তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ হরিসাধনের

‘মুকুল রায়ের প্রতি অবিচার’ করা হয়েছে বলে তৃণমূলকে দুষে সোমবারই দল ছেড়েছিলেন দলের দার্জিলিং জেলার সহ সভাপতি হরিসাধন ঘোষ। ২৪ ঘন্টার মাথায় বিজেপি’তে যোগ দিলেন শিলিগুড়ির তিনি। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার হাত থেকে দলীয় পতাকা নেন তিনি। শহরে যেখানে থাকেন সেই ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আসন্ন পুর নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারছেন না মনে করেই হরিসাধনবাবু দল ছেড়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও দাবি করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৯
Share:

বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন হরিসাধন ঘোষ। বিশ্বরূপের বসাকের তোলা ছবি।

‘মুকুল রায়ের প্রতি অবিচার’ করা হয়েছে বলে তৃণমূলকে দুষে সোমবারই দল ছেড়েছিলেন দলের দার্জিলিং জেলার সহ সভাপতি হরিসাধন ঘোষ। ২৪ ঘন্টার মাথায় বিজেপি’তে যোগ দিলেন শিলিগুড়ির তিনি।

Advertisement

মঙ্গলবার শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার হাত থেকে দলীয় পতাকা নেন তিনি। শহরে যেখানে থাকেন সেই ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আসন্ন পুর নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হতে পারছেন না মনে করেই হরিসাধনবাবু দল ছেড়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও দাবি করেছিলেন। এ দিন বিজেপি’তে যোগ দিলেও তিনি ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছেও গোপন করেননি। তবে দলীয় স্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি-আদর্শই ‘আসল বামপন্থী’ বলে উল্লেখ করে বছরখানেক আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন এক সময়ের সিপিআই নেতা হরিসাধনবাবু। সেই মোহভঙ্গের কথা সোমবার দল ছাড়ার সময় ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেনও। আর এ দিন নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মতো দেশ গড়ার কাজের প্রশংসা করে বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন তিনি। নরেন্দ্র মোদীর নাম করেই জানিয়ে দেন, যে সাম্যবাদ, সমাজবাদের কথা, বিকাশের কথা তিনি ভেবে আসছিলেন বিজেপি’র মধ্যে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন যিনি সেই কাজ দ্রততার সঙ্গে করতে পারবেন। হরিসাধনবাবু বলেন, “ছাত্র জীবন থেকেই মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে স্বচ্ছ ভারত অভিযান-সহ যে ভাবে বিকাশ, উন্নয়নের কাজ চলছে তার প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। সে জন্যই বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

Advertisement

সাংসদ জানান, কিছু দিন আগেই হরিসাধনবাবু তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সে সময় দু জনের আলোচনা হয়েছে। প্রার্থীর দাবিদারের কোনও ব্যাপার হরিসাধনবাবু ছিল না। সাংসদ বলেন, “প্রবীণ ওই নেতা প্রার্থী হতে না পেরেই দল ছেড়েছেন বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী যে ইঙ্গিত দিয়েছেন এ ভাবে বলা ঠিক নয়। আমি মন্ত্রীকে প্রশ্ন করি তিনি এবং তাঁর স্ত্রী যদি প্রার্থী হতে না দিলে তিনি তৃণমূলে থাকবেন কি?”

তৃণমূল ছাড়ার আগে মুকুলবাবুর সঙ্গেও তাঁর বিস্তারিত কথা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন মুকুল রায়ের প্রতি দল অবিচার করছে বলে তিনি মনে করেন। বস্তুত, অতীতে মুকুলবাবুর সঙ্গে আলোচনার পর তৃণমূলের নীতি আদর্শকে বিশ্বাস করে তিনি দলে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। মুকুল ঘনিষ্ঠ ওই নেতা এ দিন বিজেপি’তে যোগ দান করার আগে মুকুলবাবুর সঙ্গে আর কোনও আলোচনা করেছিলেন কি না সেই বিষয়টি এ দিন হরিসাধনবাবু বারবারই এড়িয়ে গিয়েছেন। হরিসাধনবাবু বলেছেন, “মুকুলবাবুর সঙ্গে যে কথা হয়েছিল তার পর ২৪ ঘণ্টা কেটেছে। তখন তৃণমূলে ছিলাম। এখন বিজেপি’তে যোগ দিচ্ছি। তাই এ ব্যাপারে মুকুলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের কোনও প্রশ্ন আসে না। তা ছাড়া মুকুলবাবু নিয়ে এখন আর কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তিনি তাঁর নীতি আদর্শ মেনে চলবেন। তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।”

বিজেপি সাংসদও মনে করেন, তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতারা কী করবেন তা এই মুহূর্তে আলোচনা করে লাভ নেই। তাঁর কথায়, “নান্টু পালের মতো অনেক তৃণমূল নেতাই প্রার্থী হতে চেয়ে আমার সঙ্গে যোগযোগ করেছেন। সেটা কী আপনারা জানেন?” সাংসদের ওই কথা নিয়ে হইচই শুরু হলে তিনি বলেন, “আমি বলতে চেয়েছি তৃণমূলের অনেক নেতাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ভবিষ্যতে আরও অনেক কিচুই আপনারা দেখবেন। নান্টুবাবুর মতো নেতারাও যোগাযোগ করছেন কি না সেটা তো এখনই বলতে পারছি না।” জেলা তৃণমূলের অন্যতম নেতা নান্টুবাবু বলেন, “সাংসদকে ছবিতে, টিভিতে দেখেছি। কখনও তাঁর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। আমি তাঁর কাছে গিয়েছি বলে তিনি যদি বলে থাকেন তা হলে মিথ্যে বলছেন।”

১৯৮৯ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন হরিসাদনবাবু। ১৯৯৪ পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। এর পর আসন সংরক্ষণের কারণে এক দফায় দাঁড়াননি। পরে ১৯৯৭ সালে এবং পরবর্তী নির্বাচনে জিতে দুই বারই ডেপুটি মেয়র হন। ২০০৪ সালে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁকে হারিয়ে দেন নান্টু পাল। বর্তমানে তিনি ওই ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার অন্যতম দাবিদার। তা বুঝতে পেরেই হরিসাধনবাবু দল ছেড়েছেন বলে প্রশ্ন উঠেছে। ২০০৯ সালে শেষ পুর নির্বাচনেও হরিসাধনবাবুর স্ত্রীকে কংগ্রেস নেত্রী গঙ্গোত্রী দত্তের কাছে হারতে হয়েছে ওই ওয়ার্ডে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, হরিসাধনবাবু ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। তবে হরিসাধনবাবুর দাবি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ঠিক বলছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন