ময়নাগুড়িতে জল থইথই রাস্তা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
বজ্র-বিদ্যুৎ সহ প্রবল বর্ষণের সময়ে মালদহে ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে ঘটনাগুলি ঘটেছে। ডুয়ার্সের মালবাজারে অন্ধাঝোরা নদীর জল গ্রামে ঢুকে এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। জলের তোড়ে মালবাজার থেকে গজলডোবা যাতায়াতের রাস্তা ভেঙে যায়। দিনভর যান চলাচল বন্ধ থাকে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মালদহে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বাজ পড়ে। ১টি শিশু জলে পড়ে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। রাস্তার ধারে জমা জল থেকে উদ্ধার চতুর্থ এক মহিলার মৃত্যুর কারণ রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। প্রায় ৩ ঘণ্টা টানা বৃষ্টির ফলে শুক্রবার রাতে মালদহের ইংরেজবাজার পুর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ, সেখানে নিকাশি বেহাল ছিল। সকালে জলবন্দি বাসিন্দারা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। ৪ ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “শহরের নীচু এলাকায় জল জমে গিয়েছিল। শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে জমা জল বার হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও কিছু নীচু এলাকায় জল জমে রয়েছে। এমন টানা বৃষ্টি হলে কোনও উপায় থাকে না।”
মালদহে শুক্রবার রাত ১২টা থেকে প্রায় ৩ টে পর্যন্ত বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয়। ফলে, পুরসভার ১৫ টি ওয়ার্ডে জল জমে যায়। নিচু এলাকার কয়েকটি বস্তিতে ঘরেও জল ঢুকে যায়। ওই দুর্যোগের সময়ে ২টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ৩ নম্বর কলোনির দক্ষিণপাড়া এলাকায় রাস্তার ধারে জমা জল থেকে এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর নাম মাধুরী দাস (৫৫)। কালিয়াচকের মহব্বতপুরের বাসিন্দা মাধুরীদেবী মালদহ শহরের একটি হোটেলে কাজ করতেন। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া বস্তিতে। সেখানে ঘরে জমা জলে পড়ে ৮ মাসের একটি শিশুর মৃত্যু হয়। তার নাম নিশা শীল। শনিবার সকালে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার অর্জুনা এলাকায় ঝড়বৃষ্টির সময়ে ধান খেতে আল দেওয়ার কাজ করার সময় বাজ পড়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতরা হলনুর ইসলাম (১৬) ও আব্দুল বারি (১৪)। স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত দুই ভাই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মালদহে ৩ ঘন্টা ইংরেজবাজারে বৃষ্টির পরিমাণ ১৮৮ মিলিমিটার। বৃষ্টিতে জল জমায় দুর্ভোগে পড়েন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকজন। মেডিক্যাল ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জরুরি বিভাগ, সংক্রমণ বিভাগে জল দাঁড়িয়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নীচতলার ওয়ার্ড থেকে রোগীদের দোতলায় স্থানান্তরিত করতে শুরু করান কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের চারদিকেই জল জমে যায়। লাগোয়া বস্তির বাসিন্দা রিক্সাচালক গোপাল শীলের ঘরও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তাঁরা যখন ঘরের জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত, সে সময়ে বিছানায় থাকা ৮ মাসের শিশুকন্যা নিশা বিছানা থেকে জলে পড়ে যায়। গোপালবাবু বলেন, “জল থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাঁচানো গেল না।” ইংরেজবাজার পুরসভার বিরোধী নেতা শুভদীপ সান্যালের অভিযোগ,“নিকাশির সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় এমন হয়েছে।”
ডুয়ার্সের গজলডোবার আন্ধাঝোরা নদীর জল উপচে গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। শনিবার ভোর থেকেই আন্ধাঝোরা নদীর জল গজলডোবার গ্রামে ঢুকতে শুরু করে। সকালে নদীর জল সেচ দফতরের সড়কের অন্তত ৪ ফুট উপর দিয়ে বইতে থাকে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মালবাজারের সঙ্গে গজলডোবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সড়কে পাঁচ ফুটেরও বেশি বড় গর্ত তৈরি হয়। গজলডোবা ৭ ও ১০নম্বর এলাকার মাঝামাঝিতে থাকা শতাধিক বাড়িতেও নদীর জল ঢুকে যায়। ২০০বিঘারও বেশি জমির ধান, সব্জির খেত জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গজলডোবার দুটি কালভার্টও জলের তোড়ে ভেঙে যায়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গজলডোবায় আসেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়, মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি এবং পূর্ত দফতরের জলপাইগুড়ি হাইওয়ে ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার দীপক সিংহ। যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে রাস্তা মেরামত করা হবে বলেও জানান আধিকারিকেরা জানান।