শিলিগুড়ির সেবক রোডের যুবক দীপঙ্কর রায়ের খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে দিনভর জেরার পরে রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সোনু প্রধান। তাঁর বাড়ি শিলিগুড়ির সেবক রোডেরই প্রকাশনগরে। এদিন সকালে তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে ভক্তিনগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে গোয়েন্দা বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। খুনের মামলায় করা অভিযোগে তার নাম ছিল বলে জানা গিয়েছে। অভিযুক্ত মনকুমার ও বাকিদের সঙ্গে এর যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে এরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিন এলাকায় দেখতে পেয়েই পুলিশ তাকে আটক করে। শালুগাড়া মোড়ে সিকিম গাড়ির সিণ্ডিকেটের সঙ্গে এই ব্যক্তিও যুক্ত ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এদিন বিকেলে খুনে মূল অভিযুক্ত মনকুমারের বাড়ি গিয়েছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তার বাড়ি রোষের মুখে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে। সেখানে অভিযুক্তের স্ত্রী ও বাচ্চাদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ঘটনার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকেই দায়ী করেন তিনি। মন্ত্রী অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “সোনু প্রধান নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।”
পুলিশের চারটি দল আলাদাভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ভক্তিনগর থানার দুটি, সিআইডির একটি এবং শিলিগুড়ি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ খোঁজ চালাচ্ছে। এসিপি ডিডি, তপন আলো মিত্র জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি সূত্র হাতে এসেছে। তার ভিত্তিতেই এদিন একজনকে আটক করা হয়েছে। শীঘ্রই বাকি অভিযুক্তদের ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনকুমারের পুড়ে যাওয়া বাড়ি ঘুরে দেখেন অশোকবাবুরা। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন। আগুন লাগানোর ঘটনায় সরাসরি দায়ী করেন মন্ত্রীকেই। তাঁর অভিযোগ, “আর্থিক লেনদেন নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। তবে পুলিশের কাছে ঘটনার মূল কারণ ও অভিযুক্তদের সকলকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।” তিনি অবশ্য এদিন সময়ের অভাবে দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত দীপঙ্করের বাড়িতে যেতে পারেননি বলে জানান। তবে পরে যাবেন বলে জানান। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর অভিযোগ, “ওঁর আমলেই অনেক খুন হয়েছে। ওঁর কথার কোনও গুরুত্ব আমাদের কাছে নেই।”
৪ জানুয়ারি, রবিবার শিলিগুড়ির সেবক রোড লাগোয়া মহানন্দা নদীর চর থেকে উদ্ধার হয় সেবক রোডেরই সরকারপাড়ার বাসিন্দা দীপঙ্কর রায়ের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এলাকাবাসীর মধ্যে। ভক্তিনগর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবার ও স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। খুন হওয়া যুবক ও যাঁরা তাঁকে খুন করেছেন তাঁদের সকলেই তৃণমূল কর্মী সমর্থক বলে জানা গিয়েছে। মূলত সিণ্ডিকেট ব্যবসা ও তাঁর আড়ালে মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েই ওই যুবক খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ। ঘটনার পরে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ দেখা যায়। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আগুন লাগিয়ে দেন তৃণমূল সমর্থকরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় খুনে মূল অভিযুক্ত মনকুমারের বাড়ি ও সিণ্ডিকেটের অফিস। ঘন্টাখানেক তাণ্ডব চলার পর ‘র্যাফ’ নাামানো হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।