নদী পথে পাচার রুখতে ভাসমান বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএসএফ। ওই প্রস্তাব ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। কোচবিহার জেলায় বাংলাদেশ সীমান্তে ছ’টি নদী রয়েছে। চোরাকারবারিরা এই নদীপথ ব্যবহার করে থাকে বলে বিএসএফের অনেকেই মানছেন। গ্রীষ্মে ওই সব নদীতে হাঁটুজল থাকে বলে পাচারকারীদের রমরমাও বেড়ে যায়। গভীর জল থাকলেও অবশ্য পটু সাঁতারু পাচারকারীরা অনায়াসে নেমে পড়েন। সব মিলিয়ে সারা বছর ধরে গরু থেকে শুরু করে সমস্ত পণ্যসামগ্রী নদী পথেই লেনদেন হয় বলে অভিযোগ। বাংলাদেশ থেকে জামাকাপড়, ধান বীজ চলে আসে নদী পেরিয়েই। বিএসএফের কোচবিহার রেঞ্জের ডিআইজি দীনেশ কুমার বডলা বলেন, “ওই বিষয়ে সরকারি স্তরে আলোচনা চলছে।”
বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, “নদীগুলিতে সীমান্ত নির্ধারণ করা খুব জরুরি। বেড়া থাকলে ওই পথ ধরে চোরাকারবারীরা যাতায়াতের সাহস পাবে না।” বিএসএফ সূত্রের খবর, আলোর ব্যবস্থাও করা হবে। সে ক্ষেত্রে কেউ ওই পথে এগোলেই তা বিএসএফ জওয়ানদের নজরে চলে আসবে।
কোচবিহার জেলার অধিকাংশ এলাকা বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ঘেরা। জেলার পাঁচটি মহকুমার মধ্যে চারটির সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের যোগ রয়েছে। জেলার প্রায় ৫৪৯ কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার রয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় কাটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে। ওই এলাকার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি নদী।
বিএসএফের কোচবিহার রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে ৬টি নদী। সিতাইয়ে সিঙ্গিজানি, গীতালদহে ধরলা, বানিয়াদহ, গিরিধারি, তুফানগঞ্জের কালজানি, মেখলিগঞ্জের তিস্তার সঙ্গে নদী পথে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। নদীর কারণে ওই পথ বাদ দিয়ে কাঁটা তার দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে নদীপথে কাঁটাতার নেই। আলোর ব্যবস্থাও নেই। বিএসএফ জওয়ানদেরও কড়াকড়ি নেই। সন্ধ্যার পরে নদীতে নেমে পড়লে পারাপার করা সহজ। তাই চোরাকারবারীরা গরু, কৃষিজ পণ্যের সঙ্গে মানুষও পারাপার করে থাকে।
এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে জানান, চোরাকারবারিদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর যোগাযোগ রয়েছে। তাদের কাছে সীমান্তপথ নখদর্পণে। কখন কী ভাবে কারবার শুরু করতে হবে, সে ব্যাপারে তারাই শেষ কথা বলে। নদী পথকে সব থেকে নিরাপদ ভাবে ওই দুষ্কৃতীরা। ভরা নদীতে গরু ভাসিয়ে দেয়। গরুর লেজ ধরে ভেসে যায় মানুষও।
খরার সময় নদীতে হাঁটু জল থাকে। সে সময় বিএসএফ সক্রিয় থাকে। কিন্তু রাত হলে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। সে সময় টর্চের আলো ভরসা। বিএসএফের ওই আলোকে ফাঁকি দিয়ে অতি সহজেই চলতে থাকে। পারাপার গীতালদহে ধরলা নদী থাকায় প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় কোনও কাঁটাতার নেই। রাতে সেখানে কোনও আলোর ব্যবস্থাও থাকে না। ওই পথ ধরে চোরা কারবার চলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একই অবস্থা অন্য নদীপথগুলির। কোচবিহার জেলা বাংলাদেশ সীমান্ত নাগরিক সমিতির সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “সীমান্তে চোরা কারবার বন্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। চোরাকারবারিদের পাল্লায় পড়ে অনেক মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। নদী পথে বেড়া হলে অনেকটা উপকার হবে।”