বাম আমলে চাকরি পাওয়া ৭২ জন শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের (এসএসকে) সহায়িকার নিয়োগ বাতিল করল রাজ্য পুর দফতর। এই ঘটনা ঘটেছে তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট পুরসভায়। পুরসভা সূত্রের খবর, নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে গত মার্চ থেকে ৫৪ জন কর্মীর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। চলতি মাসে আরও ১৮ জন সহায়িকাকে কর্মচ্যুত করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ৬০ বছর পার গিয়েছে বলে অভিযোগ।
বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা’র অভিযোগ, “আরএসপি নিয়ন্ত্রিত বিগত বামবোর্ড শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকা নিয়োগে কোনও নিয়মনীতি মানেনি। পুর দফতরের নির্দেশে ওই ৭২ জন সহায়িকার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।” তিনি জানান, শহরের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরকর্মী প্রভাস দত্তের গাফিলতির প্রমাণ মেলায় তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে। ৪০-৬০ বছর বয়সী মাধ্যমিক পাশ মহিলাদের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকা পদে নিয়োগের নির্দেশ ছিল। কিন্তু গত বামবোর্ড ওই নিয়ম লঙ্ঘন করে সহায়িকাদের নিয়োগ করে। ৫৪ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাশই ছিল না।
এ দিন নিয়োগ বাতিলের খবরে পুরসভায় আলোড়ন পড়ে যায়। বালুরঘাট পুরসভার আরএসপির প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস বলেন, “অভিযোগ ঠিক নয়। মাধ্যমিক পাশ কোনও কর্মী পাওয়া না গেলে অষ্টম শ্রেণি পাশ মহিলাকে সহায়িকা পদে নেওয়া যাবে বলে সেই সময় নির্দেশ ছিল। চাকরির বয়সও ছিল ৬৫ বছর। বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে সহায়িকা কর্মী সংগঠন থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে।”
বালুরঘাট শহরে ১১০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। মোট সহায়িকা ছিলেন ২৬৩ জন। এরমধ্যে ৭২ জন কর্মচ্যুত হয়েছেন। অভিযোগ ৪০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে সহায়িকা থাকার কথা। গত সেপ্টেম্বরে পুরসভার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তার আগে দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে পুরবোর্ড আরএসপির দখলে ছিল।
পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল জানান, নিয়ম মত পুর দফতরে প্রতিমাসে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র পিছু মোট পড়ুয়া সংখ্যা, সহায়িকার সংখ্যা, তাদের নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা-সহ বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতে হয়। তা খতিয়ে দেখে ওই দফতর থেকে সহায়িকাদের মাসিক ভাতা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু বাম আমলে বিস্তারিত কোনও তথ্যই পাঠান হত না। শুধু সহায়িকাদের নামের তালিকা পাঠিয়েই ভাতা বরাদ্দ করিয়ে নেওয়া হত। বাম আমলেই সহায়িকার চাকরির বয়স ৬০ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাশের নির্দেশ জারি হয়েছিল।
এসএসকের দায়িত্বে থাকা পুরকর্মী প্রভাসবাবু শো-কজের উত্তরে ভুল স্বীকার করে বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর। তিনি বলেন, “বিগত বছরগুলিতে সহায়িকারদের তালিকা পুর দফতরের ডিরেক্টর অব লোকাল বডিতে পাঠিয়েছিলাম। তাতে এসএসকে কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স-সহ বিস্তারিত তথ্য ছিল না। পরবর্তীতে অনিয়ম ধরে তাঁরা বরাদ্দ আটকে দিলে বিষয়টি বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। আমার ভুল হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে স্বীকার করে নিয়েছি।” রঘুনাথপুর এলাকার এসএসকে সহায়িকা নিলীমা সিংহরায় বলেন, “কাজ গেলে সংসার কী ভাবে চলবে ভেবে পাচ্ছি না।”