দীর্ঘ দেড় বছর কেটেছে অন্ধকারে। বাধর্ক্যভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহারের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে প্রতিদিন। খাদের কিনারায় পৌঁছে বিডিও অফিসে অনশনে বসে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন তাঁরা। অবশেষে নড়েচড়ে বসে ব্লক প্রশাসন। নতুন করে সমীক্ষা করে তা রাজ্যের কাছে পাঠানোর পর অবশেষে আবার আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৮২৭ জন দরিদ্র অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধার বার্ধক্যভাতা চালু হল।
আলিপুরদুয়ার ২ ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক সজল তামাঙ্গ বলেন, “ওই ৮২৭ জনের নাম সেবা সফটওয়্যারে বাদ পড়ে যাওয়ায় তাঁদের ভাতা দেওয়া যাচ্ছিল না। অনুমোদন মেলায় জট কাটল।”
কোহিনূর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হিরণবালা দেবনাথ। ৭৭ বছরের এই অসহায় বিধবার ছেলে নেই। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বিপিএল তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর। টানা দশ বছর ধরে বার্ধক্য ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে হঠাৎই ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। গত ১৪ মাস ধরে ভাতার টাকা না পেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কোনওমতে দিন কাটাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধা। ভাতা চালু হওয়ায় আবার দুবেলা দু’মুঠো খেতে পারছেন। ভরা মাঘেও তাই হাসিতে উষ্ণতা ছড়ালেন হিরণবালা।
চাপরের পাড় ১ পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা তথা শোভাগঞ্জ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য রঞ্জন রায় বলেন, “বিডিও অফিসের যে সমস্ত কর্মী ওই তালিকা তৈরীতে যুক্ত ছিলেন তাঁদের চরম গাফিলতিতে অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধ বৃদ্ধারা সরকারি ভাতা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন। আমরা আন্দোলনে নামার ফলে ফের ভাতার অনুমোদন দিল সরকার।”
অন্যদিকে তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী র দাবি, “৮২৭ জন বৃদ্ধবৃদ্ধা ভাতা না পাওয়ায় কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন। সেটা জানার পর আমি নিজে জেলা শাসক এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দ্রুত ওই অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের বার্ধক্যভাতা দেওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলাম। তার ফল স্বরূপ রাজ্য সরকার তাঁদের ফের ভাতা চালু করার অনুমোদন দিয়েছে।”
ব্লক অফিস সুত্রে জানা গিয়েছে ,দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে বার্ধক্য ভাতা পাওয়ার পর সেবা সফটওয়্যারে নাম বাদ পড়ায় গত দেড় বছর ধরে ব্লকের ওই ৮২৭ জনের ভাতা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ব্লক প্রশাসন। এর ফলে দেড় বছরের বেশী সময় ধরে অসহায় জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছিলেন তাঁরা। বিডিও-র কাছে দফায় দফায় অভিযোগ জানিয়েও কোনও কাজ না হওয়ায় মাস ছয়েক আগে বিডিও অফিসে অনশনে বসে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলেন তাঁরা। তারপরেই জট খুলতে উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।