জেলা ভাগ হয়েছে। তবে এখনও গঠিত হয়নি নতুন জেলা পরিষদ। এই পরিস্থিতিতে ১০০ দিনের কাজ-সহ একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ ঘিরে দুশ্চিন্তায় আলিপুরদুয়ার জেলার সদস্যরা।
আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা আরএসপি দলের সহ-সভাধিপতি জসিন্তা লাকড়া কী ভাবে কী হবে তা জানতে ফোনের পর ফোন করে চলেছেন। আলিপুরদুয়ার থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি জসিন্তার আশঙ্কা, “নতুন জেলায় সহ সভাধিপতি হিসাবে মানা হবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”
দুই জেলার প্রশাসনিক অফিসারদেরও অস্বস্তিও কম নয়। জেলা পরিষদ সংক্রান্ত প্রশ্ন শুনলে অনেকে ‘এখনই কিছু বলতে পারছি না’ বলে উত্তর দিচ্ছেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকারও নতুন কাজকর্মের বিষয়ে স্পষ্ট কোনও কিছু জানাতে পারেননি। জেলা পরিষদের এগজিকিউটিভ অফিসার তিনি। পৃথাদেবীর কথায়, “বরাদ্দ পুরানো কাজ যেমনভাবে চলছে, সে ভাবেই চলবে। জেলা পরিষদ নিয়ে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত না আসেনি। আমি এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।”
সেতু, রাস্তা, বাঁধ নির্মাণ-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজকর্মের জেলা পরিষদের মাধ্যমে একশো দিনের কাজকর্ম নির্ধারিত হয়। এক বছর আগে জলপাইগুড়ি পঞ্চায়েত নির্বাচনে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের মোট ৩৭টি আসনের মধ্যে বামেরা ২৭টি আসনে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদটি দখল নেয়। জেলা পরিষদের নতুন বোর্ডে বিরোধী দলনেতা ঠিক না হওয়ায় কয়েক মাস কাজ থমকে ছিল। পরে লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর টানা তিন মাস কোনও পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। সম্প্রতি বার্ষিক উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়, সে অনুযায়ী আপাতত কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জলপাইগুড়ির সভাধিপতি নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, “আলিপুরদুয়ার জেলার জন্য কেন আলাদা জেলা পরিষদ তৈরি করা হল না তা বুঝতে পারছি না। জেলা ভাগ হওয়ার পর টাকা কী ভাবে বরাদ্দ হবে দুই জেলা কারা দেখবে তা এখনও আমাকে জানানো হয়নি।” কালচিনি এলাকার কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য মোহন শর্মার আশঙ্কা, “এখন জলপাইগুড়ি গিয়ে কাজ চাইলে যদি আমাদের বার করে দেওয়া হয়, সে চিন্তায় রয়েছি। এখন তো তাঁরা আমাদের জেলার কাজকর্ম করবে না। আপাতত সমস্ত উন্নয়ন থমকে যাবে।”
গত ২৫ জুন আলিপুরদুয়ারে আলাদা জেলার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে মঞ্চে নিজের দুই পাশে দাঁড় করিয়ে সভায় জানিয়ে দেন, এঁরা দুই ভাই-বোনের মত। দুটি জেলা চালাবে।” তবে জেলা পরিষদ কোথায়? কে বা তার সভাপতি? পঞ্চায়েত সমিতিগুলি এলাকার কাজের দাবিগুলি কোথায় করবেন তা এখনও ঠিক করেনি রাজ্য সরকার। তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিডিও-রাও। তাঁদের এক জনের কথায়, “কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আমরা আলাদা জেলায় কীভাবে কাজের জন্য তদ্বির করব তা জানি না। এই সমাধান হওয়া উচিত ছিল।” বাম নেতাদের আশঙ্কা, সহজে নতুন জেলা পরিষদ গঠন করা যেত। আগে জেলা ভাগের পাশাপাশি জেলা পরিষদ ভাগ হয়েছে। এ ভাবেই করতে হত। জেলা পরিষদের মোট আসন ১৯টির মধ্যে বামদের দখলে রয়েছে ১৪টি। সিপিএম নেতা পিন্টু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জেলা পরিষদ ভাগ না হলে কাজ হবে কীভাবে তা বুঝতে পারছি না। একশো দিনের কাজ হবে না। বিষয়টি সরকারের আগে ঠিক করাটা প্রয়োজন ছিল।”
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন, “পরিকাঠামোর জন্য কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন। জেলার বরাদ্দের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হোক, তাঁরা এখন কোন পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা পাঠাবে! আপাতত যে ভাবে চলছে সে ভাবে চলবে।”