এ দিন সকাল ৯টার পর থেকে জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন করলা ভ্যালি বাগানে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক মিছিল বের করেন। প্রত্যেকের হাতে ছিল থালা, বাটি, হাতা, খুন্তি। তাঁদের দাবি, শুধু ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করে লাভ হবে না। কত দিনের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি চালু হবে, সময় বেঁধে দিতে হবে। করলাভ্যালি বাগানের আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নিয়ন্ত্রিত চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজু সাহানি বলেন, “ন্যূনতম মজুরির দাবিতে অনশন, ধর্না, বন্ধ হয়েছে। রাজ্য সরকার যদি ভেবে থাকেন, শ্রমিকরা হাল ছেড়ে দেবে ভুল করবেন। দাবি না মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। যৌথ সংগ্রাম কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শ্রমিকদের পদযাত্রার প্রস্তুতির কথা জেনে রাজ্য সরকারের তরফে মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে উত্তরকন্যায় ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের চেষ্টা চলছে। সংগঠনের আহ্বায়ক চিত্তবাবু বলেন, “আমিও শুনেছি। তবে চিঠি পাইনি। বৈঠক হলে যাব। কিন্তু আশ্বাসের কথা শুনে ফিরে আসতে চাই না। সময় বেঁধে দিয়ে ন্যূনতম মজুরি চালুর দাবি জানাব।”