মালবাজার হাসপাতালে ছানি কাটার পরে সংক্রমণের জেরে যাঁদের একচোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে হয়েছে তাঁদের ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে এখনও নীরব প্রশাসন। ক্ষতিপূরণ না-মেলায় দরিদ্র পরিবারের ওই রোগীরা অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।
অস্ত্রোপচারের জেরে যে প্রৌঢ়রা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ওই রোগীদের পাশে আর্থিক সাহায্য নিয়ে কোনও বেসরকারি সংগঠনও দাঁড়ায়নি। মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ছানি কাণ্ডের জেরে হইচই পড়ে। সরকারি হাসপাতালে ওই ঘটনার পর আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি ওঠে। ছানি কাণ্ডে আক্রান্ত এবং তাদের পরিবারের লোকেরা পুরো বিষয়টি ‘অমানবিক’ বলেও অভিযোগ তুলেছেন। চোখ বাদ দেওয়ার পরেও এখনও তাঁরা সুস্থ হননি। ফের তাদের চিকিৎসার জন্য শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে পাঠানো হয়। শিলিগুড়ির থেকে গত কালই লাটাগুড়ির উত্তর মাটিয়ালির বাড়িতে ফিরেছেন আমিরুল ইসলাম। তাঁর ছেলে খাদেমুল ইসলাম বলেন, “আমাদের চরম দুর্দশায় পড়তে হলে সরকার বা কারও মানবিকতা জাগবে না।”
জলপাইগুড়ি সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন অবশ্য দ্রুত আক্রান্তদের বাড়িতে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যাদের চোখ বাদ দিতে হয়েছে তাদের যতটা পারি সাহায্য করব। দ্রুত তদন্ত করে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আর্জিও জানাব।” ৬ অগস্ট মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ছানি কাটাতে আসেন পাঁচ রোগী। ছানি অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পর থেকে প্রত্যেকেরই চোখে সংক্রমণ হয়। হাসপাতালের তরফে এর পর শিলিগুড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে তৈরি চোখের নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় তাঁদের। সেখানেই ২৯ সেপ্টেম্বর চার রোগীর একটি করে চোখ বাদ দিতে হয়। ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে দফায় দফায় মালবাজারের মহকুমাশাসককে রোগীর আত্মীয়েরা স্মারকলিপি দেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহকুমাশাসককে একই দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। অথচ সরকারি ভাবে সাহায্যের কোনও বার্তা না আসায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে রোগী এবং তাদের আত্মীয়দের মধ্যে। বিজেপি’র তরফেও স্মারকলিপি দিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হবে বলে জানানো হয়। মালবাজার টাউন বিজেপি’র সম্পাদক মানিক বৈদ্য বলেন, “এই ঘটনা যাতে ফের না হয় সে জন্যেও স্বাস্থ্য দফতরকে সতর্ক থাকার আর্জি জানানো হবে।” এমন ঘটনা ডুয়ার্সের মত অবহেলিত জায়গাতেই সম্ভব বলে জানান, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার নেতা জন বারলা। তিনি বলেন, “ডুয়ার্স থেকে রাজস্ব আদায়েই রাজ্য সরকারের বেশি মন। অথচ এখানে এ ধরনের অমানবিক ঘটনা নিয়ে সরকার নির্বিকার।”