তদন্তে টালবাহানার অভিযোগ অব্যাহত, সই সংগ্রহে পড়শিরা

গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনে বাবা-মা ও কিশোরী মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবিতে সই সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এলাকার লোকজন। শিলিগুড়ির প্রধাননগরের চম্পাসারি এলাকায় গত ২ মে ঘটনাটি ঘটে। উত্তম সাহা, তাঁর স্ত্রী আদরীদেবী এবং কিশোরী মেয়ে বন্দনা আগুনে পুড়ে মারা যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০১:৩৫
Share:

গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনে বাবা-মা ও কিশোরী মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবিতে সই সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এলাকার লোকজন। শিলিগুড়ির প্রধাননগরের চম্পাসারি এলাকায় গত ২ মে ঘটনাটি ঘটে। উত্তম সাহা, তাঁর স্ত্রী আদরীদেবী এবং কিশোরী মেয়ে বন্দনা আগুনে পুড়ে মারা যান। ওই ঘটনার তদন্তে গড়িমসি হচ্ছে বলে গোড়া থেকেই অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন-দমকলের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও গ্যাস সিলিন্ডারের কোনও ত্রুটি ছিল কি না সেই ধোঁয়াশা কাটেনি। ফলে, মৃতের বাড়ির লোকজন ও পড়শিরা সই সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মানবাধিকার কমিশনের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই সঙ্গে গোটা বিষয়টি জানিয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে বলে বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন।

Advertisement

বাড়ির লোকের দাবি, মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে উত্তমবাবু গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লাগে বলে দাবি করেন। তাই গ্যাস সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো জরুরি বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু, ঘটনার পরে তিন সপ্তাহ গড়াতে চললেও পুলিশ বিশেষজ্ঞ দিয়ে সিলিন্ডারটি পরীক্ষা করাতে পারেনি কেন তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এতদিনের মধ্যেও গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েলের তরফেও কেন তদন্ত করা হয়নি সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না মৃতের পরিবারের লোক। এমনকী, দমকলের তরফে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পুলিশ-প্রশাসন বা ইন্ডিয়ান অয়েলের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হয়নি তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন মৃতের পড়শিরা।

মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বৃক্ষ-পশু-মানুষ বন্ধু সমিতি। সংগঠনের আইনি পরামর্শদাতা অলকেশ চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, “চম্পাসারিতে সিলিন্ডার থেকে আগুনের ঘটনার পরে প্রধাননগর থানায় অভিযোগ করা হয়। তার পরেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” পুলিশ কমিশনার জগমোহনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি তথ্য মিলেছে। তদন্ত অনেকটা এগিয়েছে। তা সম্পূর্ণ হলেই সে সম্বন্ধে জানানো হবে।”

Advertisement

ইন্ডিয়ান অয়েল সূত্রে জানানো হয়েছে, সংযোগের নথিবদ্ধ ঠিকানায় ছাড়া অন্যত্র সিলিন্ডার দেওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে ঘটনাটি কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে সংস্থার তরফেও পৃথক তদন্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে পরিবারটি অন্যের সিলিন্ডার ব্যবহার করছিল বলে জানা গিয়েছে। এই সময়ে অন্তত দশ বার সিলিন্ডার ‘হোম ডেলিভারি’ হলেও কেন সরবারহকারী সংস্থার নজরে তা এল না, তা নিয়েই ইন্ডিয়ান অয়েলের আধিকারিকদের মধ্যে ধন্দ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে এক বারও কী সিলিন্ডার সংযোগের নথিবদ্ধ ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়নি সে প্রশ্নও তুলেছেন আধিকারিকরা।

যে ডিলারের থেকে উত্তমবাবুর বাড়িতে সিলিন্ডার গিয়েছিল সেটি প্রধাননগর এলাকার। পুলিশের সন্দেহ, অন্য একজনের সংযোগ ব্যবহার করতেন মৃত উত্তমবাবু। যা বেআইনি। সে ক্ষেত্রে দিনের পর দিন কী ভাবে অন্যের নামে সংযোগ ব্যবহার করে উত্তমবাবু সিলিন্ডার পেয়েছেন তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গ্যাস ডিলার সংগঠনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, কেউ নিজের সংযোগ অন্যকে ব্যবহার করতে দিয়েছে জানামাত্র পদক্ষেপ জরুরি। গ্যাস ডিলার সংস্থার কর্ণধার বাপি দাস বলেন, “আমি তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছি। কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি। আমাদের ত্রুটি নেই।’’

কিন্তু, গ্রাহকদের অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। তা হল, দিনের পর দিন উত্তমবাবুর কাছে গ্যাস সিলিন্ডার গেল কী ভাবে? কী ভাবে বুকিং হয়? মোবাইলে ‘বুক’ হয়ে থাকলে নম্বর কত? সরবরাহের সময়ে গ্রাহক হিসাবে কে সই করেছেন? এই সব ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে চান মৃতের পড়শিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন