ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ

বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের আনন্দে বিকেল থেকেই বাজি-পটকা ফাটাচ্ছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। ফলে, সন্ধ্যায় যখন গঙ্গারামপুরের বড়বাজার এলাকায় বোমাবৃষ্টি করে ডাকাতরা সোনার দোকানে লুঠপাট চালাচ্ছে, সেই সময়ে প্রথমে পুলিশ বুঝতেই পারেনি কী হচ্ছে। যতক্ষণে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, ততক্ষণে লুঠপাট সেরে নিশ্চিন্তেই এলাকা ছেড়েছে ডাকাতরা।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

গঙ্গারামপুর শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৩
Share:

ডাকাতির ঘটনার প্রতিবাদে বন্ধ সোনা-রুপোর দোকান। ছবি: অমিত মোহান্ত।

বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের আনন্দে বিকেল থেকেই বাজি-পটকা ফাটাচ্ছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। ফলে, সন্ধ্যায় যখন গঙ্গারামপুরের বড়বাজার এলাকায় বোমাবৃষ্টি করে ডাকাতরা সোনার দোকানে লুঠপাট চালাচ্ছে, সেই সময়ে প্রথমে পুলিশ বুঝতেই পারেনি কী হচ্ছে। যতক্ষণে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে, ততক্ষণে লুঠপাট সেরে নিশ্চিন্তেই এলাকা ছেড়েছে ডাকাতরা।

Advertisement

সোমবারের ওই ঘটনার পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের নজরদারি নিয়ে সরব হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। সোনার দোকান মালিক বসন্ত মুন্দ্রার স্ত্রী তারাদেবী অভিযোগ করেন, “পুলিশ একটু তত্‌পর হলে এত বড় ডাকাত দলের একজন হলেও ধরা পড়ত।”

পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, বিকেলে বড়বাজার এলাকায় পায়ে হেঁটে নজরদারি চালিয়ে, দুই কনস্টেবল চৌপথীতে পৌঁছন। ফেরার সময় দূর থেকে ডাকাতদের ছোড়া বোমার শব্দ শুনতে পেয়ে গোড়ায় শব্দবাজি বলেই মনে করেছিলেন তাঁরা। একজন পুলিশ আধিকারিক জানান, “সকাল থেকে গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে পুলিশের উদ্যোগে ব্লক স্তরের উত্‌কর্ষ ফুটবল ও কবাডি টুর্নামেন্ট চলছিল। থানার অধিকাংশ পুলিশই খেলার মাঠে অনুষ্ঠান পর্ব সামলে সন্ধ্যে ছ’টা নাগাদ থানায় ফেরেন। বোমার শব্দে তারাও বিভ্রান্ত হন।”

Advertisement

এর পর ঘটনার ভয়াবহতা টের পেয়ে দু-তিনজন পুলিশ কর্মী দুষ্কৃতীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে থাকেন। ততক্ষণে কাজ হাসিল করে উধাও হয়ে যায় ডাকাতরা। সোনার দোকানের এক কর্মচারীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

এ দিন ওই সোনার দোকানের পাশে কাপড়ের দোকানে বসে স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী ওমপ্রকাশ অগ্রবাল, প্রবীণ ব্যবসায়ী অরুণ সাহা এবং বিপ্লব সাহা অভিযোগ করেন, সন্ধে ৭টার পর বড়বাজার এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। তাঁদের কথায়, “যতক্ষণ দোকানপাট খোলা থাকে, ততক্ষণ রাস্তাঘাটে আলো থাকে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলেই গোটা এলাকায় অন্ধকার হয়ে যায়। কেননা কিছুদিন ধরে এলাকার পথবাতি জ্বলেনা।” সন্ধের পর এলাকায় পুলিশের টহলও দেখা যায়না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাদের বক্তব্য, পরিকল্পনা করেই ডাকাতির দিন বেছে নিয়ে পুলিশকে বোকা বানিয়েছে দুষ্কৃতীরা।

ডাকাতির ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে গঙ্গারামপুরে সমস্ত সোনা রুপোর দোকান বন্ধ করে শতাধিক স্বর্ণশিল্পী শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ওই মিছিলে বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির মালদহ জেলার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। থানা চত্বরে বিক্ষোভও দেখান তারা।

ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনার রেশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ওই ব্যবসায়ী পরিবারের সদস্যেরা।

সমিতির জেলা সম্পাদক পরিতোষ রায় বলেন, “আগেও এই জেলার বংশীহারি, বুনিয়াদপুর, পতিরাম ও বালুরঘাটে একাধিক সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কিনারা হয়নি।” জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস সালভে মুরাগন বলেন, “বেশ কিছু তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত এগোচ্ছে। শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।” এদিন সকালে থানা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জয়পুরের মাঠে এবং ব্রাক্ষ্মণী নদীর পাশে তিলনা এলাকায় বেশ কিছু খালি অলংকারের বাক্স দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে সর্ষে খেত থেকে পুলিশ একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। লুঠের মাল ভাগ বাঁটোয়ারার সময় ফোনটি কোনও দুষ্কৃতীর হাত থেকে পড়ে গিয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ।

এদিকে দুষ্কৃতী হামলায় জখম সোনার দোকানের মালিক বসন্ত মুন্দ্রার মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়েছে। তাঁর চোখের নীচেও গভীর আঘাত রয়েছে। তিনি মালদহের একটি নার্সিংহোমে চিকিত্‌সাধীন রয়েছেন। বাড়ির দুই ছেলেও সকাল থেকে থানা পুলিশ নিয়ে ব্যস্ত। তাই মঙ্গলবার ঘটা করে আর শিব চতুর্দশীর পুজো হলো না গঙ্গারামপুরের মুন্দ্রা পরিবারে। বড়বাজার এলাকায় দীর্ঘদিনের পুরোনো এই দোকানে সমস্ত অলংকার লুঠে দিশাহারা পরিবারের সদস্যরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন