দাম পড়ায় পুজোর মুখে চিন্তায় পাট চাষিরা

মরসুমের শুরুতে জেলার বিভিন্ন হাটে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কুইন্টাল পাটের দাম মিললেও অগস্টের শুরু থেকে ওই দাম পড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর মুখে উদ্বেগে কোচবিহারের লক্ষাধিক পাট চাষি। বাম কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন হাটে কুইন্টাল প্রতি পাটের দাম গুণগত মানের ভিত্তিতে দু’ হাজার টাকা থেকে ২৬০০ টাকায় নেমে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৪
Share:

মরসুমের শুরুতে জেলার বিভিন্ন হাটে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি কুইন্টাল পাটের দাম মিললেও অগস্টের শুরু থেকে ওই দাম পড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর মুখে উদ্বেগে কোচবিহারের লক্ষাধিক পাট চাষি। বাম কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন হাটে কুইন্টাল প্রতি পাটের দাম গুণগত মানের ভিত্তিতে দু’ হাজার টাকা থেকে ২৬০০ টাকায় নেমে এসেছে। এই সমস্যা মেটাতে জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে জেলার কৃষকদের থেকে ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা প্রতি কুইন্টাল সহায়ক মূল্যে পাট কেনার দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

কৃষি বিপণন দফতর অবশ্য দাবি করেছে, জেলার সমস্ত বাজারেই সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম ২৪০০ টাকা প্রতি কুইন্টালের বেশি দামে পাট বিক্রি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকে বাজার দর কম হলে তবেই জেসিআইয়ের পাট কেনার কথা। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কৃষি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় ফি বছর গড়ে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। পাট উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত পাটের বেশির ভাগই দক্ষিণবঙ্গ এবং কটক, কানপুর, গোরখপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হয়। ফি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে গড়ে চার হাজার কুইন্টাল পাট সেখানে পাঠানো হতো।

Advertisement

এবার অগস্টের শুরু থেকেই বাইরের ক্রেতা বা তাদের প্রতিনিধিদের দেখা মিলছে না সেভাবে। সেই সুযোগে প্রতিযোগিতা না থাকায় ফড়েদের একাংশের মর্জিমাফিক বাজার দর নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। যার জেরে জেলায় পাটের বাজার দর ক্রমশ নামছে বলে অভিযোগ। ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিষাণ সভার কোচবিহার জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “পাটের দাম প্রতি হাটে কমছে। কোচবিহারের ডোডেয়ার হাটে সর্বনিম্ন দু’হাজার টাকা কুইন্টাল দামে পাট বিক্রি হয়েছে। এরকম চললে পাট চাষিরা সর্বনাশের মুখে পড়বেন। অথচ জেসিআই পাট কিনতে নামছে না।” সিপিএম প্রভাবিত প্রাদেশিক কৃষক সভার কোচবিহার জেলা সহকারি সম্পাদক তমসের আলি বলেন, “দুর্বিষহ অবস্থা পাটের। দাম যেভাবে নামছে তাতে উৎপাদন খরচ উঠবে না। কুইন্টাল প্রতি পাঁচ হাজার টাকা দামে পাট কেনার দাবিতে জোরদার আন্দোলনে নামছি।” তৃণমূল যুব কংগ্রসের তরফেও ওই পাট চাষিদের স্বার্থে কোচবিহারে বিক্ষোভ কর্মসূচি করা হয়েছে।

কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে? ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বেহাল সড়ক পথের যন্ত্রণায় দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি ভিনরাজ্যের কারখানা মালিকদের একাংশও কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গে যেতে আগ্রহী নন। মরসুমের শুরুতে চাহিদা থাকায় কোচবিহার থেকে পাট নিয়ে গেলেও এখন তারা আর আসতে চাইছেন না। উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সদস্য রাণা গোস্বামী বলেন, “সড়ক পথে ট্রাক ছাড়া পাট পরিবহণের বিকল্প ব্যবস্থা নেই। অথচ খানাখন্দে ভরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। ৩১ সি জাতীয় সড়ক সহ জেলায় যোগাযোগের বিভিন্ন রাস্তা মেরামত হচ্ছে না।”এই অবস্থায়, বাড়তি পরিবহণ খরচ ও সময় এড়াতে এখন কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গ থেকেই পাট কেনায় উৎসাহ হারিয়েছেন ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীরা। দিনহাটা জুট মিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৃষ্ণ সারদা বলেন, “ প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ায় পাটের কদর এখন অনেকটাই কমে গেছে। বহু পাট কল বন্ধ হয়েছে। এবার বেহাল রাস্তাঘাটের জন্য অন্তত ৩০ শতাংশ পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাইরের ক্রেতারা একদমই আসতে চাইছেন না।” কোচবিহারের ঘুঘুমারির বাসিন্দা এক পাট চাষি নন্দ বর্মন বলেন, “চার বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম। দশ কুইন্টাল পাট উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম পাচ্ছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন