পাহাড়ে তুষারপাত আর সমতলে শিলাবৃষ্টি। জোড়া ধাক্কায় একলাফে তাপমাত্রা কমল উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে কালো মেঘে ঢেকে যায় ডুয়ার্সের আকাশ। কনকনে হাওয়া বইতে থাকে পাহাড়ি এলাকায়। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তুষারপাত শুরু হয় দার্জিলিঙে। ঘণ্টাখানেক ধরে তুষারপাত চলতে থাকায় অন্তত ছ’ইঞ্চি বরফ জমে রাস্তায়। বুধবার থেকেই তুষারপাত শুরু হয় সিকিমের ছাঙ্গুতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাঙ্গু, নাথুলায় অন্তত ৫ ফুট তুষার স্তর দেখা গিয়েছে। বুধবার রাতে ছাঙ্গুতে আটকে পড়েন প্রায় দু’শো পর্যটকের একটি দল।
প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, সেনা জওয়ানরাই পর্যটকদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার পর্যটকদের ছাঙ্গু যাওয়ার অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। সিকিমের অন্যত্র তুষারপাত হলেও, রাজধানী গ্যাংটকে এ দিন বিকেলে থেকে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। শিলাবৃষ্টি হয়েছে দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, সেবক, জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা, মালবাজারেও। যার জেরে বিকেলের পর থেকেই সর্বত্র তাপমাত্রা শুরু করে। বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত অন্তত ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে যায় বলে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।
বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে দার্জিলিঙের টাইগার হিলে তুষারপাত শুরু হয়। তুষার জমে যাওয়ায় অর্ধেক পথ গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বাধ্য হন পর্যটকরা। হাঁটাপথেই তাঁদের পৌঁছতে হয় সান্দাকফুতে। গত দু’দিন ধরে দুর্যোগ চলছে সিকিমেও। ঘন কুয়াশা, তুষারপাত তো ছিলই, রাস্তায় প্রায় তিন ফুট উঁচু বরফ পড়ায় আটকে পড়েন দেশ-বিদেশের শতাধিক পর্যটক। বুধবার বিকেলের পর ছাঙ্গু ও নাথুলা থেকে ফেরার পথে ১৭ মাইল এলাকায় আটকে পড়েন তাঁরা। পরে সেনাছাউনিতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। বৃহস্পতিবার ভোরে রাস্তা পরিষ্কার করে তাঁদের গ্যাংটকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ঘটনার জেরে শুক্রবারও ছাঙ্গু, নাথুলার যাওয়ার জন্য কোনও পারমিট দেয়নি সিকিম পুলিশ। দিনভর হালকা তুষারপাতের পর সন্ধ্যা নাগাদ প্রচন্ড তুষারপাত শুরু হয়েছে ওই এলাকায়। সেনা ও পুলিশ সূত্রের খবর, বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পাঁচ ফুট পর্যন্ত বরফ জমে গিয়েছে। পর্যটকদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই পারমিট দেওয়া হয়নি বলে পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার এবং এলাকার পরিস্থিতি দেখার পর পরবর্তীতে পারমিট দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমের উপরে একটি শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝা অবস্থান করাতেই শিলাবৃষ্টি ও তুষারপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া চলবে। তাপমাত্রাও কমতে থাকবে।”