তিস্তার চরে ‘সৃষ্টি’র কাঠের হাতি

পেল্লাই হাতি তিস্তার চরে। নড়াচড়া নেই। ঠায় দাঁড়িয়ে কাশবনের পাশে ধান খেতে। জলপাইগুড়ি শহরের জুবুলি পার্ক লাগোয়া রাস্তায় পা রাখতে নজরে পড়বে ওটা। তবে জ্যান্ত নয়। নদীর জলে ভেসে আসা গাছের ডালের টুকরো দিয়ে তৈরি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০২:০১
Share:

১১ ফুট উঁচু কাঠের হাতি দেখতে এসছেন পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু। ছবি: সন্দীপ পাল।

পেল্লাই হাতি তিস্তার চরে। নড়াচড়া নেই। ঠায় দাঁড়িয়ে কাশবনের পাশে ধান খেতে। জলপাইগুড়ি শহরের জুবুলি পার্ক লাগোয়া রাস্তায় পা রাখতে নজরে পড়বে ওটা। তবে জ্যান্ত নয়। নদীর জলে ভেসে আসা গাছের ডালের টুকরো দিয়ে তৈরি। পর্যটক টানতে এবং বন্যপ্রাণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সৃষ্টি’-র উদ্যোগে মাত্র ষোল ঘণ্টার পরিশ্রমে ১১ ফুট উঁচু ওই হাতি গড়া হয়েছে। রবিবার ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ওয়েলফেয়ার ডে’ উপলক্ষে উত্তরবঙ্গের বনপাল (বন্যপ্রাণ) তাপস দাস কাঠের ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেন। শুক্রবার সকাল থেকে হাতি তৈরির কাজ শুরু হয়। উপকরণ বলতে তিস্তার জলে ভেসে আসা টুকরো গাছের ডাল। করাত, বাটাল ও হাতুরি দিয়ে সেগুলি একের পর এক গেঁথে তৈরি করা হয়েছে বিরাট দাঁতালের অবয়ব। বড় দুটি কান, শুঁড়, লেজ—নিখুঁত হাতের কাজ। প্রথমদিন ভাস্কর বিশ্বজিৎ ঘোষের নেতৃত্বে ছয়জন প্রায় ছয় ঘণ্টা পরিশ্রম করেন। শনিবার শেষ দিনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টায় চোখ ধাঁধান ভাস্কর্য উঠে আসে। দূর থেকে মনে হয় বুনো হাতি শুঁড় নামিয়ে ধান খেতে দাঁড়িয়ে। এগারো ফুট উঁচু দাঁতালটি গড়তে দুই টন টুকরো গাছের ডাল লেগেছে। সেগুলি ৫৫ কেজি কাঁটা-তার দিয়ে গাঁথা হয়। ভাস্কর বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি এর আগে ভারতের কোথাও নদী চরে এভাবে জলে ভেসে আসা গাছের ডালের টুকরো দিয়ে এত বড় মাপের ভাস্কর্যের কাজ হয়নি। শুধু তাই নয়। এগারো ঘণ্টার মধ্যে শেষ করাও রেকর্ড।”

Advertisement

ভাস্কর্য দেখে অবাক হয়েছেন বনপাল। তিনি বলেন, “এত নিখুঁত হাতের কাজ হতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।” শুধু বনপাল কেন! বিশ্বজিৎবাবুর হাতের কাজ দেখে চোখ ফেরাতে পারেনি অনেকেই। এদিন ভিড় করে দাঁতালের ছবি ক্যামেরা বন্দি করার হিরিক পরে যায়। কেন হঠাৎ নদী চরে কাঠের টুকরো দিয়ে হাতির মূর্তি তৈরির উদ্যোগ? স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সৃষ্টির কর্ণধার শুভেন্দু বসু জানান, জুবুলি পার্ক এলাকায় পর্যটকরা বেড়াতে যান। অনেকে নৌকা বিহার করেন। আকর্ষণীয় আরও কিছু থাকলে ভিড় বাড়বে চিন্তা করে ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি বলেন, “বন্যপ্রাণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি জলপাইগুড়ি শহরের ভাস্কররা যে পিছিয়ে নেই সেই বার্তাও পর্যটকদের সামনে কাজের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।” অভিনব কাজে হাত লাগিয়ে খুশি ভাস্করের সহযোগী সাধন সরকার, সনৎ দাস, ফণীরাম মণ্ডল, রাজদীপ চক্রবর্তী এবং পরিমল মণ্ডল। তাঁরা জানান, মূর্তি রং করা হবে না। বৃষ্টিতে যত ভিজবে ততই উজ্জ্বল মনে হবে। ভাস্কর বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “মনে করলে প্রশাসনের কর্তারা হাতিটি যেন অন্য কোথাও নিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন