জেলা হলেও হাল ফেরেনি পরিবহণের

মহকুমা শহর থেকে জেলা সদরে উন্নীত হয়েছে আলিপুরদুয়ার। কিন্তু, যোগাযোগের উন্নতি সে ভাবে হচ্ছেই না। বরং, অতীতে যোগাযোগের যে সব মাধ্যম ছিল তাও ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। ফলে, সদ্যগঠিত জেলা আলিপুরদুয়ারে পরিবহণের সামগ্রিক উন্নতির দাবিতে সরব হয়েছেন শহরবাসী। প্রবীণ থেকে নবীন, সব স্তরের বাসিন্দারা জোট বেঁধে শহরের রেল-সড়ক যোগাযোগের হাল ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন সরকারি মহলে।

Advertisement

নারায়ণ দে

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

এনবিএসটিসির আলিপুরদুয়ার ডিপোতে গেলে দেখা মেলে এমন ছবির।—নিজস্ব চিত্র।

মহকুমা শহর থেকে জেলা সদরে উন্নীত হয়েছে আলিপুরদুয়ার। কিন্তু, যোগাযোগের উন্নতি সে ভাবে হচ্ছেই না। বরং, অতীতে যোগাযোগের যে সব মাধ্যম ছিল তাও ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। ফলে, সদ্যগঠিত জেলা আলিপুরদুয়ারে পরিবহণের সামগ্রিক উন্নতির দাবিতে সরব হয়েছেন শহরবাসী। প্রবীণ থেকে নবীন, সব স্তরের বাসিন্দারা জোট বেঁধে শহরের রেল-সড়ক যোগাযোগের হাল ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন সরকারি মহলে।

Advertisement

একঝলকে দেখে নেওয়া যাক আলিপুরদুয়ারের যোগাযোগ ব্যবস্থার অতীতের অবস্থা। তথ্য অনুযায়ী, মূলত কোচবিহার রাজাদের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল ডুয়ার্সে রেল ও বাস পরিষেবা। ১৯০০ সালে প্রথম ইংরেজদের সহযোগিতায় কোচবিহার থেকে রেল লাইন বসে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত। কোচবিহার রাজাদের উদ্যোগে আলিপুরদুয়ার থেকে রাজাভাতখাওয়া রেলপথ চালু হয়। পরে রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী পর্যন্ত ওই রেলপথ সম্প্রসারিত হয়।

স্বাধীনতার আগে আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে মিটারগেজের ট্রেনে চেপে কোচবিহারের চৌধুরীহাট হয়ে লালমণিরহাট (অধুনা বাংলাদেশ) হয়ে কলকাতা যাওয়া যেত। পরে অসমের সঙ্গে জুড়ে যায় আলিপুরদুয়ারের রেলপথ। রেল যোগাযোগের পরিধি বাড়ায় ১৯৫৮ সালে আলিপুরদুয়ার জংশনে তৈরি হয় রেলের পৃথক ডিভিশন। চালু হয় ট্রাফিক সুপারেনটেন্ডেন্টের অফিস। তখনই গড়ে ওঠে আলিপুরদুয়ার রেল জংশনের বড় জনবসতি। ৫০-৬০টি রেলকর্মী আবাসন তৈরি হয়। ডিভিশনাল সুপারেন্টেন্ডেন্ট অফিস ও পরে ওই অফিস বসতে শুরু করেন ডিভিশনাল ম্যানেজার। কর্মী আবাসনের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩ হাজার। শ্যামাপ্রসাদ কলোনি, অফির্সাস কলোনি, অরবিন্দ কলোনি, লেনিন কলোনি গড়ে ওঠে।

Advertisement

সেই সময় গাছ কাটা নিয়ে এতটা কড়াকড়ি ছিল না। জয়ন্তীর শাল-সেগুন কেটে ট্রেনে দেশ-বিদেশে নিয়ে যাওয়া হতো। কাঠ বিক্রির সুবাদে আলিপুরদুয়ারে ভালই অর্থাগম হতো। আলিপুরদুয়ারের বিস্তীর্ণ এলাকার চা বলয়ের পাতা যেত কলকাতায়, বিদেশেও। সড়ক পথে যেমন যেত, তেমন উড়ানও চালু ছিল। আলিপুরদুয়ার থেকে ছোট মাপের ডাকোটা বিমানে পাতা যেত কলকাতায়। কুমারগ্রামের তুরতুরি এলাকায় নামত ওই ছোট মাপের বিমান। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “সেই ডাকোটা বিমানে কলকাতা যেতে লাগত মাত্র ২৬ টাকা। চা পাতার বস্তার ফাঁকে কোনমতে বসে যাওয়া যেত। আমি বেশ কয়েকবার ওই বিমানে গিয়েছি।” নতুন জেলা গঠনের পরে আলিপুরদুয়ারের নানা এলাকায় পর্যটকদের সহজে পৌঁছনোর জন্য হেলিকপ্টার সার্ভিস কেন চালু চালু করা যাবে না সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বরঞ্জনবাবু। তাঁর কথায়, “সড়ক যোগাযোগ আরও ভাল করা জরুরি। তবে ডুয়ার্সের নতুন জেলার পর্যটন প্রসারের জন্য অন্তত কিছুদিন অনুদান দিয়ে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করাতে পারে রাজ্য সরকার।”

আলিপুরদুয়ারের পর্যটন ব্যবসায়ীদের অনেকে অবশ্য একান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, হেলিকপ্টার দূরের কথা, আগে আলিপুরদুয়ার-কলকাতা রকেট বাস ফের চালু করে দেখাক রাজ্য সরকার। তাঁরা জানান, এক দশক আগেও আলিপুরদুয়ার থেকে সরাসরি কলকাতা যাওয়ার রকেট বাস সার্ভিস ছিল। এখন সরাসরি কোনও বাস নেই। একাধিক হোটেল মালিক বলেন, “শুধু বড় বড় কথা বললেই তো হবে না। জেলার পরিবহণের হাল দিন দিন কেন খারাপ হচ্ছে সেটা নেতা-কর্তারা খেয়াল করছেন না কেন? রকেট বাসটা চালু করতে সমস্যা কোথায়?”

ভুটানের থিম্পু-পারো এলাকায় নিয়মিত পর্যটকদের পাঠান এমন একটি সংস্থার আলিপুরদুয়ার শাখার প্রতিনিধি জানান, তাঁরা বহুবার বলার পরেও সেখান থেকে কোনও সরকারি বাস থিম্পু কিংবা পারোয় যাতায়াত করানোর কথা ভাবা হয়নি। অথচ জলদাপাড়ার বনাঞ্চলে যাতায়াতের আগে কিংবা পরে ভুটানের থিম্পু-পারোর মতো এলাকা ঘোরার কোনও ‘প্যাকেজ ট্যুর’ চালু করলে ভাল সাড়া মিলতে পারে বলে মনে করেন পর্যটন মহলের অনেকেই। ট্যুর অপারেটরদের কয়েকজন অবস্য দাবি করেছেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব চিলাপাতায় তৈরি হচ্ছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র তৈরির সঙ্গেই ভুটান ও অসমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

ঘটনাচক্রে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবুই এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান। উপরন্তু, আলিপুরদুয়ার জেলার তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রর্বীও এনবিএসটিসির একজন ডিরেক্টর। ফলে, আলিপুরদুয়ার তেকে ভুটান, অন্য দিকে গুয়াহাটি, শিলংয়ে ‘প্যাকেজ ট্যুর’ নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। এনবিএসটিসির আলিপুরদুয়ার শাখার একাংশ কর্মীই জানান, কোনও নতুন পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার আগে পুরানো পরিকাঠামোর হাল ফেরানো ভীষণ জরুরি।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন