ছাত্র সংসদ ‘দখল’, ফের বিজয় মিছিল টিএমসিপির

বিজয় মিছিল আগেই হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘দখল’ করা বাকি ছিল। শুক্রবার নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ‘দখল’ করতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেই চেষ্টা সম্পন্ন হয়েছে বলে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি অভিযোগ তুলেছে। এ দিন নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে, সবুজ আবির উড়িয়ে দ্বিতীয়বার বিজয় মিছিল করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তাতে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫
Share:

উত্তরবঙ্গ বিস্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে জয়ের পর উল্লাস তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিজয় মিছিল আগেই হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘দখল’ করা বাকি ছিল। শুক্রবার নির্বাচনের পর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ‘দখল’ করতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেই চেষ্টা সম্পন্ন হয়েছে বলে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি অভিযোগ তুলেছে। এ দিন নির্বাচনের পর ক্যাম্পাসে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে, সবুজ আবির উড়িয়ে দ্বিতীয়বার বিজয় মিছিল করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। তাতে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ও।

Advertisement

ছাত্র সংসদের ৮৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র ১৩টি আসনে এ দিন নির্বাচন হয়। তার মধ্যে ৮ টি আসনে জিতেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ছাত্র পরিষদ এবং ইন্ডিপেন্ডেন্স স্টুডেন্ট কনসোলিডেশন বাকি ৪ টিতে জিতেছে বলে দাবি করে। তার আগে গত ২ জানুয়ারি তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাদের পড়ুয়াদের হুমকি দেওয়া, তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় অন্তত ২৫ টি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন ছাত্র পরিষদ এবং অন্যান্য বিরোধী সংগঠন এবং নিজেরা যারা প্রার্থী হয়েছিলেন এমন অনেকে। ছাত্র পরিষদের দাবি, তারাই ২২ টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। প্রার্থীদের তুলে নিয়ে আটকে রাখছিল তৃণমূলছাত্র পরিষদের লোকজন। পুলিশ শাসক দলের ছাত্র সংগঠনকে সাহায্য করছিল। হস্টেলে গিয়ে হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূলের ছাত্রনেতারা। গভীর রাতে হস্টেলের ছাত্ররা উপাচার্যের বাড়ির াসমনে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। এর পরেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় অধিকাংশ প্রার্থী নিরাপত্তার অভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ছাত্র সংসদ দখল করতে পারত না বলে দাবি করেছে ছাত্র পরিষদ, ইন্ডিপেন্ডেন্স স্টুডেন্ট কনসলিডেশন, এসএফআই-এর মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান কনককান্তি বাগচী বলেন, “এ দিন শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, ৫৬ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দন্দ্বিতায় জিতেছে প্রার্থীরা। ১৮ টি আসনে কোনও মনোনয়ন জমা হয়নি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি তারা ৪২ টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে।

Advertisement

এ দিন বেলা ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত নির্বাচন হয় ৯ টি বিভাগে ১৩ টি আসনে। ঘন্টাখানেক পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের ফল পরিষ্কার হয়। এর পরেই ক্যাম্পাসে ব্যান্ডপার্টি নিয়ে, সবুজ আবির উড়িয়ে মিছিল করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এ বারই প্রথম তারা দখল করল। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রোনাল্ড দে, মুক্তি নাথ শর্মারা জানান, অগণতান্ত্রিক ভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ছাত্র সংসদ দখল করল। রোনাল্ড বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একাংশের ভূমিকা শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের পক্ষে ছিল। প্রার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি। নিখোঁজ ছাত্রদের উদ্ধার করতে তৎপর হয়নি কর্তৃপক্ষ।” বিরোধীদের ওই বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়। তিনি বলেন, “কারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে সেটা তাদের নিজেদের ব্যাপার। আমরা কাউকে ভয় দেখাইনি। কাউকে তুলে নেইনি। ছাত্র পরিষদই ওই সব ঘটনা ঘটিয়ে ছক কষছিল। ছাত্ররা তাদের সঙ্গে নেই তা স্পষ্ট হল।”

এ দিন নির্বাচনের পরে বিজয় মিছিলে অবশ্য ভিড় ছিল না ছাত্রছাত্রীদের। জনা ২০ পড়ুয়াকে দেখা গিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ব্যানার নিয়ে ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে মিছিল করতে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা পঘ্কজ সিংহের দাবি, হস্টেলে ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই নেই। সামনে পরীক্ষা সে সমস্ত বিভাগে নির্বাচন ছিল না তাদের পড়ুয়ারা অধিকাংশই বাড়িতে চলে যায়। পরে শতাধিক পড়ুয়া মিছিলে সামিল হয়েছিল বলে তারা দাবি করেন।”

ইন্ডিপেন্ডেন্স স্টুডেন্ট কনসোলিডেশনের নেতা গুঞ্জন রানা এ দিন তাঁর আসনে ১ ভোটে হেরে যান। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে ছাত্রদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছিল। অবাধ নির্বাচন হলে ফল সে এটা হত না তা সকলেই বুঝতে পারছেন।” আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে কথা বলেছেন এসএফআই জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস। সৌরভ বলেন, “গায়ের জোরে ছাত্র সংসদ দখল করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশই ছিল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন