শিলিগুড়ি ইস্টার্ন বাইপাসের গোরা মোড় এলাকায় পুলিশের জিপ ঘিরে তাণ্ডব।
জিপ থেকে বার করে পুলিশকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল সমর্থিত পিকআপ ভ্যান চালক সংগঠনের সদস্যদের একাংশের বিরুদ্ধে। ওই পুলিশ কর্মীরা চালকদের কাছ থেকে জোর করে তোলা আদায় করছিলেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে ভক্তিনগর থানার সাহুডাঙ্গির গোরা মোড় এলাকায়।
উত্তেজিত চালকদের হাত থেকে বাঁচতে এলাকার দোকান ও বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকেন পুলিশ কর্মীরা। চালকদের হাতে মার খেয়ে আহত হন মোট পাঁচ জন পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ারেরা। শিলিগুড়ি পুলিশের এসিপি বিশ্বনাথ হালদারের নির্দেশে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এর পরে পুলিশকে মারধর করার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। সকলেই তৃণমূল সংগঠনের সদস্য বলে চালকেরা জানিয়েছেন। আটক করা হয় দুটি পিকআপ ভ্যানও। ঘটনায় ঘন্টাখানেক আটকে যায় গোরা মোড় লাগোয়া রাজ্য সড়ক। ওই রাস্তায় জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ির দিক থেকে আসা গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে।
তোলা আদায় ও লাঠিচার্জের কথা অস্বীকার করেন এসিপি। তিনি বলেন, “পুলিশের সঙ্গে চালকদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। তবে লাঠিচার্জ হয়নি। অভিযোগ থাকলে আগেই চালকদের পুলিশের উপর মহলে বিষয়টি জানাতে হত। তোলা আদায় হয় না।”
ঘটনার তৃণমূলের নাম জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তি বেড়েছে দলে। দেখা দিয়েছে গোষ্ঠী কোন্দলও। পুলিশের তোলাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানও। বাসিন্দাদের দাবি, নিউ জলপাইগুড়ি ও আশিঘর মোড়ের পিকআপ ভ্যান চালকদের সংগঠনের সদস্যরাই মারধরে যুক্ত। ঘটনার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি কী হয়েছে।”
অবরোধকারীদের পুলিশের মার।
দলীয় সূত্রের খবর, ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় ওই গাড়ির চালকদের নিয়ন্ত্রণ করেন তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী। এনজেপি এলাকার আইএনটিটিইউসি-র বিজন নন্দী। অন্যদিকে, আশিঘর এলাকায় সংগঠনটি দেখভাল করেন পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা। ঘটনার তৃণমূলের নাম জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বিজনবাবু বক্তব্য, “মারধরের ঘটনা শুনেছি। তবে ওরা সকলেই আশিঘর পিক আপ ভ্যান সংগঠনের চালক।” আর রঞ্জনবাবু বলেন, “ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় পুলিশের তোলাবাজিতে অতিষ্ঠ গাড়ির চালকেরা। তবে কারা মারধর করেছে জানি না। আমার এলাকার চালকদের ইচ্ছাকৃত এতে জড়ানো হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ গোরা মোড় এলাকায় তল্লাশির নাম করে তোলা আদায় করার অভিযোগ ওঠে কয়েকজন পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে। একটি সব্জি বোঝাই পিক আপ ভ্যান থেকে জোর করে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই চালকের পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বার করার চেষ্টা করা হয়। চালক ক্ষেপে গিয়ে পাল্টা ধাক্কাধাক্কি করেন। সেই সময় টহলদারি জিপের পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই চালককে মারধর করে বলে অভিযোগ। চালক টেলিফোন তাঁর পরিচিতদের বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে ৭০ জনের মত চালক সেখানে চলে আসেন। সকলেই তৃণমূল সংগঠনের সদস্য। তার পরে শুরু হয় পুলিশকে বেধড়ক মারধর। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ কর্মীরা সেলুন, মিস্টির দোকান ছাড়া এলাকার বাড়িতে ঢুকে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে এলাকায় আসে র্যাফও। তার পরে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে বলে অভিযোগ।
ফুলবাড়ি-১-এর পঞ্চায়েত প্রধান তপন সিংহ বলেন, “পুলিশের ওই এলাকা থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ শুনেছি। এদিন কী হয়েছে জানি না।” পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীর গায়ে হাত দেওয়া, রাজ্য সড়ক অবরোধ ও মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে ধৃতদের বিরুদ্ধে।
বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।