দুষ্কৃতীদের বোমায় মৃত্যু মানিকচকে

ছয় গ্রামবাসীকে উড়ো চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বাড়িতে ডাকাতি করা হবে। তারপর থেকেই আতঙ্ক ছড়ায় মানিকচকের মাদিয়া বাঁধাগাছে। পাশাপাশি গ্রাম চণ্ডীপুর ও দামোদরপুরেও এলাকার মানুষ রাতপাহারা দিতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের হাতেই শুক্রবার রাতে ধরা পড়ে তিন যুবক। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি দেশি বন্দুক, কার্তুজ, ছ’টি হাত বোমা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৫ ০১:৫৪
Share:

মালদহ মেডিক্যাল কলেজে জখম প্লাবন মণ্ডল। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

ছয় গ্রামবাসীকে উড়ো চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বাড়িতে ডাকাতি করা হবে। তারপর থেকেই আতঙ্ক ছড়ায় মানিকচকের মাদিয়া বাঁধাগাছে। পাশাপাশি গ্রাম চণ্ডীপুর ও দামোদরপুরেও এলাকার মানুষ রাতপাহারা দিতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের হাতেই শুক্রবার রাতে ধরা পড়ে তিন যুবক। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি দেশি বন্দুক, কার্তুজ, ছ’টি হাত বোমা। সেই যুবকদের বাইকগুলি পুড়িয়েও দেওয়া হয়। তারপর শনিবার রাতে একটি ছোট গাড়িতে করে এসে দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি চালায় চণ্ডীপুর ও দামোদরপুরে। তাতে এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক ছাত্র সহ চার জন।

Advertisement

এরপরেই এলাকার সাধারণ মানুষ রবিবার ভোর থেকে মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু করেন। প্রশাসনের সঙ্গে গ্রামবাসীদের তুমুল তর্কাতর্কি শুরু হয়। অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠিও চালায় বলে অভিযোগ। বেলা দু’টোয় অবরোধ ওঠে।

শুক্রবার ভোরে শোভানগরের মাদিয়া বাঁধাগাছ গ্রামের ছয় বাসিন্দার কাছে লাল খামে মোড়া উড়ো ফেলে দিয়ে যাওয়া হয়। তাতে লেখা ছিল, তাঁদের বাড়িতে অবিলম্বে ডাকাতি করা হবে, সব জিনিস যেন হাতের কাছেই এনে রাখা হয়। সে দিন থেকেই এই গ্রামটি ও তার পাশের চণ্ডীপুর ও দামোদরপুরে আতঙ্ক ছড়ায়। সেই সঙ্গে বাড়ে ক্ষোভও। শোভানগর হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক স্থানীয় বাসিন্দা ইউনিস মোমিন বলেন, “পুলিশ নিষ্ক্রিয়। তাই আগেকার দিনের রঘু ডাকাতদের মতো চিঠি দিয়ে ডাকাতি করতে আসার হুমকি পর্যন্ত দিতে সাহস পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। গ্রামের মানুষের ক্ষোভ তাই ক্রমশ বাড়ছিল।” শুক্রবার মাদিয়া বাঁধাগাছে গ্রামবাসীদের হাতেই ধরা পড়ে ওই তিন যুবক। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র মেলায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক দুই-ই আরও বাড়ে। মালদহ ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “এরপরে শনিবার রাতে বোমাবাজিতে এক জনের মৃত্যুর পরে ক্ষোভ ফেটে পড়ে। সে কারণেই সাধারণ মানুষই এ দিন সড়ক অবরোধ করেছেন।”

Advertisement

মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “সব ঘটনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়েছে। লাঠি চালানোর কোনও ঘটনা ঘটেনি।” রাজ্যের মন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র অবশ্য স্বীকার করেন, “কয়েকটি গ্রামে ডাকাতির আতঙ্ক ছড়িয়েছে।”

নিহত গ্রামবাসীর নাম আতাউর সবজি (৪৫)। বাড়ি দামোদরপুরে। শনিবার রাত ১২টা নাগাদ ভুটভুটি করে ইংরেজবাজারের রথবাড়ি থেকে সব্জি বিক্রি করে আতাউর সহ তিন জন বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় ইংরেজবাজার থানার চন্ডীপুর গ্রামের কাছে একটা ছোট গাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা তাঁদের দিকে বোমা ছোড়ে। আতাউরের দুই সঙ্গী মোবারক সবজি ও সুলতান সবজি গুরুতর জখম হন। এই ঘটনার মিনিট কুড়ি আগে দামোদরপুরেও গ্রামের নৈশপ্রহরীদের দিকে একই রকম একটি ছোট গাড়ি থেকে বোমা ছোড়া হয়। তাতে দশম শ্রেণির এক ছাত্র প্লাবন মণ্ডল ও তার প্রতিবেশী সুজিত মণ্ডল আহত হন। সকলকেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আতাউরকেও সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়। গভীর রাতে তিনি হাসপাতালে মারা যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন