আগুনে পুড়ে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু

পুলিশি তদন্তে অসন্তোষ বাড়ছে

চম্পাসারিতে আগুন লেগে এক পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি তদন্তে এলাকায় অসন্তোষ বাড়ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই সংগঠনের প্রশ্ন, ঘটনার পরে এক সপ্তাহ গড়াতে চললেও বাজেয়াপ্ত গ্যাস সিলিন্ডারের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হয়নি কেন? শিলিগুড়ির বৃক্ষ-পশু-মানুষ বন্ধু সমিতি নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করা হয়েছে, আগুন লাগার ঘটনার রাতেই মৃতদের আত্মীয়দের তরফে অভিযোগ দায়ের করার ৬ দিন পরেও পুলিশের তরফে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

চম্পাসারিতে আগুন লেগে এক পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি তদন্তে এলাকায় অসন্তোষ বাড়ছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই সংগঠনের প্রশ্ন, ঘটনার পরে এক সপ্তাহ গড়াতে চললেও বাজেয়াপ্ত গ্যাস সিলিন্ডারের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হয়নি কেন? শিলিগুড়ির বৃক্ষ-পশু-মানুষ বন্ধু সমিতি নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করা হয়েছে, আগুন লাগার ঘটনার রাতেই মৃতদের আত্মীয়দের তরফে অভিযোগ দায়ের করার ৬ দিন পরেও পুলিশের তরফে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের হয়নি। অভিযোগের প্রতিলিপিতে জেনারেল ডায়েরি নম্বর দেওয়া হয়নি।

Advertisement

পুলিশের তরফে তদন্তে কেন এমন ঢিলেঢালা মনোভাব নেওয়া হচ্ছে সে প্রশ্নও তুলেছেন চম্পাসারি এলাকার বাসিন্দারা। শিলিগুড়ির প্রধাননগরের একটি সংস্থার সরবরাহ করা সিলিন্ডার থেকেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আইনি পরামর্শদাতা অলকেশ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, “অনেক সময়ে বেশি লাভের জন্য মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া পুরোনো মরচে পড়া সিলিন্ডার সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাতে এই ধরণের গ্যাস লিক করার মত ঘটনা ঘটতে পারে। সিলিন্ডারটির ফরেনসিক তদন্ত হোক। কারণ পুলিশি তদন্ত কিছুই এগোয়নি। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে এতদিন কেটে গেলেও, পুলিশি তদন্তে ফল মিলছে না।” যথাযথ তদন্ত এবং পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে তারা মামলা করবেন বলেও অলকেশবাবু জানিয়েছেন। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন বলেন, “অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা তো রুজু হয়েছে। সেই তদন্তেও অনেক কিছু বেরিয়ে আসতে পারে। গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও গাফিলতির ঘটনা ছিল কি না তাও তদন্ত করে দেখা হবে। এ বিষয়ে এখনও দমকলের থেকে কিছু জানানো হয়নি। দমকল থেকে জানালে তদন্তে সুবিধে হত।”

দমকল কর্তৃপক্ষ কিন্তু অন্য কথা বলছেন। গ্যাস সিলিন্ডারের কারণেই আগুন লাগার কথা উল্লেখ করা হয়েছে দমকলের রিপোর্টেও। ঘটনাটি নিয়ে দমকলের রিপোর্টে লেখা হয়েছে, গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এ দিন দার্জিলিং জেলা দমকল দফতরের বিভাগীয় আধিকারিক দীপক কুমার নন্দী বলেন, “বাড়ির সংযোগের ক্ষেত্রে দমকলের তরফে নির্দিষ্ট নালিশ করা হয় না। আমাদের রিপোর্টে বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। সে রিপোর্ট পুলিশ চেয়ে নিলেই জানতে পারবে।”

Advertisement

গত ২ মে রাতে চম্পাসারিতে আগুন লেগে উত্তম সাহা, তাঁর স্ত্রী আদরিদেবী এবং তাঁদের ১১ বছরের মেয়ে বন্দনার মৃত্যু হয়। ঘটনার রাতেই মৃতের পরিবারের তরফে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সে অভিযোগে, উল্লেখ করা হয়, সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হতে থাকায়, কুপি নিয়ে সামনে যেতেই আগুন লেগে যায়। সিলিন্ডার থেকে গ্যাস ‘লিক’ করার ঘটনা নিয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হলেও, পুলিশ কেন সেই মতো নির্দিষ্ট ধারায় সিলিন্ডার সরবারহরে গাফিলতির মামলা দায়ের করেনি কেন সে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের পরিবারের আত্মীয়রা। অভিযোগের প্রতিলিপিতেও মামলার নম্বর বা ধারা উল্লেখ না করে কেন ‘রিসিভড’ লিখে সই করে দেওয়া হয়েছে। আগুনের ঘটনার পরে সিলিন্ডারটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করার পরে কয়েকদিন কেটে গেলেও সেটির পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ।

প্রধাননগরের গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার কর্ণধার বাপি দাস ফের দাবি করেছেন, “যথাযথ ভাবেই পরীক্ষা করে গ্যাস সরবারহ করা হয়। প্রতি ক্ষেত্রেই ওজন করে সিলিন্ডার পরীক্ষা করে বিলি হয়।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার চেষ্টা হচ্ছে। যে ব্যক্তির নামে গ্যাস সংযোগ সেই ঠিকানায় গ্যাস না গিয়ে অন্যত্র কেন নিয়ে যাওয়া হল তা নিয়ে আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।” দম্পতির ছেলে ওই পরিবারের একমাত্র সদস্য বাবু সাহা বলেন, “ঘটনার সঠিক তদন্ত এখনও হচ্ছে না। আমরা দোষীর শাস্তি চাই। ক্ষতিপূরণের দাবিও করা হবে।”

পুলিশি অভিযানে উদ্ধার ৩৬ সিলিন্ডার
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি

একটি বাড়িতে হানা দিয়ে ৩৬ টি বাণিজ্যিক ও ঘরোয়া সিলিন্ডার উদ্ধার করল শিলিগুড়ি পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ি শহরের ভক্তিনগর থানার বিকাশনগর এলাকায়। বেআইনি ভাবে সিলিন্ডার মজুত ও বিক্রির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ধৃতদের নাম প্রিন্স কুমার ও গৌরব কুমার। অভিযুক্ত প্রিন্সই বাড়িটির মালিক বলে পুলিশ জানিয়েছে। অপর অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার পালিয়ে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ভক্তিনগর থানার পুলিশ এই দিন অভিযান চালায়। কী ভাবে কোথা থেকে এত সিলিন্ডার মজুত হচ্ছিল তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন