অভিযোগ আইএনটিটিইউসির বিরুদ্ধে

না জানিয়ে গরহাজির, কাজ বন্ধ চটকলে

কারখানা কর্তৃপক্ষের নানা পদক্ষেপে ‘মন ভেঙে যাচ্ছে’ এই অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিন কাজে আসছেন না একাংশ শ্রমিক। মাস দু’য়েক এ ভাবে চলার পরে শেষ পর্যন্ত সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দিল কোচবিহারের একটি চটকল। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রতিদিনই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির অন্তত জনা পঞ্চাশ সদস্য গরহাজির থাকেন।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
Share:

বন্ধ চটকলের গেট। কাজ করতে এসেও ফিরে যান অনেক শ্রমিক। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কারখানা কর্তৃপক্ষের নানা পদক্ষেপে ‘মন ভেঙে যাচ্ছে’ এই অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিন কাজে আসছেন না একাংশ শ্রমিক। মাস দু’য়েক এ ভাবে চলার পরে শেষ পর্যন্ত সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ দিল কোচবিহারের একটি চটকল। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রতিদিনই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির অন্তত জনা পঞ্চাশ সদস্য গরহাজির থাকেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালে তরফে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্কের’ বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয় চকচকা শিল্পকেন্দ্রের অন্তর্গত ওই চটকলে। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন ওই চটকলের অন্তত ৬০০ জন শ্রমিক। এ দিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করতে এসে গেট বন্ধ দেখে ফিরে যান। চটকলটির অন্যতম ডিরেক্টর কৈলাস ঝাওয়ার এ বিষয়ে বিশদে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “সব ঠিক থাকলে কারখানা বন্ধ করার প্রশ্নই নেই। বাকি সব জেনারেল ম্যানেজার বলবেন।” ওই কারখানার জেনারেল ম্যানেজার আশিস সাহার অভিযোগ, শ্রমিকদের একাংশ টানা দু’মাস আগাম না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকায় উত্‌পাদন মার খাচ্ছে। তাঁর দাবি, “দৈনিক গড়ে লক্ষাধিক টাকার উত্‌পাদন হচ্ছে না। অনেক চেষ্টা, অনুরোধ করে ফল হয়নি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়েছে।”

আইএনটিটিইউসি কর্মীরাই যে অনুপস্থিত থাকছেন তা স্বীকার করেছেন সংগঠনের নেতারাও। আইএনটিটিইউসির কোচবিহার জেলা সভাপতি প্রাণেশ ধরই জানিয়েছেন, “কারখানার একশো শতাংশ কর্মীই আমাদের সদস্য।” তবে তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, শ্রমিকদের গড়ে ১৭০-২১০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। অথচ ন্যূনতম দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি দেওয়ার কথা। আবার, নিম্নমানের পাট ব্যবহার করায় কাজ করতে শ্রমিকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রাণেশবাবু বলেন, “কর্তৃপক্ষ ব্যর্থতা আড়াল করতেই উপস্থিতির অজুহাত তৈরি করে কাউকে না জানিয়েই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।”আইএনটিটিইউসি নেতৃত্বের অভিযোগ, “বেশি ধুলো, আঁশ উড়ছে। প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রায় ২০ লক্ষ টাকা জমা হয়নি। সে জন্যই শ্রমিকদের অনেকের মন ভেঙে যাচ্ছে।”

Advertisement

জেলার চকচকা শিল্পকেন্দ্রের অন্যতম বড় কারখানা ওই চটকলটি। পাট থেকে সুতো, কাপড়-সহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয় সেখানে। দৈনিক তিন দফায় গড়ে ৮ ঘণ্টা করে অন্তত ৬০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে সিংহভাগ দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে বেশ কয়েকবছর থেকে কাজ করছেন। আগে ওই কারখানায় সিটুর প্রভাব ছিল। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র সদস্য বাড়তে থাকে। প্রায় দুই মাস থেকে ওই শ্রমিকদের একাংশ কর্তৃপক্ষকে আগাম না জানিয়ে মর্জিমাফিক গরহাজির থাকায় রাতের শিফটে সমস্যা বাড়ে। ফলে, দৈনিক যেখানে গড়ে ১৮ টনের বেশি সুতো উত্‌পাদন হওয়ার কথা, তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ টনে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আর্থিক মূল্যের উত্‌পাদন মার খেয়েছে। সমস্যা মেটাতে গত ১০ নভেম্বর ও ২৪ নভেম্বর দু’দফায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে ওই শ্রমিকরা হাজির হননি। বিকল্প অভিজ্ঞ শ্রমিকও মিলছিল না। ক্ষতি বাড়তে থাকায় এদিন সকাল ৬ টা থেকে সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। যদিও সংগঠনের চকচকা ইউনিটের নেতা বঙ্কিম আইচের দাবি, তাঁদের কাছে মালিকপক্ষ কখনও সমস্যার ব্যাপারে কিছুই জানাননি।

আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব শ্রমিকদের ‘মন ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ তুললেও কারখানায় হঠাত্‌ সাসপেনশনের নোটিশ দেখে মন ভেঙে গিয়েছে অধিকাংশ শ্রমিকেরই। তাঁদের ক্ষোভ, “জনা পঞ্চাশের জন্য বাকি সাড়ে পাঁচশো জনকে ভুগতে হবে কেন?” এ দিনও চটকলের গেট বন্ধ দেখে তাঁরা ওই প্রশ্ন তোলেন। এ দিন কাজ করতে এসে ফিরে যান চটকলের শ্রমিক কল্যাণ আইচ। আইএনটিটিইউসির সদস্য স্পষ্টই বলেন, “দৈনিক ১৯১ টাকা মজুরিতে কাজ করতাম। আমরা বেশিরভাগ শ্রমিকই কাজ করতে চাই। কয়েকজন না আসায় কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াটা খুবই খারাপ।”

এই ক্ষোভের আঁচ পেয়েই যেন ‘টনক নড়ে’ সংগঠনের নেতাদের। তাঁরা কারখানা খোলানোর জন্য শ্রম দফতরের হস্তক্ষেপ চান।তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন শ্রম দফতরের কর্তারাও। আইএনটিটিইউসির প্রতিনিধি, কারখানা কর্তৃপক্ষের কর্তারা ছাড়াও আধিকারিকদের নিয়ে শ্রম দফতরে বৈঠক হয়। কোচবিহারের সহকারী শ্রম কমিশনার সুমন্ত রায় বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছি। কলকাতা থেকে ৪ ডিসেম্বর কারখানার মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা আসবেন। সেদিন ফের শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। সমস্যা মিটে যাবে।”

তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “শ্রমিকদের অনেকের সামান্য জমি রয়েছে। এখন ধান, পাট চাষের মরসুম। মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শীঘ্র সমস্যা মিটে যাবে।” ঘটনার সমালোচনা করে চকচকার সিটু নেতা অবনী রায় বলেন, ‘‘যে কারণেই হোক না কেন, এ ভাবে কারখানা বন্ধ করা যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন