দহন-জ্বালায় অতিষ্ঠ উত্তর, আরাম পাহাড়ে

তাপমাত্রা চল্লিশ ছুঁইছুঁই। গত চৈত্র থেকেই বৃষ্টির দেখা নেই। দাহদাহ থেকে বাঁচতে সকাল বেলাতেও হাত মুখ ঢাকা পথচারীদের রাস্তায় দেখা মিলছে। বোরো ধান বা পাট ক্ষেতও ফুটিফাটা। শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে মালদহ সর্বত্রই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়েছে উত্তরবঙ্গে। দার্জিলিং পাহাড়ের তাপমাত্রাও বাড়লেও, উত্তুরে হাওয়ার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি অবশ্য আরামদায়ক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৫
Share:

দুই চিত্র। (বাঁ দিকে) শিলিগুড়িতে মুখ বাঁচাতে ভরসা ওড়না। (ডান দিকে) দার্জিলিঙে অবশ্য শীতের আমেজ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ও রবিন রাই।

তাপমাত্রা চল্লিশ ছুঁইছুঁই। গত চৈত্র থেকেই বৃষ্টির দেখা নেই। দাহদাহ থেকে বাঁচতে সকাল বেলাতেও হাত মুখ ঢাকা পথচারীদের রাস্তায় দেখা মিলছে। বোরো ধান বা পাট ক্ষেতও ফুটিফাটা। শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে মালদহ সর্বত্রই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হয়েছে উত্তরবঙ্গে। দার্জিলিং পাহাড়ের তাপমাত্রাও বাড়লেও, উত্তুরে হাওয়ার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি অবশ্য আরামদায়ক।

Advertisement

দাবদাহ চলতে থাকায় সানস্ট্রোক, ডায়েরিয়া, পেটের অসুখ কিংবা জ্বরের মত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে দু’টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের ছুটি বাতিল করে গরমে অসুস্থদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দাবদাহ চলতে থাকায় জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে কোচবিহার জেলা প্রশাসনও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন মাস ধরে জেলায় বৃষ্টি হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি। স্বাভাবিকের থেকে অন্তত ৮ ডিগ্রি বেশি। মালদহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে ৪০ ডিগ্রি হয়েছে।

কোচবিহার জেলা হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে ইতিমধ্যে দাবদাহ জনিত নানা সমস্যা নিয়ে শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। এছাড়াও দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতির কারণেই স্বাস্থ্য দফতরকে সর্তক করে দিয়েছে প্রশাসন। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “প্রচন্ড গরমের জন্য সবরকম সতর্কতা নিতে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের বলা হয়েছে।” জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অসহ্য গরমে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায় পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম সতর্কতা হিসেবে শুক্রবার থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।” চিকিৎসকরা জানান, রোদে কাজ করার জন্য সানস্ট্রোক, হাত-পায়ে খিঁচুনি, হাত-পা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শরীরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা খাবারে গোলমালের জন্য শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। দেখা দিতে পারে ভাইরাস ঘটিত জ্বর, মাথা ব্যাথা, সর্দি, শ্বাসকষ্ট সহ ত্বকের নানা সমস্যা।

Advertisement

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার সুশান্ত রায় বলেন, “তাপমাত্রা বাড়ছেই। দ্রুত মেডিক্যাল টিম তৈরি করে রোগী হাসপাতালে পৌঁছনো মাত্র ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” দুটি দলের একটি শুধুমাত্র সানস্ট্রোক সহ বড়দের বিভিন্ন সমস্যার চিকিৎসা করবে। দশ সদস্যের ওই দলে চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিসক, চারজন নার্স এবং দুজন স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন। অন্য দলটি গঠন করা হয়েছে গরমে অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য।

জেলার ব্লক হাসপাতালগুলিতেও গরমে জলবাহিত রোগে এবং জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে। ময়নাগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ বাগ বলেন, “জলবাহিত রোগ ছাড়াও ভাইরাস ঘটিত জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জলবাহিত রোগ এবং জ্বরে আক্রান্তদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সাধন সরকার বলেন, “আগে থেকে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের নিয়ে একটি দল তৈরি করা আছে।”

দাবদহের ফলে শুধু স্বাস্থ্য নয়, কৃষি নিয়েও উদ্বেগে কোচবিহার জেলা প্রশাসন। জেলায় বোরো ধান, পাট চাষে ক্ষতির আশঙ্কা নিয়ে প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে কৃষি দফতর। প্রশাসন সূত্রের খবর, অনাবৃষ্টির জেরে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পাটের চারা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মাটি ফেটে যাওয়ায় বোরো ধানের চাষও ক্ষতির মুখে। এ দিকে, শনিবার থেকে তাপ প্রবাহের সমস্যা এড়াতে জেলার সব স্কুলে প্রাত বিভাগে ক্লাস চালু হয়েছে।

সমতলে দাবদাহ চললেও দার্জিলিং পাহাড়ের পরিস্থিতি তুলনায় আরামদায়ক। গ্রীষ্মের মরশুমে এই সময়ে দার্জিলিঙে পর্যটকদের যথেষ্ট ভিড় রয়েছে। তাপমাত্রা বাড়লেও, ঠান্ডা হাওয়ার কারণে আবহাওয়া যথেষ্ট উপভোগ্য বলে পর্যটকরা জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দার্জিলিঙের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির কিছুটা বেশি। স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি বেশি রয়েছে পাহাড়ের তাপমাত্রা। আসানসোলের বাসিন্দা পর্যটক শুভাশিস দত্তের কথায়, “সমতলে অসহ্য গরম পড়েছে। এখানে আবহাওয়া খুবই আরামদায়ক। বেশ ভাল আছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন