নিষেধ উড়িয়ে উড়ে এল উপহার

ফতোয়া উড়ে গেল আবেগে। শীতের বিকেলে সীমান্তের ও পার থেকে উড়ে এল পীরগঞ্জের পেঁড়া, ঢাকাই মসলিন। এ পারের হেমতাবাদ থেকে চটের থলি-বন্দি হয়ে ও পারের আকাশে ভেসে পড়ল মোবাইল, নলেন গুড়ের সন্দেশ।

Advertisement

গৌর আচার্য

হেমতাবাদ শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

কাঁটাতার ছাড়িয়ে ভালবাসার উপহার। হেমতাবাদের মাকড়হাটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। শুক্রবার তরুণ দেবনাথের তোলা ছবি।

ফতোয়া উড়ে গেল আবেগে।

Advertisement

শীতের বিকেলে সীমান্তের ও পার থেকে উড়ে এল পীরগঞ্জের পেঁড়া, ঢাকাই মসলিন। এ পারের হেমতাবাদ থেকে চটের থলি-বন্দি হয়ে ও পারের আকাশে ভেসে পড়ল মোবাইল, নলেন গুড়ের সন্দেশ।

শুক্রবার বিকেলে একেবারেই আক্ষরিক অর্থে, সীমান্তরক্ষীর রাঙা চোখের অনুশাসন ভেসে গেল মিলনমেলার উচ্ছ্বাসে।

Advertisement

ফুট দশেক উঁচু কাঁটাতারের বেড়ার দু-পারে খোলা মাঠ। ধান কাটা নাড়ায় গেঁজে ওঠা সেই মাঠ মাড়িয়ে কাঁটাতারের বেড়ার গা ঘেঁষে শুক্রবার বিকেলে পীরগঞ্জের মহম্মদ ইমরান তাঁর বোনের দিকে বাড়িয়ে দিলেন হাত, এ পাড়ের হেমতাবাদ গ্রামের রফিক আলি তাঁর দাদাকে আদাব সারলেন কাঁটাতারের এ পার থেকেই।

হেমতাবাদ সীমান্তে দু-বাংলার এই মিলন মেলা প্রায় দু’দশকের পুরনো। প্রতি বছর বিএসএফ-র তত্ত্বাবধানে হয় মেলা। ছুড়ে দেওয়া কথাবার্তা, টুকটাক উপহার, মিলন মেলার চেনা রেওয়াজ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সুতোয় জড়িয়ে এ বার সেই মিলন মেলার উপরে স্পষ্ট ‘না’ জানিয়ে দিয়েছিল বিএসএফ। কিন্তু আবেগের কাছে সেই সরকারি ফতোয়ার অসহায় আত্মসমর্পণ দেখল সীমান্তের ওই গ্রাম।

এ দিন সকাল থেকেই সীমান্তে ভিড় করতে শুরু করেছিলেন গ্রামবাসীরা। বিএসএফ অবশ্য কাঁটাতারের বেড়ার দেড়শো মিটার আগেই প্রাথমিক ভাবে তাঁদের রুখে দিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য বিশেষ লাভ হয়নি। দুপুর থেকে বাড়তে থাকে ভিড়। হেমতাবাদ, মাকড়হাট, সান্ত্রা, শিমুলডাঙ্গি কিংবা বাঙালবাড়ির প্রায় হাজার দশেক বাসিন্দা বেলা দেড়টা নাগাদ বিএসএফের বাধা উজিয়ে হাঁটতে থাকেন কাঁটাতারের বেড়ার দিকে। অবাক হয়ে সীমান্তরক্ষীরা দেখেন, ও পারের পীরগঞ্জ, রানিডঙ্গল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গির কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেছেন বেড়ার ধারে। জোর করে বাধা দিতে গেলে বড় ধরনের গণ্ডগোল বাধতে পারে, শেষতক তাই পিছু হটে বিএসএফ।

রায়গঞ্জের ডিএসপি (ডিআইবি) সুজিত ঘোষ বলেন, “বিএসএফ আমাদের পরিস্থিতি সামাল দিতে ডেকেছিল। কিন্তু সীমান্তের নিরাপত্তা তো বিএসফ-এর হাতে।” আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কায় পিছিয়ে আসে পুলিশ। দুপুরেই দু-দেশের বাসিন্দারা ছুড়ে দিতে থাকেন প্যাকেট, থলে, ব্যাগ। মোবাইল থেকে মুড়ি, পাউরুটি থেকে ঢাকাই শাড়িঘণ্টা দুয়েক ধরে চলে আদান প্রদান। বেলা পড়ে আসে। থিতিয়ে আসে মেলার উন্মাদনা।

বিকেলের ভাঙা মেলা ফেরত হেমতাবাদের রামমতি বর্মন শুধু বলে যান, “কাঁটাতারের বেড়া কী দু’দেশের মিলন রুখতে পারে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন