ডেঙ্গি আক্রান্ত বিজেপি নেতার বাড়িতে গৌতম

ডেঙ্গি আক্রান্ত বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়ে দেখা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। ওই তিনটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে গাঁধী ময়দান থেকে পরিদর্শন শুরু করেন মন্ত্রী। অগ্রসেন রোডের বাসিন্দা বিজেপি নেতা পবন অগ্রবাল-সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

পবন অগ্রবালের কথা শুনছেন মন্ত্রী। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

ডেঙ্গি আক্রান্ত বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়ে দেখা করলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মন্ত্রী।

Advertisement

ওই তিনটি ওয়ার্ডেই ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে গাঁধী ময়দান থেকে পরিদর্শন শুরু করেন মন্ত্রী। অগ্রসেন রোডের বাসিন্দা বিজেপি নেতা পবন অগ্রবাল-সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের দেখতে মন্ত্রী পবনবাবুর বাড়িতে ঢুকে পড়েন গৌতমবাবু। পবনবাবু মন্ত্রীকে জানান, তাঁদের পরিবারের ১১ জনের রক্তে এনএসওয়ান মিলেছে। মন্ত্রী অবশ্য পবনবাবুকে জানান, এনএসওয়ান মানেই ডেঙ্গি হয়েছে এমন নয় ম্যাক আল্যাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে বলে মন্ত্রী দাবি করেন। মন্ত্রীর ব্যাখ্যা শুনে পবনবাবু অভিযোগ করে বলেন, একটি বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে তাঁদের সকলের ডেঙ্গি হয়েছে বলে বলা হয়েছে, সেই মতো চিকিৎসাও করা হয়েছে। অভিযোগ শুনে সেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। বিজেপি নেতার বাড়িতে চা খেয়ে, কোনও প্রয়োজন হলে ফোন করার জন্য নিজের মোবাইল নম্বর পবনবাবুকে এ দিন দিয়েছেন মন্ত্রী।

এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে পুরসভার আধিকারিক, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক-সহ এলাকার তৃণমূল নেতাদেরও দেখা গিয়েছে। মন্ত্রী আসার আগেই গোটা এলাকায় মশা মারার ধোঁয়া ছড়ানো হয়। মন্ত্রীর কথায়, “পবনবাবু বিজেপি নেতা হতে পারেন, কিন্তু শহরের এক বাসিন্দা। রোগ নিয়ে রাজনীতি আমরা করি না।” মন্ত্রী দাবি করে বলেন, “পবনবাবুর পরিবারের সকলের ডেঙ্গি হয়েছে কিনা তার রিপোর্ট এখনো আসেনি। সে সব ওঁদের বুঝিয়ে বলেছি।”

Advertisement


ডেঙ্গি রুখতে শিলিগুড়ি পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়া ছড়ানো হচ্ছে। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কালীপুজোর আগে শহরের খালপাড়া এলাকায় ডেঙ্গি সংক্রমণের অভিযোগ ওঠে। শুধুমাত্র পবনবাবুর বাড়িতেই ১১ জন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়। জেলা বিজেপির তরফে প্রশাসনের বিরুদ্ধে রোগ রুখতে গাফিলতির অভিযোগও তোলা হয়। সে সময় মন্ত্রী গৌতমবাবু জরুরি বৈঠক করলেও, শহরে ডেঙ্গির সংক্রমণ শুরু হয়নি বলে দাবি করেছিলেন। এনসেফ্যালাইটিসের মতোই ডেঙ্গি নিয়েও প্রশাসনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছিল। শিলিগুড়ি পুরসভার পরিচালনা ভার বর্তমানে প্রশাসকদের উপর। শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকায় বিভিন্ন এলাকা মশার আঁতুড়ঘর হয়ে পড়াতেই ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে বিরোধী দলগুলি। নানা মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে, এ দিন সরাসরি বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী পাল্টা রাজনৈতিক কৌশল নিলেন বলেই দলের নেতারা মনে করছেন।

এ দিন বিছানায় শুয়েই মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন পবনবাবু। পরে তিনি বলেন, “মন্ত্রীর সৌজন্যকে কৃতজ্ঞতা জানাই। মন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। দেখা যাক হয় কী হয়। পুরসভা আগে থেকে উদ্যোগ নিলে পরিবারসুদ্ধ জ্বরে আক্রান্ত হতে হতো না।” এ দিন খালপাড়া, অগ্রসেন রোড, নেহেরু রোড, মঙ্গল পাণ্ডে রোডের একাধিক নিমির্য়মান বহুতলের নির্মাণসামগ্রী নর্দমায় পড়ে থাকতে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী। বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা নর্দমার পরিস্থিতিতে নিয়ে মন্ত্রীকে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ শুনে আধিকারিকদের বকাঝকাও করেন মন্ত্রী। পরিদর্শনের শেষে এলাকার একটি নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন মন্ত্রী। ওই নার্সিংহোমেই আগে-পরে মিলিয়ে সাম্প্রতি অন্তত ১০ জন আক্রান্ত ভর্তি ছিলেন। সব রোগীদের আত্মীয়দের ডেকে তাঁদের ডেঙ্গি হয়েছে না রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা বুঝিয়ে বলার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী।

এ দিন সকালে মন্ত্রী আসার আগেই অবশ্য ফগিং মেশিন দিয়ে মশা মারার ধোঁয়া ছঁড়ানো হয়, নর্দমার দু’ধারে ব্লিচিংও ছেটানো হয়। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারি অসিত বিশ্বাস দাবি করেন, “বছরভরই নজরদারি চলে। পুরসভার তরফে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা স্বাস্থ্য দফতর থেকে নেওয়া হয়।” স্বাস্থ্য কর্তার ওই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন বাসিন্দারা। গত বছর ডেঙ্গিতে শহরে অন্তত ১১জনের মৃত্যু হয়। মাটিগাড়ার মতো মহকুমার অন্যান্য এলাকাতেও ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন