হেমতাবাদ

জুয়ার আসরে হানার পরে আক্রান্ত পুলিশ

জুয়ার আসর থেকে দুই যুবককে গ্রেফতার করার সময়ে দুষ্কৃতীদের হামলার ‘শিকার’ হল পুলিশ। পাশাপাশি, পুলিশের একটি জিপে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। আর তাতে নাম জড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূলেরও। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হেমতাবাদ থানার গুটিন এলাকায়। অবশ্য এই ঘটনার পরে পুলিশের উপরে হামলার কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। হেমতাবাদ থানার ওসি মন্টু বর্মনের দাবি, “ওটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪১
Share:

জুয়ার আসর থেকে দুই যুবককে গ্রেফতার করার সময়ে দুষ্কৃতীদের হামলার ‘শিকার’ হল পুলিশ। পাশাপাশি, পুলিশের একটি জিপে ভাঙচুর চালানোরও অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। আর তাতে নাম জড়িয়ে গিয়েছে তৃণমূলেরও। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হেমতাবাদ থানার গুটিন এলাকায়। অবশ্য এই ঘটনার পরে পুলিশের উপরে হামলার কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। হেমতাবাদ থানার ওসি মন্টু বর্মনের দাবি, “ওটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।” তবে তিনি এ কথা স্বীকার করেছেন যে, “জুয়ার আসর থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার সময়ে বাসিন্দাদের একাংশের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কা লেগেছে মাত্র। সেই সময়ে অন্ধকারের সুযোগে একজন পুলিশের জিপে ইট ছুড়েছে। আমরা অভিযুক্ত ওই যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছি।” সম্প্রতি দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরেও পুলিশ অফিসারকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে দুই তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। তবে সেই ঘটনাতেও পুলিশ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে পুরনো মামলায় ওই দুই তৃণমূল কর্মীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

জুয়ার আসর থেকে ধৃত দুই যুবকের নাম শিবু দাস ও দীপক রাজবংশী। তাদের বাড়ি কালিয়াগঞ্জ থানার ভুঁইহারা ও গুটিন এলাকায়। তাদের পুলিশ সে রাতে হেমতাবাদ থানায় নিয়ে যায়।

তবে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশকে হেনস্থা, সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে কোনও মামলা দায়ের না করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কংগ্রেস, সিপিএমের অভিযোগ, পুলিশের একাংশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের মদতে হেমতাবাদের বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে জুয়ার আসর চলছে। পুলিশ কর্মীদের একাংশ নিয়মিত বিভিন্ন জুয়ার আসর থেকে তোলা তুলছেন। একই অভিযোগ করেছেন হেমতাবাদ ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তৃণমূল নেতা ময়াজুদ্দিন আহমেদ খোকন। তাঁর দাবি, “পুলিশ ও দলের একাংশ জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই দিন জুয়ার আসর বসায়। এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বার হওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ এখনও অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে চাইছে না। তাই হেনস্থা, সরকারি কাজে বাধা বা সরকারি সম্পত্তি নষ্টে পুলিশ কোনও মামলা দায়ের করেনি।”

Advertisement

যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, “দলের কেউ ওই জুয়া খেলা বা অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত নন। যিনি এই সব কথা বলছেন, ওঁকে আগেই দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তাই উনি নানা কথা বলছেন। পুলিশ পুলিশের কাজ করুক। আমরাও সেটা চাই।” জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, কালীপুজো উপলক্ষে বাসিন্দাদের একাংশের উদ্যোগে গুটিন এলাকায় একটি মেলা বসেছিল। রাত ১০টা নাগাদ পুলিশের কাছে খবর আসে ওই মেলায় জুয়ার আসর বসেছে। খবর পেয়ে হেমতাবাদ থানার এক সাব ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল এলাকায় যান। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, পুলিশ দেখে উল্টে জুয়ারি বলতে থাকে, পুলিশকে টাকা দিয়েই আসর বসানো হয়েছে। কথা কাটাকাটিও হয়। সেই সময় পুলিশকর্মীরা ধৃত দু’জনকে ধরে জিপে তোলার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, সেই সময় জুয়ার আসরে থাকা একদল দুষ্কৃতী ওই অফিসারকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এর পরে জিপটি রওনা হতেই জিপকে লক্ষ করে ইট, পাথর ছোড়া হয়। তাতে জিপের পিছনের একটি জানলার কাচ ভেঙে যায়।

হেমতাবাদ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি গোপাল মজুমদার বলেন, “হেমতাবাদ থানার পুলিশ ও তৃণমূলের একাংশ জুয়ারিদের সঙ্গে অবৈধ লেনদেন করে দীর্ঘদিন ধরে নানা এলাকায় জুয়ার আসর বসাচ্ছে। আর যাঁরা তোলা নেন না, তাঁরা অভিযানে গিয়ে হামলার মুখে পড়ছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ ভৌমিক বলেন, “পুলিশ ও তৃণমূলের একাংশ লেনদেনের মাধ্যমে জুয়ার আসর বসিয়েছে, এটা আশ্চর্য হওয়ার মতো কোনও ঘটনা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন