ঝাড়খণ্ডে উদ্ধার মালদহের অপহৃত যুবক

অপহরণের সাত দিনের মাথায় উদ্ধার করা হল মালদহের যুবক আশিস মণ্ডলকে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিনোদ মণ্ডল নামে এক দুষ্কৃতীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের তিনপাহাড় এলাকায় একসঙ্গে হানা দেয় সিআইডি, মালদহ পুলিশ ও ঝাড়খণ্ড পুলিশ। সেখানেই একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আশিসবাবুকে উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৮
Share:

ফেরার পরে আশিসবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

অপহরণের সাত দিনের মাথায় উদ্ধার করা হল মালদহের যুবক আশিস মণ্ডলকে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিনোদ মণ্ডল নামে এক দুষ্কৃতীকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ ঝাড়খণ্ডের তিনপাহাড় এলাকায় একসঙ্গে হানা দেয় সিআইডি, মালদহ পুলিশ ও ঝাড়খণ্ড পুলিশ। সেখানেই একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আশিসবাবুকে উদ্ধার করা হয়। মালদহের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অপহরণে যুক্ত দলটির সকলকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

Advertisement

পুলিশ জানায়, অপহরণকারীরা যাওয়ার সময়ে ফুলহার নদীর ধারে একটি ছোট গাড়ি ফেলে যায়। সেই সাদা গাড়িটি পুলিশ তুলে নম্বরপ্লেট পরীক্ষা করায়। পুলিশ জানতে পারে, সেটি একটি মোটরবাইকের। পরে পুলিশ ও সিআইডি ও উদ্ধার হওয়া গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর দেখে জানতে পারেন ওই সেটির মালিক একজন একজন প্রাক্তন সেনা চিকিৎসক। তখনই জানা যায়, চিকিৎসক তাঁর গাড়িটি ঝাড়খণ্ডের রাধানগর থানার উধুয়া এলাকার এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর পরে পুলিশ ও সিআইডির কর্তারা সেই গাড়ির সূত্র ধরে ঝাড়খণ্ডে সেই গাড়ির মালিকের কাছে যান। বেশ কিছু তথ্য পেয়ে সন্দেহ দৃঢ় হলে ঝাড়খণ্ডের রাজমহলের কামলাইন থেকে বিনোদকে ধরে পুলিশ। এর পরেই অপহরণকারী দলের বিশদ হদিস পায় পুলিশ।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, একাধিক অপহরণের সঙ্গে যুক্ত ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতী প্রভাকর মণ্ডলের দলের পাঁচজনই আশিসবাবুকে অহপরণ করে ঝাড়খণ্ডে নিয়ে আটকে রাখে। তিন-চার দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে সাহেবগঞ্জের তিনপাড়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আশিসকে রাখা হয়েছে বলে জানতে পারেন তাঁরা। ঝাড়খণ্ড ও মালদহ পুলিশ ও সিআইডির দল সেখানে হানা দিলে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়। সেখান থেকেই আশিসবাবুকে উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

ফিরে আসার পরেও এখনও যেন ঘোর কাটছে না আশিসবাবুর। তিনি বলেন, “আমাকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার পরই ওরা আমার মুখে কী যেন গুঁজে দিল। তার পর আমার কোনও কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি একটি অন্ধকার ঘরে আমার হাত পা বাঁধা।” তিনি জানান, প্রথম দিন দুষ্কৃতীরা তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করেছিল। এর পরে তারা আশিসবাবুর মোবাইল থেকে তাঁর দাদাকে ফোন করে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চায়। তাঁর কথায়, “আমাকে দিয়েও দাদাকে ফোন করে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। ওরা দিনে একটা ঘরে আটকে রাখত। রাত হলেই ফের অন্য জায়গায় নিয়ে যেত। এই সাতদিন আমাকে চার-পাঁচ জায়গায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে।”

গত ১৪ মার্চ ইংরেজবাজার থানার মোহজমাপুর গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা রেখা মণ্ডলকে তাঁর ছোট ছেলে আশিস পাশের গ্রাম মাদাপুর প্রাথমিক স্কুলে পৌঁছতে যান। ফেরার সময় মহিমাপুর ও জগদীশবাটির মাঝে আমবাগানের মাঝে অপহরণকারীরা আশিসকে মোটরবাইকে থেকে তুলে গাড়িতে চড়ে চলে যায়। ওই দিন রাতেই অপহরণকারীরা অপহৃত যুবকের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর দাদার কাছে মুক্তিপণ চায়। বাড়ির লোকজন পুলিশি সক্রিয়তার আর্জি জানিয়ে পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর দ্বারস্থ হন। আশিসবাবুর ফিরে আসায় কাজিগ্রামের মোহজমাপুর গ্রামের মণ্ডল পরিবারের সকলেই স্বস্তিতে। তাঁর মা রেখাদেবী বলেন, “আমার ছেলেটা ফিরে এসেছে, আমার আর কিছু চাই না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন