ছেলের কথা শুনলে ওকে হারাতাম না

শারীরিক কারণে ভোটের ‘ডিউটি’ করতে পারবেন না জানাতে বৃহস্পতিবার চাঁচল থেকে মালদহের জেলাশাসকের দফতরে এসেছিলেন সনাতন বর্মন।

Advertisement

পীযূষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

দুর্ঘটনায় আহতেরা। নিজস্ব চিত্র।

শারীরিক কারণে ভোটের ‘ডিউটি’ করতে পারবেন না জানাতে বৃহস্পতিবার চাঁচল থেকে মালদহের জেলাশাসকের দফতরে এসেছিলেন সনাতন বর্মন।

Advertisement

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রাজস্ব আধিকারিক সনাতনবাবু। বাড়ি থেকে আসার সময়ে এ বারে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ছেলে কৌশিক বায়না করায় তাকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। দুপুরে কাজ সারার পরে কৌশিক বায়না ধরেছিল ট্রেনে ফিরবে।

বাড়ি ফিরতে দেরি হবে বলে সে কথা অবশ্য শোনেনি সনাতনবাবু। বাসে ওঠার পরে প্রথমে নিজে সামনের সিটে বসেছিলেন। পরে ছেলেকে সামনে বসিয়ে নিজে পেছনে চলে যান। আর এই কথা ভেবেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ক্রমাগত কেঁদেই চলেছেন তিনি।

Advertisement

বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কৌশিকের। চোখের সামনে ছেলের নিথর দেহ দেখে সনাতনবাবুও সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। চাঁচলের ভগবানপুরে গ্রামের ৫০ বছরের সনাতনবাবুরও আঘাত লেগেছে। তাঁর মাথা ফেঁটে গিয়েছে। হাতে-পায়ে চোট লেগেছে। তাঁর আঘাতও গুরুতর বলে চিকিত্‌সকরা জানিয়েছেন। যদিও হাসপাতালের নিজের বাছানয় শুয়ে তাঁর আক্ষেপ, বায়না শুনে ছেলেকে সঙ্গে না আনলে এই ঘটনা হতো না, এবং ফেরার সময়ে বায়না শুনলে ট্রেন ধরলেও দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

এ দিন দুপুর ২টো ২০ মিনিটে চাঁচলের বাস ধরতে ছেলেকে নিয়ে অতুল মার্কেটে এসেছিসেন তিনি। রাতে হাসপাতালে শুয়েই সনাতনবাবু কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, “ছেলের কথা শুনে ট্রেনে ফিরলে আজকে ছেলেকে হারাতাম না। বাস ছাড়ার পর ছেলে পিছনের দিকে জায়গা পেয়েছিলাম। মঙ্গলবাড়ি পার হতেই সামনে নিজের জায়গা ছেলের জন্য ছেড়ে দিয়ে পিছনে সিটে চলে আসি। আমি সামনের সিটে থাকলে আমার মৃত্যু হতো। ছেলেটাতো বেঁচে যেতো। আমি আমার ছেলেকে মেরে ফেললাম।”

এ দিকে কৌশিকের মৃত্যুর খবর পৌঁছোতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে চাঁচলের ভগবানপুর গ্রামে। ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান গিনি মহলদার বলেন, “ওই পরিবারের পাশে গোটা গ্রামের মানুষ দাঁড়িয়েছেন।” এ দিকে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মেয়েকে নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল হাসপাতালে ছুটে এসেছেন কল্যাণীদেবী। তাঁর কথায়, “ছেলেকে বারবার মালদহ যেতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু ছেলেটা কোনও কথাই শুনল না। আমার কথা শুনলে আজকে এভাবে ছেলেকে হারাতাম না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন