পুরসভায় অযোগ্য নিয়োগ, অভিযোগ

কাজ জানেন না, কম্পিউটার নিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান পর্যন্ত নেই। অথচ গত বছর জানুয়ারি মাসে পরীক্ষার মাধ্যমে এমনই ২২ ডাটা অপারেটর শিলিগুড়ি পুরসভায় নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

কাজ জানেন না, কম্পিউটার নিয়ে প্রাথমিক জ্ঞান পর্যন্ত নেই। অথচ গত বছর জানুয়ারি মাসে পরীক্ষার মাধ্যমে এমনই ২২ ডাটা অপারেটর শিলিগুড়ি পুরসভায় নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরসভার তরফেই এখন তাঁদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সম্প্রতি পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো বুধবার থেকে প্রশিক্ষণ শুরু-ও হয়েছে। ডাটা অপারেটরের কাজে যেখানে কম্পিউটার জানা বাধ্যতামূলক সেখানে কী করে কাজ না জানলেও তাঁদের সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী বামেরা থেকে কংগ্রেস, তৃণমূলের কাউন্সিলররা তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যদিও কংগ্রেস তৃণমূল জোটের বোর্ড থাকার সময়ে-ই ওই কর্মীদের নিয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ। বিরোধীরা স্বজনপোষণের অভিযোগও তুলেছেন। সেই কারণে অনেক যোগ্য ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও বিরোধীরা সরব হয়েছেন।

পুরসভার প্রতিটি বরো অফিসে ২ জন, পূর্ত বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ, হিসাবরক্ষকের বিভাগ, শিক্ষা বিভাগের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের ৬ মাসের চুক্তির ভিত্তিতে কাজে নিয়োগ করা হয়। মাসে ৬ হাজার টাকা বেতন পান। অথচ হকয়েক জন বাদে কেউই সঠিক ভাবে কাজ জানেন না বলে অভিযোগ। সমস্যা মেটাতে তাই নতুন করে তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পরেও যাঁরা কাজ করতে পারবেন না তাঁদের ছাটাই করার চিন্তা করা হয়েছে বলে পুরসভার এক সূত্র জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “ভাল ভাবে যাতে তাঁরা কাজ করতে পারেন সে জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ঠিক করে শিখছেন কিনা দেখা হবে।”

Advertisement

প্রাক্তন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তর দাবি, পদ্ধতি মেনে পরীক্ষা নিয়েই চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। লিখিত এবং কম্পিউটার চালানোর উপরেও পরীক্ষা হয়। সেই মতো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সুযোগ পেয়েছেন ওই প্রার্থীরা। গঙ্গোত্রী দেবী বলেন, “যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা কাজ জানেন না তা নয়। কাজ জানেন বলেই সুযোগ পেয়েছেন। তবে আরও ভাল কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ পেলে তারা উপকৃত হবেন।” তত্‌কালীন ডেপুটি মেয়র, তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মা জানান, প্রশিক্ষণ সব সময়ই দরকার হয়। তাতে কাজের মান ভাল হবে। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “কাজ না জানলেও কী ভাবে তাঁদের নিয়োগ করা হল তা স্পষ্ট নয়। শুধু ডাটা অপারেটর নন, অন্য অনেক ক্ষেত্রেও অবৈধ নিয়োগ করা হয়েছে।” বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বলেন, “অবৈধ নিয়োগ। দলের কর্মী সমর্থকদের কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন শাসক পক্ষ। তদন্ত করা উচিত।”

পুরসভার ডাটা অপারেটর পদে চুক্তি-ভিত্তিক চাকরির জন্য ৭৮ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ২২ জন সুযোগ পান। ডাটা অপাটরদের ৫টি বরোতে ২ জন করে নিয়োগ করা হয়। পুরসভার এস্টাব্লিসমেন্ট, সাধারণ বিভাগ, পরিবহণ, ট্রেড লাইসেন্স, বিল্ডিং বিভাগ, ইউপিই বিভাগ, হিসাব বিভাগের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাকিদের নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে হিসাব বিভাগে, সাধারণ বিভাগে যারা কাজ করছেন তারা ছাড়া অধিকাংশ কর্মীই কাজের বিষয়টি সঠিক ভাবে করতে পারছেন না বলে অভিযোগ। ৬ মাস করে চুক্তিতে থাকলেও সময় সীমা পার হলে ৬ মাস করে তা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেস এবং তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেকেই জানান, কাজ জানে কি না তা দেখেই তো লোক নিয়োগ করা উচিত। পরীক্ষা হলেও কী ভাবে কাজ না-জানা লোক নিয়োগপত্র পেল তা বোধগম্য হচ্ছে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement