বিদ্যানন্দপুর গ্রামে উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র রায়।
আগুন লাগার ঘটনার পরেই প্রশাসন তৎপর হওয়ায় ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও সব খুইয়ে দিশেহারা মালদহ হরিশ্চন্দ্রপুরের বিদ্যানন্দপুরের দুর্গত বাসিন্দারা। বুধবার দুপুরে এলাকার একটি বাড়ির রান্নাঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে ওই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে পথে বসেছেন গোটা গ্রামের আটশোর বেশি বাসিন্দা। পরনের পোশাক ছাড়া কিছু নেই অধিকাংশের। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় চার বছরের শিশু ও এক বৃদ্ধার। শতাধিক গবাদি পশুর মৃত্যু ছাড়াও আগুনে জখম হন কয়েকজন।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর ঘটনার পর ত্রাণের ত্রিপল, পোশাক বিলি করা হয়। টিফিন-সহ রাতেই শিবিরে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়ানো হয় দুর্গতদের। রাতে জেনারেটর দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। সকালেই বহরমপুর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল পিএইচই-র ট্যাঙ্কও। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে গ্রামে বসানো হচ্ছে দুটি সাবমার্সিবল পাম্প। টিফিনের পাশাপাশি দুপুর ও রাতে দুর্গতদের খাবার তৈরি হচ্ছে শিবিরে। চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে বলেন, “মহিলাদের কথা ভেবে এলাকায় কয়েকটি শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে দুর্গতকে মশারি দেওয়া হচ্ছে। বুধবার অগ্নিকাণ্ডের পরেই তার রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে পাঠানো হয়। এ দিনই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুমোদন মেলে।” আগুনে মৃতদের এক লক্ষ টাকা, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের ১৬ হাজার টাকা ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের আট হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বুধবার দুর্গত এলাকায় যান উত্তর মালদহের বিদায়ী সাংসদ কংগ্রেস প্রার্থী মৌসম বেনজির নুর, সিপিএম প্রার্থী খগেন মুর্মু, হরিশ্চন্দ্রপুরে ফব বিধায়ক তজমুল হোসেন ও চাঁচলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুব। এ দিন সকালে যান উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র রায়, সমাজবাদী প্রার্থী মিলন দাস।
দুপুরের রান্না চলছে আগুনে দুর্গতদের ত্রাণ শিবিরে।
বৃহস্পতিবার বিদ্যানন্দপুরে ছবি দু’টি তুলেছেন বাপি মজুমদার।
গত মঙ্গলবার রাতেই এলাকার শেখ রসুলের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। ছেলে নজমুল হকের বিয়ের টাকা, অলঙ্কার-সহ সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। খোলা আকাশের নীচে ত্রিপলের তলায় বসে ঘন ঘন চোখের জল মুছে চলেছেন নববধূ হুমেরা বিবি। রসুল এই দিন বলেন, “প্রশাসন পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজস্থানে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করে বহু কষ্টের রোজগারের সব শেষ হয়ে গেল।” বুধবার রাত থেকে ত্রিপলের তলায় রাত কাটানো রবিনা বিবি বলেন, “আমার ৬টা গবাদি পশু সহ সর্বস্ব পুড়েছে। স্বামী দিল্লিতে। ৩ ছেলেমেয়ে নিয়ে কী করব জানি না। তবে এই দুঃসময়ে প্রশাসন পাশে থেকে সব রকম সাহায্য করছে।”