পুজোর সন্ধেয় ভ্যালেন্টাইন রং

পার্কের কোণের দিকে একটা ঝাঁকড়া গাছের নীচে বসেছিল কৌশল আর শ্রেষ্ঠা। এক জনের বাড়ি বীরপাড়ায়, আর এক জন শিলিগুড়ির। ফালাকাটা কলেজের ছাত্র কৌশল চক্রবর্তীর সঙ্গে শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্রী শ্রেষ্ঠা রায়ের বছর খানেক আগে একটি অনুষ্ঠানে আলাপ হয়েছিল।

Advertisement

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৭
Share:

নিভৃেত। জলপাইগুড়িতে শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

পার্কের কোণের দিকে একটা ঝাঁকড়া গাছের নীচে বসেছিল কৌশল আর শ্রেষ্ঠা।

Advertisement

এক জনের বাড়ি বীরপাড়ায়, আর এক জন শিলিগুড়ির। ফালাকাটা কলেজের ছাত্র কৌশল চক্রবর্তীর সঙ্গে শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্রী শ্রেষ্ঠা রায়ের বছর খানেক আগে একটি অনুষ্ঠানে আলাপ হয়েছিল। প্রথম দেখাতেই প্রেম। বছর ঘুরেছে। এ বছর ওরা প্রেমের দিন উদযাপন করতে চলে এসেছে জলপাইগুড়ির তিস্তা উদ্যানে। কৌশল-শ্রেষ্ঠা দু’জনেই বলেন, “সরস্বতী পুজোর দিন জলপাইগুড়ির এই উদ্যান এবং পার্কের কথা অনেক শুনেছি। তাই আমরা দিনটা এখানেই কাটালাম। এর পর প্রতি বছরই এখানে আসার ইচ্ছে আছে।”

জলপাইগুড়ি শহরে আজ সরস্বতী পুজো না ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন চলছে, তা বোঝা যাচ্ছিল না। এ বার পর পর দু’টি দিন পড়ায় যেন বসন্ত নেমেছে গোটা শহর জুড়ে। জলপাইগুড়ির তিস্তা উদ্যান, জুবিলি পার্ক এবং পার্ক সংলগ্ন তিস্তা নদীর চর সংলগ্ন এলাকা হলদে শাড়ি আর লাল গোলাপে ছেয়ে যায়। কে ছিল না সেই প্রেমের রাজ্যে? স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শিলিগুড়ির ঠিকাদার, হলদিবাড়ির ডাক্তার, বেলাকোবার মিস্ত্রী, ফালাকাটা, বীরপাড়া, ধূপগুড়ির নানা বয়সের প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে দম্পতিরা।

Advertisement

বেলাকোবায় রাজমিস্ত্রির সঙ্গে সহকারীর কাজ করেন শায়রুল হক। ১৮ বছরের শায়রুলের কাছে সরস্বতী পুজোই ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে। এ দিন আর কাজে যাননি। ঝকঝকে জামাপ্যান্ট পরে প্রেমিকা রবিনা আর তাঁর দুই বান্ধবীকে নিয়ে চলে এসেছেন তিস্তা উদ্যানে। শায়রুল বলেন, “শুনেছি সরস্বতী পুজোর দিন সবাই এখানে আসে। তাই এ বার ওদের নিয়ে চলে আসলাম। সারা দিন গল্প করলাম। এমন দিন তো আর পাওয়া যাবে না।”

জলপাইগুড়ি আনন্দ মডেল হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে ছেলেটি। কদমতলা গার্লস হাইস্কুলের দুই বান্ধবীকে নিয়ে তিস্তা উদ্যানের অন্যপ্রান্তে রাস্তার দিকে ওরা দাঁড়িয়ে। বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলো পড়েছে ওদের মুখে। স্থান আর কালের মাহাত্ম্য ওদের হয়ে কিছু অস্ফুটে যেন কত কথা বলার চেষ্টা করে চলেছে।

হলদিবাড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক উত্তম চক্রবর্তীর পাঁচ বছর হল বিয়ে হয়েছে। প্রেম করেই বিয়ে করেছেন। এ দিন স্ত্রী রিঙ্কু এবং মেয়ে কাজরীকে নিয়ে চলে এসেছেন তিস্তা উদ্যানে। উত্তম বলেন, “এক সময় তো এই দিনটাতে প্রচুর মাতামাতি করতাম। রিঙ্কু আর মেয়েকে নিয়ে দিনটাকে অন্য ভাবে কাটানোর ইচ্ছে নিয়ে এখনে এলাম।’’

শুধু এঁরাই নন জুবিলি পার্ক ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে তিস্তার পারে বালির ওপর বসেছিলেন শিলিগুড়ির ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাবগ্রামের বাসিন্দা মধ্যবয়স্ক পেশায় ঠিকাদার অমল সরকার। তিনি ও তাঁর স্ত্রী রুবি সরকার চলে এসেছেন জলপাইগুড়িতে। কিছু ক্ষণ তিস্তা উদ্যানে কাটিয়ে চলে এসেছেন তিস্তার পারে। তাঁদের এক মেয়ে। তার বিয়ে হয়ে গেছে। অমল সরকার বলেন, “জলপাইগুড়িতে সরস্বতী পুজোর এই দিনটার কথা অনেক শুনেছি। তাই দু’জনে চলে এলাম।”

জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া এলাকার জগন্নাথ কলোনির বাসিন্দা রবি হাজরা পাড়ারই মেয়ে পায়েল সরকারের সঙ্গে পাঁচ বছর হল প্রেম করছেন। আগামী বছর ডিসেম্বরে বিয়ে। রবি এ দিন পায়েলকে মোটরবাইকে বসিয়ে সোজা চলে এসেছেন শহরের জুবিলি পার্কে।

রবি এবং পায়েল বলেন, “বিয়ের পর সংসার। আমরা প্রতি বছর এই দিনটাতে এখানে আসি। এরপরই সংসার। তবে সংসার করলেও এই দিনটাতে আমরা প্রতি বছর এখানে আসবই। এমন দিন বছরে একটাই আসে।”

বাংলা-ইংরেজি প্রেমের দিন মিলেমিশে সন্ধে নামে তিস্তার চরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন