মালকানি হাট সংলগ্ন এলাকায় দলীয় সমর্থক ব্যবসায়ী স্বপন সরকার (৪৫) খুনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের সময়সীমা পুলিশকে বেঁধে দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। মঙ্গলবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়ে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেন তাঁরা। সেই সঙ্গে জানান, ওই সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত ছয় দুষ্কৃতী গ্রেফতার না হলে আন্দোলনে নামবেন।
এ দিকে সোমবার বিকেল নাগাদ মেডিক্যাল রিপোর্ট হাতে পেয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ কর্তারা দাবি করেন, হাটে ঝামেলার পরে ব্যবসায়ী নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন। ওই সময় মোটরবাইকের ধাক্কায় জখম হন তিনি। ঘটনাটি দেখেছেন মৃতের প্রতিবেশী দেখেছেন বলেও দাবি পুলিশের। তিন যুবকের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে বলেও দাবি করেন পুলিশ কর্তারা। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়ীর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ দুর্ঘটনার তত্ত্বকে খাড়া করে ঘটনাকে লঘু করার চেষ্টা করছে। পুলিশের দাবি সত্যি হলে তাঁদের সন্দেহ, “হয়তো বেদম মারধরের পরেও বেঁচে আছে টের পেয়ে দুষ্কৃতীরা বুকের উপরে বাইক তুলে দিয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।”
জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “মেডিক্যাল রিপোর্টে কিছু তথ্য মিলেছে। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। তবে মৃতের পরিবারের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছি না। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা চলছে।”
জুয়ার আসর বসানোর প্রতিবাদ করায় গত শুক্রবার রাতে মালকানি হাট সংলগ্ন এলাকায় একদল দুষ্কৃতী স্বপনবাবুকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। রবিবার পরিবারের তরফে ছয়জন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় ক্রমশ ক্ষোভের পারদ চড়ছে। এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়ে বিজেপির সদর মণ্ডল সভাপতি তপন রায় বলেন, “পুলিশকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে ওই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে আন্দোলন শুরু হবে।”
এ দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে মালকানি হাটে মৃত ব্যবসায়ীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিজেপি নেতৃত্ব সর্বদলীয় ভাবে ঘটনার প্রতিবাদের আবেদন জানান। সভার পরে দলের জেলা সভাপতি দীপেন প্রামানিক বলেন, “স্বপনবাবুর মেডিক্যাল রিপোর্টের কথা শুনেছি। কিন্তু এটা সড়ক দুর্ঘটনা নয়। এখন আমাদের সন্দেহ হচ্ছে মারধরের পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুষ্কৃতীরা স্বপনবাবুর বুকে বাইক উঠিয়ে দিতে পারে। আমরা চাই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ঘটনা স্পষ্ট করুক।”
মেডিক্যাল রিপোর্টের কথা শুনে মৃত ব্যবসায়ীর ছেলে কৃষ্ণ সরকার ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ খুনের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “বাবা ওই বিষয়ে একটিও কথা বলেননি। তিনি ছয়জনের নাম জানিয়ে মারা যান। মেডিক্যাল রিপোর্টে সত্যি তেমন কথার উল্লেখ থাকলে বলব দুষ্কৃতীরা পিটিয়ে আধমরা করে বুকে মোটরবাইক তুলে বাবাকে খুন করেছে।” ব্যবসায়ীর স্ত্রী বাসন্তী দেবী বলেন, “আমি অপরাধীদের শাস্তি চাই।”