এল কাছে

থিম না সাবেক সাজ, জল্পনা শহরে

দর্শকেরা চান। তাই থিম পুজোর পথে হাঁটতে চায় পুজো কমিটিগুলি। অথচ তাতেই আপত্তি মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকা ডেকোরেটারদের। এমনকী, কোনও থিমপুজোর দায়িত্বে থাকা কোনও শিল্পীর সঙ্গে কাজ করবেন না বলেও ‘হুমকি দিয়েছেন’ শিলিগুড়ির ডেকোরেটারেরা। পুজো এ বার তাই কী আঙ্গিকে হয় তাই জল্পনার বিষয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩১
Share:

দর্শকেরা চান। তাই থিম পুজোর পথে হাঁটতে চায় পুজো কমিটিগুলি। অথচ তাতেই আপত্তি মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে থাকা ডেকোরেটারদের। এমনকী, কোনও থিমপুজোর দায়িত্বে থাকা কোনও শিল্পীর সঙ্গে কাজ করবেন না বলেও ‘হুমকি দিয়েছেন’ শিলিগুড়ির ডেকোরেটারেরা। পুজো এ বার তাই কী আঙ্গিকে হয় তাই জল্পনার বিষয়।

Advertisement

থিমের মণ্ডপ তৈরি করতে বাঁশ বা কাপড়ের কাজের খুব একটা বেশি প্রয়োজন হয় না। আর সেই কারণেই ডেকোরেটারদেরও প্রথমে ডাকও পড়ে না বলে তাঁদের অভিযোগ। থিম ফুটিয়ে তোলার দায়িত্বে থাকা শিল্পীর পরিকল্পনা মতো মণ্ডপের কাজ হয়। শেষে সামান্য কিছু পাটাতন, মণ্ডপে ত্রিপল বিছিয়ে দেওয়া অথবা কমিটির বুথ অফিস তৈরির জন্য-ই এখন কমিটিগুলি তাঁদের ডাকছে বলে ডেকোরেটারদেরা ক্ষোভ জানাচ্ছেন। থিমপুজোয় পুরস্কার জিতলেও পরে টাকা মেটাতেও শিল্পী বা বাইরের সংস্থা টালবাহানা করে বলে অভিযোগ। তাই সম্প্রতি শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের একটি হোটেলে রীতিমতো সভা করে, ডেকোরেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ বেঙ্গলের সদস্যেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোনও ‘শিল্পী’র সঙ্গে তাঁরা মণ্ডপের কাজ করবেন না। প্রথমেই সরাসরি পুজো কমিটিকেই তাঁদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে।

কিন্তু, থিমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাশের পাড়াকে টেক্কা দিতে বিসর্জনের পর থেকেই বিগ বাজেটের পুজো কমিটির আগামী বারের থিম-ভাবনা শুরু হয়ে যায়। ও-পাড়ায় থিম রাজস্থান হলে, এ-পাড়ায় লখনউ। টেরাকোটার চমকের পরে শিসমহল। কলকাতার মতো শিলিগুড়িতেও এখন বিগ বাজেটের পুজোয় থিমের-ই প্রাধান্য। এ বারে তাই সেই থিম নিয়েই টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

Advertisement

ডেকোরেটার মালিকেরা বৈঠকের শুরু থেকেই সকলে থিম-পুজোর বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। সভার বিবৃতিতেও, থিম পুজোর ‘বিরোধিতায় সরব’ হওয়ার ডাক দেওয়া হয়। তবে থিম পুজো যে দর্শকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সেটিও অস্বীকার করতে পারেননি সদস্যরা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোপাল সরকার বলেন, “থিমের পুজো খুবই জনপ্রিয় তা নিয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু তাই বলে আমরা তো আর পরিবার নিয়ে পথে বসতে পারি না। এখন দেখা যাচ্ছে কোনও পুজো কমিটি মণ্ডপের জন্য শিল্পীকে ৫ লক্ষ টাকার বরাত দেয়। আর সেই শিল্পী নিজের মতো করে মণ্ডপ তৈরি করেন। ছোট কাজ করার জন্য আমাদের ডাক পড়ে। মোট বরাতের বড়জোর ১০ শতাংশ কাজ হয়ত পাই।” এই সব সমস্যা সমাধানের পথও সংগঠন বের করেছে। গোপালবাবু বলেন, “ক্লাব এবং কমিটিগুলি সরাসরি আমাদের সঙ্গে চুক্তি করবে। মাঝখানে কোনও শিল্পী থাকবেন না। প্রথমেই কতটা কাজ, কী ভাবে করতে হবে তা স্থির করে নিতে হবে। নয়তো আমরা এ বার আর কাজ করব না।”

শিলিগুড়ির বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, থিমের মণ্ডপ রূপায়ণের ভার থাকে শিল্পী বা ইভেন্ট ম্যানেজারদের উপরে। তাঁরাই ঠিক করেন, ডেকোরেটারদের প্রয়োজন রয়েছে কিনা। তাই সরাসরি ডেকোরেটারদের সঙ্গে চুক্তি করা কোনও ভাবে সম্ভব নয় বলে পুজোর কর্মকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন।

শিলিগুড়ি অন্যতম একটি বিগ বাজেটের পুজো কমিটির সম্পাদক পার্থ দে বলেন, “থিম নিয়ে সরাসরি ডেকোরেটারদের সঙ্গে চুক্তি হবে কী করে, এই ভার তো শিল্পী বা ইভেন্ট ম্যানেজারদের। তাই এই প্রস্তাব সম্ভব নয়। তবে এ নিয়ে যদি সমস্যা হয়। তবে পুজো কমিটিগুলিকে নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসতে হবে। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি জানাব।” ডেকোরেটারদের সংগঠন অবশ্য দাবি করেছে, উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি হওয়ার পরে অবশ্য শিল্পীর নির্দেশ শুনতে কোনও আপত্তি নেই। গোপালবাবু জানিয়েছে,“আমরাও চাই থিম হোক। আমাদের পেশা বাঁচুক।”

তবে কি এলাকার ডেকোরেটারদের এ ‘বিদ্রোহের’ জেরে এ বার শিলিগুড়ি শহরে থিমের বদলে সাবেক পুজোর আধিক্যই বেড়ে যাবে? তা জানতেই অপেক্ষায় রয়েছেন শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন