শিলিগুড়ির বাগরাকোট লেভেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ওই লেভেল ক্রসিং পরিবদর্শন করে এ কথা জানান। মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রেলের একজন বাস্তুকার এবং এসজেডিএর সিইও এবং বাস্তুকাররা। এই উড়ালপুল তৈরি করতে সাড়ে ১০ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। সাড়ে ৭ মিটার চওড়া এবং সাড়ে চারশো মিটার লম্বা এই প্রস্তাবিত উড়ালপুলের একটি শাখা থাকবে এনটিএস মোড়ের দিকে মজদুর কলোনি এলাকায়। অপর দিকে দুটি শাখা থাকবে জগদীশ বিদ্যাপীঠ এবং বিশেষ সংশোধনাগারের দিকে।
তবে উড়ালপুল তৈরির এই সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ওই পথে রিকশা, বাইক বেশি চলাচল করে এবং বাসিন্দারা হেঁটে যাতায়াত করেন বলে এখানে উড়ালপুল তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী শিবির। তাদের প্রশ্ন, উড়ালপুল দিয়ে হালকা যান চলাচল করতে পারবে। কিন্তু রিকশায় বা হেঁটে উড়ালপুলের নিচের রাস্তা দিয়েই যেতে হবে বাসিন্দাদের। তাতে সমস্যা থেকেই যাবে। তা ছাড়া উড়ালপুলের নিচে রেলের তরফে লেভেল ক্রসিং সাধারণত রাখা হয় না। তাই ওই পথ বন্ধ হয়েও যেতে পারে। তাতে আরও বেশি সমস্যা তৈরি হবে বলেই আশঙ্কা করছে তারা। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিরোধীরা। তা ছাড়া উড়ালপুল তৈরি করতে হলে রাস্তার ধারে থাকা ব্যবসায়ী, বাসিন্দাদের অনেককে জায়গা ছাড়তে হবে। তা নিয়েও জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “বাসিন্দাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। এই লেভেল ক্রসিং অবৈধ। রেল যে কোনও সময় বন্ধ করে দিতে পারে। তা ছাড়া প্রহরাবিহীন এই লেভেল ক্রসিং বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বর্তমানে বড় ট্রেন বা মালগাড়ি লেভেল ক্রসিংয়ের উপর দাঁড়ালে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। সেই কারণে বাসিন্দাদের স্বার্থেই উড়ালপুল তৈরির কথা ভাবা হয়েছে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, বাম জমানায় এলাকার মন্ত্রী তথা যিনি এসজেডিএ’র দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা আন্ডারপাস তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার ফুলেশ্বরী নদী খাত যে উচ্চতায় রয়েছে এই অংশ তার চেয়ে নিচে। সে কারণে আন্ডারপাস তৈরি হলে জল জমবে। তা ছাড়া ওই এলাকায় হাইড্র্যান্ট রয়েছে। তা বন্ধ করে দিতে হলে সমস্যা হবে।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্যর অভিযোগ, “বাগরাকোট লেভেল ক্রসিংয়ে উড়ালপুল করা অযৌক্তিক। তাতে সমস্যা মিটবে না। আমরা দায়িত্বে থাকার সময় সব দিক খতিয়ে দেখে আন্ডারপাস করার কথা ভেবেছিলাম। তাতে নিকাশির যে সমস্যা হবে তা মেটানোর জন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছিল। এ ধরনের উড়ালপুল তৈরির আগে বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া উচিত।”
গৌতমবাবুর অভিযোগ, অশোকবাবু দায়িত্বে থাকার সময় মহাবীরস্থানে ভুল নকশা করে উড়ালপুল তৈরি করেছিলেন। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা দিয়েছিলেন ওই উড়ালপুল নির্মাণের জন্য। উড়ালপুল তৈরির পরেও নিচে রেলগেট যাতে খোলা থাকে সে জন্য তিনি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শিলিগুড়ি থানার সামনে দিয়ে উড়ালপুলের শাখা করা হয়েছে সুচিন্তিত কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই। তাতে এলাকার ব্যবসায়ী, বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ওই অংশ ভেঙে ফেলা হবে। রাইটস’কে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে সঠিক ভাবে তা তৈরি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ওই কাজে সময় লাগবে। অশোকবাবুর দাবি, ওই কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলছেন বাগরাকোটে উড়ালপুল তৈরির আগে বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া উচিত। সুভাষপল্লি বাগরাকোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গুরুদেব সাহা,দ্বিজেন সাহারা জানান, তাঁদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে কোনও রকম আলোচনা এখনও হয়নি। ঠিক কী হবে তা নিয়ে তাঁরাও উদ্বেগে রয়েছেন।
এসজেডিএ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এটি অবৈধ লেভেল ক্রসিং হওয়ায় উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কোনও আর্থিক সহযোগিতা করবে না। তবে উড়ালপুলের নকশা করে দিচ্ছে তারা। কাজ শুরুর আগে রাইটস’কে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ২৯ অক্টোবর রাইটসের অন্যতম জেনারেল ম্যানেজার তরুণ সেনগুপ্ত শিলিগুড়িতে আসছেন। রাইটসকে দিয়ে সমীক্ষার পরেই কাজ শুরু করতে টেন্ডার ডাকা হবে।