নির্মাণকর্মীর মৃত্যুতে এখনও ব্যবস্থা নয় কেন, সরব বাসিন্দারা

কোনওরকম সর্তকতা না নিয়েই বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের একাংশ ভাঙার সময়ে নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার পরেও নির্মাতা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ শিলিগুড়ি পুরসভা করছে না কেন তা নিয়ে শহরে প্রশ্ন উঠছে। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক ধরে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের ধারে প্রকাশ্যে বহুতল ভাঙার কাজ চলছে। অথচ পুর কর্তৃপক্ষের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। অনুমতি না নেওয়া হলে, কেন পুর কর্তৃপক্ষর হাত গুটিয়ে বসে থাকল তা নিয়ে নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০২
Share:

কোনওরকম সর্তকতা না নিয়েই বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের একাংশ ভাঙার সময়ে নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার পরেও নির্মাতা সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ শিলিগুড়ি পুরসভা করছে না কেন তা নিয়ে শহরে প্রশ্ন উঠছে। পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, মাস ছয়েক ধরে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের ধারে প্রকাশ্যে বহুতল ভাঙার কাজ চলছে। অথচ পুর কর্তৃপক্ষের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। অনুমতি না নেওয়া হলে, কেন পুর কর্তৃপক্ষর হাত গুটিয়ে বসে থাকল তা নিয়ে নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যেও।

Advertisement

গত শনিবার সকালে ওই ভবনের কাজ চলার সময়ে কংক্রিটের বিম মাথায় পরেই ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নয়ন রায়ের। অভিযোগ, ভবনের সামনের অংশ ভাঙার কাজ চললেও, নিময় মেনে সামনে পলিথিন মুড়ে দেওয়া হয়নি। বহুতলের উপরের অংশে কাজ চললেও, নীচে পলিথিন বা বেড়ার কোনও ছাউনি দেওয়া হয়নি। ভাঙা কংক্রিটের টুকরো যাতে সামনে বা নীচে ছিটকে না পড়তে পারে সে কারণেই ওই সাবধানতা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলেই নীচে দাঁড়ানো নয়নবাবুর মাথায় কংক্রিটের ‘বিম’ ভাঙা টুকরো এসে পড়ে বলে অভিযোগ।

কংক্রিট মাথায় পড়ে ময়নাগুড়ি বাসিন্দা মৃত নয়নবাবু অকৃতদার। ঘটনার কথা শুনে তাঁর পরিবারের সদস্যরা শনিবার সকালে শিলিগুড়িতে এসে সংস্কার কাজের সময় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলে। যদিও পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ থানায় জানানো হয়নি বলে জানা গিয়েছে। যদিও, এ বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষেরই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করার কোনও বাধা নেই বলে পুলিশের একাংশ দাবি করেছে। সে ক্ষেত্রে পুর কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট পেলে পুলিশও গাফিলতির নির্দিষ্ট দারায় মামলা শুরু করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।

Advertisement

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, “যে কোনও বহুতলে নির্মাণ করতে হলে পুর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য হেলমেট দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সে সব হয়নি বলে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তেও সেগুলি বিবেচিত হবে।”

চার তলা বাণিজ্যিক ভবনের সামনে কোনও আড়াল নেই, তাই ভবনের সামনের অংশ ভাঙার কাজ কোনভাবেই পুর কর্তৃপক্ষের নজর ‘এড়িয়ে’ যাওয়ার কথা নয়। শুধু তাই নয়, অনুমতি ছাড়া সংস্কার কাজ হচ্ছে জানতে পারে এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর নিজেই পুর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তারপরেও ৫ মাসের বেশি কেটে গেলেও পুর কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। পুর আইন অনুযায়ী, শহর এলাকায় কোনও বাণিজ্যিক ভবনের নূন্যতম সংস্কার করতে গেলেই পুর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। বহুতলের ক্ষেত্রে, ভবনে কী ধরণের সংস্কার হবে, দিনের কোন সময়ে সেই কাজ হবে তাও পুর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়।

শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের হাসমিচক লাগোয়া ওই ভবনের ক্ষেত্রে সে সব কিছুই করা হয়নি বলে অভিযোগ। ওই বাণিজ্যিক ভবনটি শিলিগুড়ির একটি প্রভাবশালী নির্মাণ সংস্থার মালিকানাধীন। সে কারণেই কী বিদায়ী কাউন্সিলেরর আপত্তি জানানোর পরেও পুর কর্তৃপক্ষ দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ওই এলাকার অনান্য বাণিজ্যিক ভবন কর্তৃপক্ষ।

নির্মাণ সংস্থার তরফে একটি সূত্রে জাবি করা হয়েছে, প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। অনুমতি নেওয়া থাকলে, প্রয়োজনীয় সর্তকতা কেন নেওয়া হয়নি সে প্রশ্ন তুলেছেন বিদায়ী কাউন্সিলরও। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার নিরঞ্জন মিত্তলে একাধিক বার ফোন করা হলে তোলেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রতন বেনিপুরিও ব্যস্ত রয়েছে বলে দাবি করে ফোন কেটে দেন। একসময়ে ভবনটি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দিলীপ অগ্রবাল। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, এখন তিনি ওই ভবনের সঙ্গে যুক্ত নন।

শিলিগুড়ির পুর কমিশনার সোনম ওয়াদি ভূটিয়া সোমবার বলেন, “খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রিপোর্ট পেলে মন্তব্য করব।” এলাকার বিদায়ী কংগ্রেস কাউন্সিলর রুমা নাথের অভিযোগ, “পিপোর্ট আর খতিয়ে দেখছি করেই পুর কর্তৃপক্ষ সময় কাটাচ্ছে। বাণিজ্যিক সংস্থার গাফিলতির জন্য এক ব্যক্তির মৃত্যু হল। এর দায় পুর কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না। যাই হোক, ঘটনাটি নিয়ে কনা পদক্ষেপ করতে হবে, যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন