দুর্দশার দায় সরকারের, দাবি শ্রমিক-যৌথমঞ্চে

বন্ধ এবং অচল বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য রাজ্য সরকারকেই বিঁধল শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ। রবিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে কনভেনশন করে তাঁরা জানিয়েছেন রাজ্য সরকার এবং মালিকপক্ষ মিলিত হয়ে শ্রমিকদের খাদ্য অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০২
Share:

যৌথমঞ্চের সভা। —নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ এবং অচল বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য রাজ্য সরকারকেই বিঁধল শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ। রবিবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে কনভেনশন করে তাঁরা জানিয়েছেন রাজ্য সরকার এবং মালিকপক্ষ মিলিত হয়ে শ্রমিকদের খাদ্য অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। মজুরির একাংশ রেশনের মাধ্যমে দেওয়ার যে ব্যবস্থা, তা বন্ধ করে প্রকৃতি মজুরি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

যৌথমঞ্চের হুঁশিয়ারি, এ ভাবে শ্রমিকদের প্রতি বঞ্চনা করা হচ্ছে। তাঁদের প্রাপ্য অধিকার লুঠ করা হচ্ছে। তা মেনে নেওয়া হবে না। মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ন্যূনতম মজুরি চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। ১৭ ফেব্রুয়ারি গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই বাগানের বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন, শ্রমিক পরিবার এবং শ্রমিকদের আন্দোলনের পাশে যারা রয়েছেন তাঁরা সকলে মিলে এলাকার সরকারি দফতরগুলির সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাবেন। স্মারকলিপি দেবেন।

যৌথমঞ্চের সঙ্গে রয়েছে ২৪টি শ্রমিক সংগঠন। যৌথমঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক থাকতে হবে। চোলাই খেয়ে, মদ খেয়ে মরলে ৫ লক্ষ, ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। অথচ রাজ্যের গাফিলতির জন্য মালিকদের অন্যায়ে বন্ধ এবং অচল চা বাগানের শ্রমিকেরা না খেতে পেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। তাঁদের পাশে সরকার দাঁড়াবে না এটা হতে পারে না। সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে।’’ চা বাগান মালিকদের একাংশ অবশ্য ওই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, রাজ্য সরকার বিচার বিবেচনা করেই কাজ করছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

Advertisement

যৌথমঞ্চের দাবি, ত্রিপুরা, কেরলা, তামিলনাড়ুতেও চা শিল্প রয়েছে। সেখানে মালিকদের অত্যাচারের মুখে পড়ে না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় শ্রমিক বা তাঁদের পরিবারের লোকেরা এ ভাবে মারা যাচ্ছেন না। এখানে রাজ্য সরকার উদাসীন। মালিকপক্ষের একাংশ সঠিক ভূমিকা পালন করছেন না। রাজ্য সরকার ওই সমস্ত মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে উদাসীন।

যৌথমঞ্চের তরফে মণিকুমার ডারনাল, জিয়াউলবাবুরা জানান, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। একটি শিল্পগোষ্ঠীর ৬টি বাগানের পরিচালনার দায়িত্ব টি বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে। তাঁরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। পরের দিন রাজ্যের এক সচিব তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাতে মালিকপক্ষ সুবিধা পেয়ে যায়। যৌথমঞ্চের দাবি, এটা হতে দেওয়া চলবে না। রাজ্য এবং কেন্দ্র যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা নিক। সেই সঙ্গে কোনও বিশেষ দিক থেকে ভেবে নয় সার্বিক ভাবে সমস্ত বন্ধ এবং অচল চা বাগানগুলির ক্ষেত্রেই এই ব্যবস্থা কার্যকর করা হোক। আগামী ১,৩,৬,৮,১০ এবং ১৩ মার্চ চা বাগান অধ্যুষিত এলাকার বিভিন্ন স্থানে চা শ্রমিকরা তাঁদের সঙ্গে বাসিন্দাদের নিয়ে কনভেনশন করবেন। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনও যৌথমঞ্চের দাবির সঙ্গে সহমত। তাঁদেরও সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকতেই পারেন। কিন্তু শ্রমিকদের বাঁচার আন্দোলনে এই ঐক্য যাতে নষ্ট না হয়, এ দিন সে ব্যাপারে বিভিন্ন সংগঠনকেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন