আদালতে সাবিত্রী মিত্রের জামাই সোমদীপ সরকার। শনিবার মালদহে তোলা মনোজ মুখোপাধ্যায়ের ছবি।
মানিকচকে নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের জামাই সোমদীপ সরকার-সহ চার তৃণমূল নেতার জামিনের আর্জি খারিজ করে দিল মালদহ আদালত।
শনিবার মন্ত্রীর জামাইয়ের জামিনের জন্য মালদহ আদালতে একযোগে দাঁড়িয়েছিলেন শতাধিক আইনজীবী। যাঁদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অসিতবরণ বসুও। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুমিত্রা দেব জামিন নামঞ্জুর করে ধৃতদের পাঁচ দিন জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে অসিতবরণবাবু বলেন, “আদালত প্রথমে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। পরে গোটা বিষয়টি শোনার পরে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন জেল হাজতে রেখে ১৬ এপ্রিল কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।” তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী সাবিত্রীদেবী বলেন, “আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। এর বেশি আমি কিছু বলব না।”
তৃণমূল অবশ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার রাস্তাই নিয়েছে। কমিশনের যে এমসিসি দলের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগে এই ধরপাকড়, তাদের আট জন কর্মী-অফিসারের বিরুদ্ধে প্রার্থীর প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শনিবার দক্ষিণ মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের ইলেকশন এজেন্ট রামপ্রবেশ মণ্ডল মানিকচক থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
শনিবার জলপাইগুড়িতে জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভোটের সময়ে অনেকেই বাইক নিয়ে মিছিলে যান। এটা যে করা যাবে না, সেই নিয়ম থাকলে আগে জানাতে হবে তো! সেটা না করে ছবি তুলছেন? এটা কী?” একই সুরে রামপ্রবেশবাবুও বলেন, “মানিকচকে কমিশনের কর্মী-অফিসারেরা আমাদের সতর্ক করা তো দূরের কথা, প্রার্থীর প্রচারে বাধা দিয়েছে। প্রার্থীর গাড়ি মাঝরাস্তায় আটকে দিয়েছিলেন। কমিশনের ওই কর্মীরাই কমিশনের বিধিভঙ্গ করেছেন। এ বার কমিশন তাদের কর্মী-অফিসারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা আমরা দেখব।”
এ প্রসঙ্গে মানিকচক ব্লকের এমসিসি-র ওসি দিলীপ সাহা বলেন, “আমাদের যে ভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে, আমরা তা-ই করেছি।” ভিডিও ছবি তোলার ওসি অজিত দাস বলেন, “আমরা ছবি তুলছিলাম। কোনও প্রার্থীর গাড়ি আটকাইনি। যদি আটকাতাম, তবে আমাদের ধাক্কা মেরে তিন শতাধিক মোটরবাইক কী করে বের হত? এত লোককে কি আটকাতে পারি? বাইক মিছিলের ছবি তোলার জন্যই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আমাদের মারধর করেছেন।”
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। মানিকচকে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে তিনশোরও বেশি মোটরবাইকের মিছিল বার করা হয়েছে খবর পেয়ে এমসিসি দলের কর্মীরা গিয়ে আপত্তি করেন। ছবিও তুলতে থাকেন। ওই সময়েই সোমদীপ ওরফে টিঙ্কু-সহ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা তাঁদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মানিকচকের বিডিও পুলিশের কাছে সোমদীপ ছাড়াও মুকুলেশ্বর রহমান, জামাল খান ও মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ প্রথমে তাঁদের না ধরে অভিযোগে নাম নেই এমন তিন জনকে গ্রেফতার করেছিল। ক্ষুব্ধ কমিশন রাজ্যের ডিজি-র কাছে শুক্রবার বিকেল ৫টার মধ্যে রিপোর্ট তলব করতেই রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসে। এর পরেই অভিযোগপত্রে নাম থাকা চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।