ঝড়ে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ, দুর্ঘটনায় মৃত দুই

ঝড়-বৃষ্টিতে রবিবার সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের কিছুটা স্বস্তি মিললেও, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় দুর্ভোগে রাত কাটালেন বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। ঝড়ের দাপটে উত্তরবঙ্গ জুড়েই ঘর-বাড়ি ভাঙা, টিনের চাল উড়ে যাওয়া, অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা ঘটলেও, সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে। গাঠের ডাল পড়ে বা খুঁটি উপড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে সর্বত্র। ঝড়ের সময় কোনও হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও, সোমবার সকালে ছেঁড়া তারে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫২
Share:

রবিবারের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরাতন মালদহের পোপড়া-সহ একাধিক গ্রাম। পরিবার নিয়ে এ ভাবেই রাত কাটিয়েছেন রতন রবিদাস। সোমবার টিনের চাল লাগানোর চেষ্টায় তিনি। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

ঝড়-বৃষ্টিতে রবিবার সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের কিছুটা স্বস্তি মিললেও, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় দুর্ভোগে রাত কাটালেন বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। ঝড়ের দাপটে উত্তরবঙ্গ জুড়েই ঘর-বাড়ি ভাঙা, টিনের চাল উড়ে যাওয়া, অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা ঘটলেও, সর্বাধিক ক্ষতি হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে। গাঠের ডাল পড়ে বা খুঁটি উপড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে সর্বত্র। ঝড়ের সময় কোনও হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও, সোমবার সকালে ছেঁড়া তারে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার ছত্রহাটি বিএসএফ ফাঁড়িতে রবিবার রাতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে। সোমবার সকালে ফাঁড়ি চত্বরে ঝাড়ু দেওয়ার সময় এক জওয়ান বিদ্যুতস্পৃষ্ট হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বেলাল আহমেদ (২৬)। তাঁর বাড়ি কাশ্মীরে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের তার মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ঠিকাদার সংস্থার এক শ্রমিক। সোমবার বিকেলের পরে ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ির ভোটপট্টি বাজার লাগোয়া এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম তপন রায় (৩৫)। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে কি না ভাল করে না দেখে বটতলা এলাকার বাসিন্দা ওই শ্রমিক এ দিন তার মেরামত করতে উপরে উঠলে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।

রবিবার সন্ধ্যার ঝড়ের পড়ে আঠারো ঘণ্টা কেটে গেলেও সোমবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবারহ স্বাভাবিক হয়নি কোচবিহারে। যার জেরে পানীয় জল সরবরাহেও প্রভাব পড়েছে। কোচবিহারের শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে রবীন্দ্রভবনের সামনে একটি বড় গাছ বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে নিয়ে রাস্তায় পড়ে। দিনভর ওই এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকে। মাথাভাঙা, দিনহাটা ও তুফানগঞ্জের শহর এলাকার শহরের বেশ কিছু এলাকায় এ দিন দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। এ দিন দুপুরের পরে অবশ্য দিনহাটা ও মাথাভাঙার কয়েকটি ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। শহর লাগোয়া হরিণচওড়া, ঘুঘুমারি, হাড়িভাঙ্গা, সাহেবেরহাট, চিলকিরহাট, ভেটাগুড়ি, ঘোকসাডাঙ্গা-সহ বহু এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। খুঁটি উপড়ে পড়ে ওই এলাকাগুলিতে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে। বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়ে ইসলামপুরের বিভিন্ন এলাকাও।

Advertisement


কোচবিহারে ভেঙেছে বিদ্যুতের স্তম্ভ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি সূত্রের খবর, সোমবার বিকালের পর থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়া শুরু করেছে। বন্টন কোম্পানির শিলিগুড়ি জোনের জোনাল ম্যানেজার অশোক কুমার সিংহ বলেন, “গ্রামীণ এলাকাগুড়িতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। রাত থেকে কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। আশা করছি, সোমবার রাতের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হবে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি কিছু এলাকায় মূল (মেইন) বিদ্যুতের লাইন ছিড়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।” ক্ষতি হয়েছে বাড়ি-ঘর এবং অস্থায়ী কাঠামোরও। ঝড়ে হলদিবাড়ির গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত দু’শোটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর মিলেছে। ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের নাগেশ্বরী চা বাগানের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের বারান্দার চালের অর্ধেক টিন উড়ে যায়। স্কুলের সামনে একটি বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়ে। সোমবারে নাগেশ্বরী, জুরান্তি এবং ইংগু এই তিন চা বাগানেই বেশকিছু ছায়াগাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ে। কোচবিহার জেলা পরিষদের সদস্য কৃষ্ণকান্ত বর্মন জানিয়েছেন, মাতালহাট, পেটলা সহ বেশ কিছু এলাকায় বাড়িঘর নষ্ট হয়।

মালদহের দু’টি ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫টিরও বেশি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৪০০টিরও বেশি মাটির বাড়ি ভেঙেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, ভেঙে পড়েছে শতাধিক বড় গাছ। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরোধানের ক্ষেতও। রবিবার রাতের ঝড়ে হবিবপুরের চকজহরি, সিংপাড়া, শিবডাঙ্গা, বেগুনবাড়ি সহ যাত্রাডাঙ্গার পোপড়া, মেহেরপুর সহ ২৫টি গ্রাম তছনছ করে দেয় ঝড়। ঘটনার পর রাত থেকেই ওই এলাকাগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্য়স্ত হয়ে পড়ে। যা এ দিন বিকেল পর্য়ন্ত স্বাভাবিক হয়নি। মেহেরপুর, পোপড়া এলাকায় শুরু হয় শিলাবৃষ্টিও। ঝড় ও শিলের জোড়া তাণ্ডবে জমিতে নুইয়ে পড়ে বিঘার পর বিঘা বোরো ধানের গাছ। বেগুনবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সীতা সোরেন, সুসেন মণ্ডলেরা বলেন, “প্রথমে সোঁ সোঁ করে বিকট শব্দ শুনি। তারপর নিমেষে চার দিক ধুলোয় ঢেকে যায়। ভয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে যাই। পরে দেখি বাড়ি ভেঙে পড়েছে।”

মালদহের জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী জানিয়েছেন, বিডিওদের এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ দেওয়া হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন