বিএসএফের গুলিতে নিহত মহিলা

নিকোনো উঠোনে রক্তের দাগ ছিল বিকেলেও

সকাল থেকে গ্রামবাসীদের অনেকেই ভিড় করেছেন বাড়িটায়। সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের পর বিএসএফের গুলিতে নিহত বিধবার দেহ আসতেই কান্না আর বাঁধ মানল না। তাঁর মৃত্যু যেন এক সুতোয় বেঁধে দিল দিনহাটার ওই সীমান্তবর্তী গ্রামটিকে। কমবেশি প্রায় একসুরে বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০২
Share:

দিনহাটার সীমান্তবর্তী গ্রামে বিএসএফের গুলিতে নিহত মহিলার বাড়ির উঠোনে রক্তের দাগ। তা ঘিরে রয়েছেন পরিজন, বাসিন্দারা। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

সকাল থেকে গ্রামবাসীদের অনেকেই ভিড় করেছেন বাড়িটায়। সন্ধ্যায় ময়নাতদন্তের পর বিএসএফের গুলিতে নিহত বিধবার দেহ আসতেই কান্না আর বাঁধ মানল না। তাঁর মৃত্যু যেন এক সুতোয় বেঁধে দিল দিনহাটার ওই সীমান্তবর্তী গ্রামটিকে। কমবেশি প্রায় একসুরে বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল।

Advertisement

এককোণে চোখের জল মোছবার ফাঁকে নিহতের এক আত্মীয়া বলেই ফেললেন, “মানুষটা খুব ভাল মনের ছিল তাই ওর এমন মৃত্যু কেউ মানতে পারছেন না। বাড়ির ভিতরে বিএসএফের লোক এ ভাবে গুলি চালানোয় সর্বনাশটা হয়ে গেল। বিনা অপরাধে বেঘোরে প্রাণ গেল ওঁর।” রবিবার সন্ধ্যায় মৃতাকে শেষবার চোখের দেখা দেখতে তাঁদের বাড়িতে ভিড় করেছিল প্রায় গোটা গ্রাম। তাঁর দুই ছেলে-সহ পরিবারের অন্যরা তখন কথা বলতেও পারছেন না। আত্মীয় পরিজনেরা একে অপরকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

পরিবারের তরফে পুলিশকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মৃতার দেহ বাড়ি থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ান। তাঁর ছেলে পুলিশের কাছে দেওয়া অভিযোগে লিখেছেন, “গুলির শব্দে বাইরে বেরোনোর পর দেখি আমার মায়ের রক্তাক্ত দেহ বিএসএফের জওয়ান বাড়ি থেকে বের করার চেষ্টা করছে।” নিহতের ভাগ্নে বলেন, “রাতে শৌচকর্ম করতে যখন উনি বাইরে বেরোন তখন তাঁর হাতে কুপির আলো ছিল। কী করে যে এতবড় সর্বনাশটা হয়ে গেল! দেহ নিয়ে টানাহেঁচড়ার ওই ভয়াবহ দৃশ্যটা যেন আমাকে তাড়া করছে।”

Advertisement

এ দিন মৃতার দেহ কোচবিহারে ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছয়। সেখানকার স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে দেহটি কিছুক্ষণ রাখা হয়।

গ্রামবাসীর ভিড়ে সামিল ছিলেন রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষও। তিনি বলেন, “কোনও যুক্তিতেই ওই গুলি চালনার ব্যাখা মানা যায় না। বিএসএফের অভিযুক্ত জওয়ানের শাস্তি হওয়া উচিত। তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মৃতার পরিবারের একজনের চাকরি ও ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।” দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহও বেশ খানিকক্ষণ এলাকায় ছিলেন। উদয়নের কথায়, “বাড়ির ভিতরে থাকা মহিলাকে গুলি করার এমন ঘটনা লজ্জাজনক। সরকারের উচিত ওই ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করা। সেইসঙ্গে মহিলার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।”

বাসিন্দারা জানান, ওই মহিলার স্বামী কয়েক বছর আগে মারা যান। তারপর থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার আগলে ছিলেন তিনি। বড় ছেলের বিয়েও দিয়েছেন। ছেলেদের দিনমজুরির কাজেই চলত টানাটানির সংসার। রবিবার বিকেলে তাঁর দেহ যখন এল, দরমার বেড়া, টিনের চাল দেওয়া মাটির বাড়ির নিকোনো আঙিনায় তখনও চাপ চাপ রক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন