দুর্নীতিতে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, দাবি এসজেডিএ-র প্রাক্তন বাস্তুকারের

মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে দুটি পাম্প হাইজ তৈরির কাজে ৩ কোটি টাকা নয় ছয়ের যে অভিযোগ উঠেছে তাতে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করলেন এসজেডিএ’র প্রাক্তন বাস্তুকার জ্যোতির্ময় মজুমদার। তাঁর দাবি, কোনও রকম অন্যায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। বরং দুর্নীতির আভাস পেয়ে তিনি দফতরের কাজ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৯
Share:

মহানন্দা নিকাশি প্রকল্পে দুটি পাম্প হাইজ তৈরির কাজে ৩ কোটি টাকা নয় ছয়ের যে অভিযোগ উঠেছে তাতে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করলেন এসজেডিএ’র প্রাক্তন বাস্তুকার জ্যোতির্ময় মজুমদার। তাঁর দাবি, কোনও রকম অন্যায়ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। বরং দুর্নীতির আভাস পেয়ে তিনি দফতরের কাজ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমাকে কাজ না-ছাড়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে দেখে বিদেশে চাকরির কথা বলে এসজেডিএ থেকে সে সময় তিনি ইস্তফা দেন।

Advertisement

অভিযোগ উঠেছে, তার সময় ২০১২ সালে এসজেডিএ’র উদ্যোগে ওই প্রকল্প হয়েছে। দু’টি পাম্প হাউজ তৈরির জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প মেশিন নকশায় ব্যবহার করে প্রকল্পের ব্যায় কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেখান হয় বলে অভিযোগ। অডিট রিপোর্টে সে ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকী নগরোন্নয়ন দফতরে অভিযোগ পৌঁছলে তারাও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প মেশিন কেনার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান। জ্যেতির্ময়বাবুর দাবি নিয়ে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ অবশ্য কিছু বলতে চাননি। দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হবে।

জ্যোতির্ময়বাবু অবশ্য পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্যের সময় প্রথম মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে ৩ টি পাম্প হাউজ তৈরির জন্য ডিপিআর (ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি করা হয়েছিল। ইটেন্ডার প্রক্রিয়া তখন ছিল না বলে ‘টাইপ’ করে প্রয়োজনে হাতে লিখেই নথি তৈরি করতে হত। ১ নম্বর পাম্প হাউজ তৈরির কথা ছিল কিরণ চন্দ্র শ্মশান ঘাটের কাছে। কিন্তু সেখানে পাইপ পাতার সমস্যার জন্য পরবর্তীতে ওই পাম্প হাউজ তৈরির বিষয়টি বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে ফুলবাড়ি এবং নৌকাঘাট এলাকায় বাকি দুটি পাম্প হাউজ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো বাজেট কমার কথা বলে দাবি করেন জ্যোতির্ময়বাবু। তাঁর কথায়, তিনটি পাম্প হাইজের ‘সিভিল ওয়ার্ক’ বাদ দিয়ে ‘ইলেকট্রিক্যাল’ কাজের জন্য ১০ কোটি টাকা আলাদা ধরা হয়েছিল। কিন্তু সিভিল ওয়ার্কে মাত্রাতিরিক্ত টাকা খরচ করা হয়েছিল। সে জন্য ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্ক থেকে বরাদ্দ কমিয়ে সেই টাকা মেলাতেই কম শক্তি সম্পন্ন পাম্প কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তা নিয়ে জোতির্ময়বাবু আপত্তি তুলেছিলেন বলেও দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, “সে সময় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে ছোট পাম্প বসানোর বিষয়টি মেনে নিতে হয়েছিল। তার জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৫ কোটির মতো। তবে ২০১২ সালে নতুন করে ই-টেন্ডার করে আগের চেয়ে খরচ কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। অথচ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ তুলছেন।”

Advertisement

এসজেডিএ’র আধিকারিকরা অবশ্য সম্প্রতি অভিযোগে জানিয়েছেন, ওই দুটি পাম্প হাউজ তৈরির প্রকল্পে কলকাতার একটি সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছিল। ওই সংস্থা যন্ত্রাংশ সরবরাহ বা কাজ সম্পূর্ণ করেননি। অথচ দফতরের আধিকারিকরা একাংশ কাগজে কলমে কাজ হয়েছে বলে দেখিয়্ েওই সংস্থাকে ৩ কোটি টাকা মিটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এসজেডিএ’র ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র জোতির্ময়বাবুর দাবি, ১১৪ বোর্ডে মিটিংয়ে সমস্ত কাজ হয়েছে বলে অনুমোদন করা হয়েছে। তা হলে তাঁকে যদি দোষী করা হয় তা হলে বোর্ডের সদস্যরাও সমান ভাবে দোষী। তা ছাড়া এক সময় শিলিগুড়ি পুরসভায় এবং পরবর্তীতে এসজেডিএ’তে কাজের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তা যোগ্যতা নিয়ে সে প্রশ্ন উঠেছে তা ঠিক নয় বলেই জ্যোতির্ময়বাবু দাবি করেন। তিনি জানান, পরীক্ষা দিয়ে যথাযথ ভাবে সুযোগ পেয়েছিলাম।

২০১২ সালের মে মাসে এসজেডিএ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আগে তিনি তাঁর ভাগ্নে সপ্তর্ষি পালকে কৌশলে দফতরে ইলেট্রিক্যাল বিভাগে দায়িত্বে বসান বলে অভিযোগ। সপ্তর্ষিবাবুর ইন্টারভিউ বোর্ডে জ্যোতির্ময়বাবু নিজেও ছিলেন বলে অভিযোগ। জোতির্ময়বাবু বলেন, “োই ইন্টারভিউ বোর্ডে আমি ছাড়াও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের এক বাস্তকার, এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান এবং বোর্ড সদস্যদের অনেকেই ছিলেন। আমার এত ক্ষমতা ছিল না তাদের টপকে আমি-ই সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

দুটি পাম্প হাউজ তৈরিতে দুর্নীতি নিয়ে যে অভিযোগ পুলিশে করা হয়েছে তা নিয়ে খেনও সে ভাবে তদন্ত শুরু হয়নি। পুুলিশের পক্ষ থেকে তদন্তের ভার সিাইডি’কে তুলে দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। তবে তদন্ত করতে উদাসীনতা দেখান হচ্ছে বলে বিরোধী সব দল অভিযোগ তুলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন