তৃণমূলের তৃণ-প্রেম, বাম-সভা রোখার দাবি

ঘাস বাঁচাতে এ বার আন্দোলনে ঘাসফুলের দল! শনিবার সেই ছবিই দেখল শহর শিলিগুড়ি। আজ, রবিবার বিকেলে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বামেদের জনসভা। মূল বক্তা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৩৬
Share:

বাঘা যতীন পার্কের সামনে তৃণমূলের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

ঘাস বাঁচাতে এ বার আন্দোলনে ঘাসফুলের দল! শনিবার সেই ছবিই দেখল শহর শিলিগুড়ি।

Advertisement

আজ, রবিবার বিকেলে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বামেদের জনসভা। মূল বক্তা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তৃণমলের অভিযোগ, এই সভাতেই ক্ষতি হবে পার্কের কচি ঘাসের। সেই ক্ষতি রুখতেই দিনভর আন্দোলন করল তৃণমূল।

শনিবার সকালে বাঘাযতীন ‘সবুজ বাঁচাও’ কর্মসূচি আয়োজন করে তৃণমূল। তাদের দাবি, মাসখানেক আগে লাগানো কচি ঘাস ভিড়ের চাপ সামলাতে পারবে না। জনসভা শুনতে আসা মানুষদের পায়ের চাপে, চেয়ার-সহ অন্য খুঁটি, ভারী কিছুর চাপে ঘাস মরে যাবে— এই আশঙ্কাতেই এ দিন সকালে পোস্টার হাতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা পার্কের সামনে জড়ো হন। কোনও পোস্টারে লেখা ছিল, ‘অনুরোধ, দয়া করে সবুজ ধ্বংস করবেন না, মেয়রসাহেব’, কোনও পোস্টারে আর্জি ছিল, ‘সূর্যবাবু ভাবুন, আপনার সভা নষ্ট করবে সবুজ ঘাস’। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার-সহ বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল, কৃষ্ণ পাল-সহ দলের অন্য কাউন্সিলর নেতা-কর্মীরা সকলেই পার্কের সামনে পোস্টার হাতে জড়ো হন। হ্যান্ডমাইকে সবুজ ঘাস বাঁচানোর আর্জি জানিয়ে পার্কের চারপাশে ঘোরেন নেতা-কর্মীরা। হাতে ছিল দলের প্রতীক ঘাসফুল আঁকা পতাকা।

Advertisement

পুজোর আগেই মাঠ সংস্কারের কাজের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করে পুরসভার হাতে পার্কের দায়িত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। সংস্কারে বরাদ্দ ছিল ৭২ লক্ষ টাকা। পার্কের মাঠে লাগানো হয়েছে নতুন ঘাস। তাতে খরচ হয়েছে ৩০ লক্ষ। প্রতিদিন দু’বেলা সেই ঘাসে জল দিতে হয়। সে কারণে সাধারণের প্রবেশ আটকাতে পার্কের গেটও তালাবন্ধ থাকে। এই পরিস্থিতিতে বাঘাযতীন পার্কে জনসভা করার অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল এ দিন সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। মেয়র হিসেবে অশোকবাবুই ওই সভার অনুমতি দিয়েছেন। তৃণমূল কাউন্সিলরদের কটাক্ষ, মেয়র শহরের সবুজ রক্ষার থেকেও রাজনীতি করাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। যদিও, অশোকবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘মাঠে জনসভা হলে ঘাসের কোনও ক্ষতি হবে না।’’

এ দিন রঞ্জনবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘অতীতে পার্কে আমাদের দলেরও সভা হয়েছে। তবে মাঠ সংস্কারের কাজ এখনও চলছে। মাঠ জুড়ে কচি সবুজ ঘাস। সেই ঘাস নষ্ট করে সভা হবে সেটা শুনেই শিউরে উঠেছি। আমাদের আর্জি মেয়র জনসভা অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান।’’ ভবিষ্যতে নাগরিক কনভেনশন ডেকে পার্কে সবরকম রাজনৈতিক সভা বন্ধের পক্ষেও সওয়াল করেছেন রঞ্জনবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘বাঘাযতীন পার্ক শহরের ফুসফুস। তাকে কোনওভাবে সংক্রমিত হতে দেওয়া যাবে না।’’

তৃণমূলের আর্জি জানানোর কিছু পরেই অবশ্য তা প্রত্যাখান করেছেন মেয়র অশোকবাবু। মেয়রের দাবি, গত ৫০ বছর ধরে পার্কে সভা হচ্ছে। এই মাঠে দুটি পুজোও হয়েছে। তাতে মাঠের ক্ষতি হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দল সভা করলে সভা নষ্ট হবে এটা ঠিক নয়। তৃণ-প্রেম নিয়ে অশোকবাবুর পাল্টা, ‘‘ব্রিগেড নিয়েও এক সময় এ ধরনের কথা উঠেছিল। তা ছাড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে যখন মুখ্যমন্ত্রীর সভা, উত্তরবঙ্গ উৎসব হল তখন সবুজ ধ্বংস নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি তো। আমরা বিরোধী দলে আছি বলেই সবুজ ধ্বংস হবে?’’ মেয়রের দাবি, যারা মাঠ নেবে মাঠ পরিষ্কার করা, মাঠের কিছু হলে দেখতে হবে তাদেরই। না হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’ মেয়রের দাবি, বাঘা যতীন পার্কে রবীন্দ্র মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে না এটা হতে পারে না।

ঘাস ধ্বংসের সঙ্গে ‘অসহিষ্ণুতা’কেও মিলিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি! মেয়রের বক্তব্যকে ‘অসহিষ্ণুতা’র উদাহরণ বলে পাল্টা দাবি করেছেন রঞ্জনবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘অশোকবাবু আমাদের কোনও কথাই শুনতে চাননি। আমরা অতীতের কথা বলিনি, বর্তমানের কথা বলেছি। মেয়র অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন বলেই সবুজ নষ্ট করেও সভা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন