দুই বছরেরও বেশি সময় টাকার অভাবে আটকে রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ কলেজের নির্মীয়মাণ ছাত্রী-আবাস তৈরির কাজ। ২০০৯ সালের অগস্ট মাসে ইউজিসি কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্রী আবাস তৈরি করতে ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। প্রথম পর্যায়ের জন্য ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। ২০১০ সালের মার্চে ৮ কাঠা জমির উপর হস্টেল তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। কিন্তু এর পর ইউজিসি দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা বরাদ্দ না করায় গত দু’বছর ধরে হস্টেল তৈরির কাজ আটকে রয়েছে।
দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় ছাত্রী আবাসটি ক্রমে জীর্ণ হয়ে পড়ছে। দেখার কেউ না থাকায় সাতটি ঘরেই চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ। দুষ্কৃতীরা হস্টেলটির ছাদের একাধিক লোহার রড কেটে ও ভবনের ইঁট খুলে নিয়ে গিয়েছে। কলেজ সূত্রে খবর, ছাত্রী আবাসটি দোতলা হওয়ার কথা। নীচতলার ভবন, ছাদ ও সিড়ি তৈরির কাজ শেষ হলেও দরজা ও একাধিক জানালা নেই। সাতটি ঘরের দেওয়াল প্লাস্টার হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হস্টেলটির পরিত্যক্ত ভবনে দিনভর দুষ্কৃতীরা মদ ও জুয়ার আসর বসাচ্ছে। মোবাইলে গান চালিয়ে হইচই চলছে। কয়েক জন জানান, অসামাজিক কাজ দেখে তাঁরা আতঙ্কে চুপ করে থাকেন। অধ্যক্ষকে একাধিক বার বলা হয়েছে।
মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রবীর রায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্রথম পর্যায়ের কাজের পর ইউজিসি কর্তৃপক্ষের কাছে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পাঠানো হলেও দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ টাকা মেলেনি। সেই কারণে কাজ আটকে গিয়েছে। ইউজিসি দ্রুত টাকা দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই আপাতত হস্টেলে নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।”
মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরের কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে তিনটি বর্ষ মিলিয়ে সাড়ে ৪ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে ছাত্রী আড়াই হাজার। প্রায় এক হাজার ছাত্রী প্রতিদিন উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের ১২টি ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে কলেজে যাতায়াত করেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অজয় সরকার বলেন, “কর্তৃপক্ষ ইউজিসি-র সঙ্গে নিয়মিত ভাবে সমন্বয় রাখতে না পারার কারণেই দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ টাকা আটকেছে। এক মাসে কাজ শুরু না হলে ছাত্রীদের স্বার্থে আন্দোলন করব।” এসএফআই জেলা সম্পাদক প্রাণেশ সরকার বলেন, “বাইরের বহু ছাত্রীর প্রতিদিন যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। অধ্যক্ষের কাছে দ্রুত হস্টেল তৈরির কাজ শেষের দাবি জানাচ্ছি।” আর ছাত্র পরিষদের রায়গঞ্জ ব্লক ও শহর কমিটির আহ্বায়ক নব্যেন্দু ঘোষ জানান, “ছাত্রী আবাস তৈরির কাজ শেষ না হওয়ায় বাইরের এলাকার বাসিন্দা মহাবিদ্যালয়ের শতাধিক দুঃস্থ ছাত্রীকে ঘর ভাড়া নিয়ে রায়গঞ্জ শহরে থাকতে হচ্ছে। আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”