চড় মেরেছেন মন্ত্রী, অভিযোগ বিক্ষোভকারীর

এক বিক্ষোভকারীকে চড় মারার অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, “কারও গায়ে হাত দিইনি।” এর আগেও শিলিগুড়িতে দলের সভাতে এক ব্যক্তিকে চড়, ঘুষি মারার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। রবিবার শিলিগুড়ির জলপাই মোড়ে রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস করতে যান গৌতমবাবু। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মন্ত্রীর গাড়ি পৌঁছনোর পরে স্লোগান দিতে শুরু করেন কয়েকজন বিক্ষোভকারী। তাঁদের দাবি, বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হলে দূষণ ছড়াবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৭
Share:

অভিযোগকারী মহানন্দ মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র

এক বিক্ষোভকারীকে চড় মারার অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, “কারও গায়ে হাত দিইনি।” এর আগেও শিলিগুড়িতে দলের সভাতে এক ব্যক্তিকে চড়, ঘুষি মারার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

Advertisement

রবিবার শিলিগুড়ির জলপাই মোড়ে রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির শিলান্যাস করতে যান গৌতমবাবু। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মন্ত্রীর গাড়ি পৌঁছনোর পরে স্লোগান দিতে শুরু করেন কয়েকজন বিক্ষোভকারী। তাঁদের দাবি, বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হলে দূষণ ছড়াবে। মন্ত্রী তাঁদের কয়েকজনকে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠান। ফরওয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় বিদায়ী কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ সহ ৫ বাসিন্দা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় যান। মঞ্চের সামনে বিক্ষোভকারীদের একাংশকে উত্তেজিত ভাবে হাত নেড়ে বলতে শোনা যায়, “আগে থেকে আলোচনা করা হয়নি। কোনও ভাবেই বৈদ্যুতিক চুল্লি বসাতে দেওয়া হবে না।” সরকারি আধিকারিকদের কয়েকজনের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা নিজেদের দাবির কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রীর দিকে তেড়েও গিয়েছিলেন। মহানন্দ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, সেই সময়ে গৌতমবাবু তাঁকে চড় মারেন। তার পরে মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পাল এবং অন্যরাও মহানন্দবাবুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তিনি শিলিগুড়ি থানায় গৌতমবাবু এবং তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেছেন। এর আগেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অধীক্ষক বাস্তুকার তিমির বসু ওই এলাকার কিছু বাসিন্দার বিরুদ্ধে সরকারি কাজের বাধাদানের অভিযোগ দায়ের করেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহনের কথায়, “সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন মেনেই পদক্ষেপ হবে।”

রবিবার সকালে মন্ত্রী রামঘাটে পৌঁছনোর আগে থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন কালো পতাকা, পোস্টার হাতে শ্মশানের বাইরে জড়ো হতে শুরু করেন। ঝাড়ু হাতে কয়েকজন মহিলাকে চিত্‌কার করতেও দেখা যায়। কয়েকটি পোস্টারে ‘দূর হটো’, ‘আমাদেরও মানুষ বলে মনে করো’ লেখা দেখা গিয়েছে। বিক্ষোভে ছিলেন এলাকার অমরনাথবাবুও।

Advertisement

শিলিগুড়ি হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন মহানন্দবাবুর অভিযোগ, “বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো হলে দূষণ ছড়াবে। বাতাসে ছাই উড়বে। এটা মন্ত্রীকে বলতে গিয়েছিলাম। মন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে আমাকে চড় মারেন। ওঁর সঙ্গীরা আমার জামা ছিঁড়ে দেন।” মহানন্দবাবু জানান, তিনি এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর অমরনাথবাবুর সঙ্গে আলোচনা করেই বিক্ষোভে সামিল হন। অমরনাথবাবুর দাবি, “অরাজনৈতিক বিক্ষোভে মন্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর শুরু করেন। তাই আইনের দ্বারস্থ হয়েছি।”

কৃষ্ণবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে সাজানো হয়েছিল। ওখানে গিয়ে ওই ব্যক্তি ‘আমরাই এলাকার শেষ কথা’ বলে হুমকি দেন।” তিনি জানান, গৌতমবাবু নিজেই বিক্ষোভকারীদের আলোচনার জন্য ডাকেন। তাঁর কথায়, “মন্ত্রীর উপরেই হামলা হয়েছে। প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর সহ অন্যরা এমনই মারমুখী হয়ে ওঠেন যে, ভয় পেয়ে মন্ত্রীকে সরিয়ে দিই।”

ঘটনার পরে অবশ্য শিলান্যাস অনুষ্ঠান হয়েছে। ১৯৬৫ সালে রামঘাট শ্মশান তৈরি হয় বলে পরিচালন সমিতি জানিয়েছেন। তবে এখানে শংসাপত্র ছাড়াই শবদাহ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েকবার। তার পরেই শনিবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে শ্মশান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন গৌতমবাবু। মন্ত্রীর দাবি, “সরকারি অনুষ্ঠান কেউ পণ্ড করে দিতে পারেন না। তা ছাড়া, বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দূষণ ছড়ানো নিয়ে রাজনৈতিক ভাবেই সকলকে ভুল বোঝানো হয়েছে।” ওই শ্মশানের পরিচালন সমিতির সদস্য ওম প্রকাশ অগ্রবাল বলেন, “দূষণের কোনও প্রশ্নই নেই। বৈদ্যুতিক চুল্লিতে ছাই ওড়ার কোনও কারণ নেই।”

মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চড় মারার অভিযোগ ওঠায় সমালোচনায় সরব বিরোধীরা। সিপিএমের জীবেশ সরকারের অভিযোগ, “বাসিন্দাদের সব সময় মন্ত্রীর সুরে কথা বলতে হবে? এটা হতে পারে না।” তাঁর কথায়, সরকারি কোনও কাজ নিয়ে মানুষের আপত্তি থাকতেই পারে। তা নিয়ে আলোচনা করবে সরকার। এখন তো মন্ত্রী আইন নিজের হাতে নিচ্ছেন বলে শুনছি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা রাজ্যপালের কাছে যাবেন।

গত ২১ জুন শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সভায় মাসিক পত্রিকা বিলির অভিযোগ এক পত্রিকার সম্পাদককে চড়, ঘুষি মারার অভিযোগ ওঠে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ওই ঘটনাটিকেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে গৌতমবাবু অভিযোগ করেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন